বিশ্ব অ্যাজমা দিবস : অ্যাজমা নিয়ে ভীতি?
আজ বিশ্ব অ্যাজমা দিবস। অ্যাজমা নিয়ে অনেকের ভেতরই একটি ভীতি কাজ করে। তবে সঠিক চিকিৎসা নিলে অ্যাজমা রোগও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
এসব বিষয় নিয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৪৩০তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. বশীর আহমেদ। বর্তমানে তিনি জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : এবারের অ্যাজমা দিবসের প্রতিপাদ্য কী?
উত্তর : বিশ্ব অ্যাজমা দিবস প্রতিবছরই উদযাপিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মে মাসের প্রথম মঙ্গলবারকে বিশ্ব অ্যাজমা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। সারা বিশ্বে এটি পালিত হয়। বাংলাদেশেও অ্যাজমা দিবস পালিত হচ্ছে। অ্যাজমা অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ প্রতিবছর এই দিনটি পালন করে থাকে। এবারও পালন করা হচ্ছে।
আসলে সাধারণ মানুষের মধ্যে অ্যাজমা নিয়ে একটি ভীতি কাজ করে। রোগীরা যখন আমাদের কাছে আসে, আমরা যদি জিজ্ঞেস করি, ‘আপনার কি অ্যাজমা রয়েছে’, হয়তো বলে, ‘না স্যার, আমার অ্যাজমা নেই, ব্রঙ্কাইটিস রয়েছে।’ এ ধরনের রোগীরা সাধারণত সামাজিকভাবেও নিজেকে দূরে রাখে। রোগী নিজেও এটি নিয়ে খুব ভীত থাকে। আসলে অ্যাজমা এমন একটি রোগ, যার সঠিক চিকিৎসা নিলে অনেকটাই ভালো থাকা যায়।
আধুনিক ও সঠিক চিকিৎসা নিলে অ্যাজমা রোগীর সুস্থতা মেলে। এর মানে অ্যাজমা রোগের আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। ‘সঠিক চিকিৎসা নিলে অ্যাজমা রোগী অনেক সুস্থ থাকতে পারে,’ এটা হলো এবারের স্লোগান। বাংলাদেশ অ্যাজমা অ্যাসোসিয়েশন এটি নিয়ে পোস্টার বের করেছে।
অ্যাজমা নিয়ে আমাদের সমাজে যে ভীতি, একে দূর করতে হলে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। অ্যাজমা নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। অ্যাজমা কেবল ফুসফুসেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কেউ বুঝতে পারবে না যে আপনি অসুস্থ।
প্রশ্ন : অ্যাজমার কারণগুলো কী?
উত্তর : অ্যাজমা আসলে অ্যালার্জিজনিত রোগ। অ্যাজমার ব্যাখ্যায় আমরা বলি, এটি প্রদাহজনিত রোগ। অ্যালার্জির কারণে শরীরে একটি প্রদাহ হয়। বিশেষ করে শ্বাসনালিতে প্রদাহ হয়। এ প্রদাহের পর আমাদের শ্বাসনালিগুলোতে একটি প্রতিক্রিয়া হয়। এ কারণে এগুলো সরু হয়ে যায়। অনেক সময় ওই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে সেখানে অনেক মিউকাস জমে। এ কারণে শ্বাস নেওয়ার রাস্তাটা চিকন হয়ে যায়। তখন বাতাসটা বের হতে বা ঢুকতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। তখন রোগীর কাশি হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, বুকে ব্যথা হয়। বুকের মধ্যে একটি শোঁ শোঁ আওয়াজ হয়। একে আমরা অ্যাজমা বলে থাকি।
