মনোচিকিৎসক ও চিকিৎসা সমাজকর্মীর পার্থক্য কী?
মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় মনোচিকিৎসক (সাইকিয়াট্রিস্ট) ও চিকিৎসা সমাজকর্মী (ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কার) দুজনেরই ভূমিকা রয়েছে। তবে সেটি সত্ত্বেও দুজের কর্মপরিধির জায়গাটা একটু আলাদা।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৪৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ড. তানিয়া রহমান। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সোশ্যাল ওয়ার্ক প্রোগ্রামের পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : সাইকিয়াট্রিস্টদের থেকে ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কারদের কীভাবে আলাদা করব?
উত্তর : অবশ্যই সাইকিয়াট্রিস্ট এবং ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কারদের অনেক পার্থক্য আছে। কারণ, সাইকিয়াট্রিস্টরা হচ্ছেন চিকিৎসক। ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কাররা চিকিৎসক নন। যেকোনো মানুষ যখন ক্রাইসিসে পড়ছে, মানসিক চাপে পড়ছে, ট্রমাটিক হচ্ছে, তাদের ভেতর নিরাপত্তাহীনতা, চাপ এই জায়গাগুলোতে তারা কোথায় আসলে যাবে। সেটা বোঝা যে তাদের কি সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যেতে হবে, কাউন্সেলিং লাগবে, বা তাদের সেই ক্ষেত্রে কী সাহায্যটা দরকার, প্রাথমিক সাহায্যটা কি দরকার, সেই অ্যাসাসমেন্টের জন্য ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
আমাদের একটি ধারণা, মানসিকভাবে বা শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ার পরে চিকিৎসকের কাছে যাব, যেটা খুব ভুল ধারণা। আমাদের আসলে অসুস্থ হওয়ার আগে প্রতিরোধটা অনেক বেশি দরকার। সেটিই বেশি জরুরি। অসুস্থ হয়ে গেলে কিছু ক্ষতি করার পর, আমরা এর উত্তরণ ঘটানোর চাইতে বা চিকিৎসা নেওয়ার চাইতে, আমরা যাতে অসুস্থ না হই বা আমরা অল্পতেই যেন, মোকাবিলা করতে পারি, সে কাজগুলো করার ক্ষেত্রে চিকিৎসা সমাজকর্মী বা ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কাররা অনেক বড় ভূমিকা রাখে। কারণ এখানে আমরা দেখেছি, সাইকোএডুকেশন বা সাইকোথেরাপি, কমিউনিটি এডুকেশন এই কাজগুলো আসলে সোশ্যাল ওয়ার্কারদের কাজ। এখানে ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কাররা মেন্টাল হেলথ বিষয়টি, ট্রমার বিষয়গুলো, চাপের বিষয়গুলো মোকাবিলা করার জন্য এ বিষয়ে পেশাদার বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তাদের জন্য এই কাজ করা অনেক সুবিধার।
প্রশ্ন : সাইকোথেরাপি বা সাইকোএডুকেশন—কীভাবে এই বিষয়গুলো আপনারা দিয়ে থাকেন?
উত্তর : সাইকোএডুকেশন বলতে আমরা যে জিনিসগুলো বোঝাতে চেয়েছি, কোনো মানুষের যে মানসিক সমস্যা হয় বা কী হতে পারে, এ সম্পর্কে যে ধারণা দেওয়া এবং এ সম্পর্কে তাদের আগে থেকে সচেতনতা দেওয়ার জন্য সাইকোএডুকেশন দেওয়া হয়। এডুকেশন এই অর্থে বলা হয়, গ্রামে অনেক সময় দেখেছি আমরা সবুজ ছাতা, সূর্যের হাসি, এই জিনিসগুলো কেন? এখানেও সাইকোএডুকেশন আছে।
একজন রোগীর যদি সিজার করতে হয়, সে মুহূর্তে রোগীর ক্রাইসিস তৈরি হচ্ছে, এক ধরনের ট্রমা হচ্ছে, তখন সাইকোএডুকেশন উপকারী হতে পারে। স্বল্পকালীন বিষয়গুলোকে ব্যবস্থাপনা করার জন্য শিক্ষাগুলো দিতে হয়। আমাদের জানা উচিত, কোন ধরনের সমস্যাগুলোতে কোন সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন হলো, এ জন্য আমাদের কী প্রস্তুতি আছে? প্রস্তুতির জন্য হচ্ছে সাইকোএডুকেশন। ব্যবস্থাপনা কীভাবে করব? এখন দুর্যোগ হতেই পারে। তার আগে যদি আমাদের কিছু সমস্যা হয়, তিন নম্বর বিপদ সংকেত বা মহাবিপদ সংকেত। তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের কোন পর্যায়ে আমরা বিপদে আছি, সে সম্পর্কে যে সতর্কবাণী দেওয়া বা সেটাকে ব্যবস্থাপনা করার জন্যই ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কাররা কাজ করে।