প্রসব পরবর্তী ডায়েট
শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর একজন মায়ের প্রধান লক্ষ্য থাকে শিশুটিকে সঠিক মাত্রায় বুকের দুধ খাওয়ানো। কেননা, জন্মের পর শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টির পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে মায়ের বুকের দুধের ওপর। আর একজন মা তখনই পর্যাপ্ত পরিমাণ বুকের দুধ দিতে পারবেন, যখন তিনি তাঁর যথাযথ পুষ্টির চাহিদা বজায় রাখতে পারবেন। তবে অনেক মাকে অজ্ঞতার কারণে নানা রকম সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। পারিবারিক কিছু কুসংস্কার, পুষ্টিজ্ঞানের অভাব ও ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে অনেক ল্যাকটেটিং (স্তনদান করছেন এমন মা) মাকেই অনেক সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। মায়ের স্বাস্থ্য ঠিক রেখে ভূমিষ্ঠ শিশুকে যথাযথ দুধপান করানোর লক্ষ্যে মাকে সঠিক পুষ্টিচাহিদা পূরণ করতে হয়।
প্রথমে বলব তরল খাবারের কথা, যা দুধ তৈরির জন্য অনেক বেশি জরুরি। একজন মা সাধারণ অবস্থায় যদি দুই লিটার পানি পান করেন, তবে যে মায়েরা বুকের দুধ খাওয়ান তাঁদের অবশ্যই তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার পানি পান করতে হবে, যা দুধের গতি বাড়াতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া ল্যাকটেটিং মাকে তাঁর ক্যালরির চাহিদা যথাযথভাবে নির্ধারণ করতে হয়। অনেক মাকেই দেখা যায়, শিশুর প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করে ফেলেন, যা মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর হয়। কেননা, অতিরিক্ত ক্যালরি থেকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজনাধিক্য এবং হৃদরোগের মতো ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই মাকে যথাযথভাবে ক্যালরির চাহিদা পূরণ করতে হবে এবং সে জন্য বাড়তি ক্যালরিযুক্ত ফল, শাকসবজি ও প্রোটিনজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
ল্যাকটেটিং মায়ের জন্য রোজ এক গ্লাস দুধ খুব প্রয়োজনীয়। তার সঙ্গে অন্যান্য দুগ্ধজাতীয় খাবার খেতে হবে, যেমন : ছানা, টক দই, ঘোল, মাঠা ইত্যাদি। সে সঙ্গে প্রতি বেলার খাবারে মাছ, মুরগির মাংস ও একটি ডিম খেলে মায়ের প্রোটিনের চাহিদা যথাযথভাবে বজায় থাকবে।
বাংলাদেশে অনেক মাকেই দেখা যায় দুধের জন্য, অর্থাৎ শিশু যাতে বেশি দুধ পায়, সে জন্য এ সময় লাউ খান। অথচ যথাযথ ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে মাকে বিভিন্ন রকম রঙিন সবজি খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে সেচুরেটেট ফ্যাটজাতীয় খাবার মাকে এড়িয়ে চলতে হবে, যেমন : মাখন, ভাজাপোড়া খাবার ইত্যাদি। তবে ভালো চর্বিযুক্ত খাবার খেতে হবে, যেমন : বাদাম, জলপাইয়ের তেল, ডিমের কুসুম, চর্বিযুক্ত সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
শিশুকে সঠিকভাবে দুধ খাওয়ানোর লক্ষ্যে কোনোভাবেই যেন মায়ের ওজন বাড়িয়ে না দেয়, এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। কেননা, এটি মায়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই মাকে সঠিক ওজন বজায় রাখার লক্ষ্যে অল্প খাবার বারবার খেতে হবে। পর্যাপ্ত পানি, শাকসবজি খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। খাবারের সময় ডায়েট মেনে চলতে হবে। বাইরের কেনা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত চিনিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। প্রথম ছয় মাস শিশু যতবার দুধ খেতে চাইবে, সঠিক নিয়ম মেনে দুধ খাওয়ালে শিশু সুস্থ থাকবে।
লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল।