হেড-নেক ক্যানসারের লক্ষণ কী?
হেড-নেক ক্যানসার একটি জটিল সমস্যা। এ ক্যানসারের কারণ ও লক্ষণের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৫০৪তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মো. নাজমুল ইসলামের পরামর্শ। বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন ও এইচএমডি বিভাগের লাইন ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : আজ বিশ্ব হেড-নেক ক্যানসার দিবস। হেড-নেক ক্যানসারের এবারের দিবসে কিসের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে?
উত্তর : ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব হেড-নেক অনকোলজি সোসাইটি সারা পৃথিবীতেই কিন্তু হেড- নেক অনকোলজি নিয়ে কাজ করে। বাংলাদেশে যারা হেড-নেক অনকোলজিস্ট রয়েছেন, সার্জন রয়েছেন, যারা ক্যানসার বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, সবাই মিলে কিন্তু অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে উদযাপন করা হয়। কয়েক বছর ধরেই এটি হচ্ছে এবং প্রতি বছর ধরে এ বছরও যে জায়গাটাতে জোর দেওয়া হচ্ছে, সেটি হলো প্রতিরোধ। মানুষকে সচেতন করে তোলা। কারণ, শুরুতেই যদি আমরা সতর্ক হই, ক্যানসার যদি খুব দ্রুত নির্ণয় করা যায়, তাহলে দেখা যায়, তাদের পাঁচ বছরের যে সার্ভাইভাল সেটি অনেক বেশি হয়। অনেক বেশি দিন তাদের কর্মক্ষম রাখা যায়। অন্য দিকে দেরিতে যে ক্যানসারগুলো হয়, সে রোগগুলো খুব কমে আসে। কারণ, ক্যানসার যখন হয়, কোনো ব্যক্তি বা মানুষের ক্যানসার হয় না। তার পরিবার, যে সমাজে তিনি বাস করেন, সে সমাজের অন্যান্য লোকজন, যে কাজের জায়গাটায় তিনি কাজ করেন, সে কাজের জায়গাটা, পুরোপুরি দেশের অর্থনীতি বা সব কিছুর ওপর এর প্রভাব পড়ে। কাজেই আমরা গোঁড়াতেই যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারি, তাহলে কিন্তু আমাদের প্রতিকারটা খুব সহজ হয়ে যায়। সেটি কিন্তু আমাদের প্রত্যেকটি রোগের ক্ষেত্রেও কাম্য।
প্রশ্ন : হেড-নেক ক্যানসার শরীরের কোন কোন জায়গার ক্যানসার?
উত্তর : হেড-নেক, তবে আমরা যদি আরো বিস্তারিত বলি, তাহলে নাক, নাক গহ্বর, সাইনাস, ঠোঁট মুখগহ্বর, গলার ভেতরে ল্যারিংস, শ্বাসযন্ত্র, লালাগ্রন্থি- এ সব জায়গা ধরেই কিন্তু হলো হেড-নেক ক্যানসার। তবে হেড-নেক ক্যানসার হলো একটি বড় হেডিং। এর সঙ্গে অনেক ভাগ বা বিভাগ রয়েছে।
এটি কিন্তু মানুষ খুবই অবহেলা করে। শুরুতেই মানুষ চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। এবং তখন যা হয়, দেরিতে রোগ নির্ণয় হয় এবং শেষ দিকে ভালো কিছু হওয়ার থাকে না।
প্রশ্ন : হেড-নেক ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিগুলো কী?
উত্তর : যেগুলো অন্যান্য জায়গাতেও রয়েছে, যেমন ধূমপান, মদ্যপান, মুখ গহ্বরের স্বাস্থ্য যদি খারাপ হয়, এরপর পান, জর্দা, সাদা পাতা, চুন, টোব্যাকো থেকে যেসব পণ্য তৈরি হয়, গুল, খৈনি- এগুলো থেকে হয়। দেখা যায়, যারা ধূমপান করেন, তাদের মধ্যে যদি আটজন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। আবার ধূমপান না করলেও কিন্তু বিপদ রয়েছে। প্যাসিভ স্মোকিং থেকে তারাও আক্রান্ত হয়।
এ ছাড়া এখন যেটি জানা যাচ্ছে যে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস। সারভাইক্যাল ক্যানসার নিয়ে কাজ হয়েছে। এখানে ফ্যারিংসে, নেজোফ্যারিংসে বিভিন্ন বিষয় আসছে। এ জায়গাটা নিয়েও কিন্তু আমাদের কাজ করার, কথা বলার অনেক সুযোগ রয়েছে। এ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস দিয়ে কিন্তু ভ্যাকসিন দিয়ে প্রতিরোধ করা যায়।
প্রশ্ন : এ ভাইরাস যখন আক্রমণ করে তখন কী ধরনের প্রতিরোধ আসে?
উত্তর : আমরা এ বছর যেটি গুরুত্ব দিচ্ছি সেটি হলো প্রতিরোধ। এ ক্ষেত্রে কিন্তু মেয়েদের জন্য ভ্যাকসিনেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সঙ্গে যখন ক্যানসার হবে, ছেলে বা মেয়ে দেখে শুনে তো হবে না। কাজেই যদি ইমুনাইজেশন প্রোগ্রামের সঙ্গে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসকেও অন্তর্ভুক্ত করা যায়, ছোট বয়সে দিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে এ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের জন্য যেমন সারভাইক্যাল ক্যানসার হবে না, অন্যদিকে ফ্যারিংস, নেজোফ্যারিংসের ক্যানসারও কিন্তু ফিরিয়ে আনা গেল। তাতেও কিন্তু চাপ কমে আসে।
এত বড় কাজ তো আসলে সরকারিভাবেই করতে হবে। সরকার তো হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের প্রতিষেধকটা এখন ভ্যাকসিনেশন প্রোগরামে নিয়ে এসেছে।
কাজেই জনসচেতনতার এ জায়গা থেকে আমরা চাইব এ বিষয়টা আসবে, আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে হিউম্যানপ্যাপিলোমা ভাইরাসের ভ্যাকসিনটাও আমাদের ইপিআই প্রোগ্রামে যোগ হবে।
প্রশ্ন : কোন কোন লক্ষণ শুরুতে প্রকাশ পায়?
উত্তর : যেমন ধরুন, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, ঠাণ্ডা লেগেছে, ভালো হচ্ছে না, রক্তক্ষরণ হচ্ছে নাক থেকে, গলার আওয়াজ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। ঘাড়ে, গলায়, কানের আশপাশে চাকা হয়ে গেছে, সেই চাকাটি হয়তো সারছে না। ক্রমাগত আকার- আকৃতি বড় হচ্ছে, গালে, জিভে মুখ গহ্বরে কোথাও কোনো আলসার বা ক্ষত হয়েছে, সাধারণ চিকিৎসায় ভালো হয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু অনেকদিন ধরে সেটি রয়েছে ভালো হচ্ছে না। এই রকম কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা যেটি সচরাচর থাকে না, তেমন কিছু হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
প্রশ্ন : এ সময় আপনারা কী করেন?
উত্তর : প্রথমত, আমরা রোগীর কাছ থেকে ইতিহাস নিই। কতদিন হয়েছে, কখন থেকে উনি খেয়াল করলেন, আকার –আকৃতি বাড়ছে বা একই রকম হচ্ছে, ব্যথাবেদনা রয়েছে, এরপর ফিজিক্যাল পরীক্ষা করতে হয়। বিশেষ করে নাক কান গলার সম্পূর্ণ এলাকাটাই ভালো করে দেখতে হয়। দেখার পর সন্দেহজনক জায়গাগুলোতে যদি আরো কিছু দেখবার থাকে, সিটি স্ক্যান করার সুযোগ রয়েছে, নাকের রোগীদের বেলায়, লোকাল এনেসথেসিয়া দিয়ে ন্যাজো অ্যান্ডোস্কোপি করার সুযোগ রয়েছে। এভাবে করে একেবারেই রোগের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া। যেখানে বায়োপসি করতে হয়, বায়োপসি করার সুযোগ রয়েছে।
এরপর আপনি বলতে পারবেন কোন পর্যায়ে রয়েছে, তার ভবিষ্যৎ কেমন। খুব মজার বিষয় হলো, আপনি যদি খুব প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করতে পারেন, ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে পাঁচ বছর সারভাইভাল রেট থাকে। এ সময়টা অনেক বেশি পাওয়া যায়।