অ্যাজমা রোগটা বিভিন্ন কারণে হয়। বিভিন্ন জিনিসের অ্যালার্জির কারণে অ্যাজমা হয়। মনে করুন ঠান্ডা। কারো কারো ঠান্ডায় অ্যালার্জি থাকে। শীতকাল এলে অনেকে অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হয় বা অ্যাজমা বেড়ে যায়। আবার ধরুন, ধুলাবালি। ধরুন, ঢাকার রাস্তায় মিরপুর থেকে মতিঝিল যদি কেউ যায়, আবার ফিরে আসে, আর তার যদি অ্যালার্জির সমস্যা থাকে, অবশ্যই তার হাঁচি-কাশি দেখা দিবে। এই অ্যালার্জিটা হলো ডাস্ট অ্যালার্জি। এগুলো বাইরের ধুলাবালি হতে পারে। ঘরের ধুলাবালি হতে পারে। ঘরের যে জমানো ধুলাবালি, এগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। বিশেষ করে যারা এগুলো পরিষ্কার করেন, তাদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এ ছাড়া কিছু খাবার থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। প্রত্যেকেরই কিছু খাবারে অ্যালার্জি থাকে। এই খাবারগুলো যখন রোগী খায়, তার শরীরে অ্যালার্জি দেখা দেয়, চামড়ায় প্রতিক্রিয়া হয়, শ্বাসনালি চিকন হয়ে যায়। তখন তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। অ্যাজমা দেখা দেয়। এ ধরনের অনেক জিনিস রয়েছে। বিভিন্ন ফুল রয়েছে, ফুলের রেণু রয়েছে। এগুলো আমাদের দেশে সাধারণত দেখা যায় না। যুক্তরাজ্যের দেশগুলোতে বা যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে শীত বেশি, প্রচুর গাছ থাকে, তাদের যখন বসন্ত আসে, তখন অ্যালার্জি হয়। তবে এটি আমাদের দেশে খুব একটি দেখা যায় না। কিন্তু এটি একটি অ্যালার্জিক কারণ।
প্রশ্ন : কোন খাবারে অ্যালার্জি হচ্ছে, সেটি বোঝার কি কোনো উপায় রয়েছে?
উত্তর : আসলে আধুনিক চিকিৎসা তো আগে ছিল না। আধুনিক চিকিৎসা আসার পর আসলে এগুলো আর এ রকম নেই। এ বিষয়ে যাঁরা বিশেষজ্ঞ নন বা সঠিক জ্ঞান যাঁদের নেই, তাঁরা বিভিন্ন খাবার খেতে নিষেধ করতেন। বিভিন্ন মাছ, যেমন ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, ডিম, খাসির মাংস, পুঁইশাক, ডাল, গরুর মাংস খেতে মানা করেন। এই ধারণাটা আসলে ঠিক নয়। কারণ, সবার সবকিছুতে অ্যালার্জি থাকে না। কারো খাসির মাংসে অ্যালার্জি থাকতে পারে। কারো মুরগিতে অ্যালার্জি থাকতে পারে। কারো ডিমে থাকতে পারে। কারো মাছে থাকতে পারে। এর জন্য আমাদের ব্যবস্থা রয়েছে। কার কোন জিনিসে অ্যালার্জি রয়েছে, এগুলো আমরা পরীক্ষা করে বলে দিতে পারি। এগুলোর জন্য আমরা ত্বকের পরীক্ষা করে থাকি। আমরা স্কিন পিক টেস্ট করে থাকি। আরেকটি করি ইন্টাডার্মাল টেস্ট। সাবলিঙ্গুয়েল টেস্ট করে থাকি। আমরা প্রচলিতভাবে স্কিন পিক টেস্ট করি। এতে বিভিন্ন অ্যালার্জেনের সমাধান পাওয়া যায়।
কোন কোন জিনিসে অ্যালার্জি রয়েছে, সেগুলো জেনে নিলে অ্যাজমা রোগীদের আর অ্যাটাক হবে না। এটি তারা জেনে নিতে পারেন।
প্রশ্ন : অ্যাজমা অ্যাটাক হলে কী করণীয়?
উত্তর : রোগী যদি কোনো অ্যালার্জেনের স্পর্শে আসে, তাহলে অ্যাটাক হতে পারে। ধরুন, আপনি বাসা বদলালেন। এক বাসা থেকে আরেক বাসায় গেলেন, জিনিসপত্র গোছালেন। এতে বাসার যে ধুলাবালি সেটি তো পুরোটাই আপনার নাক দিয়ে গেল। আপনি এড়াতে পারলেন না। এরপর দেখা গেল, আপনার নাকের মধ্যে সুড়সুড়ি হচ্ছে। একটি-দুটো হাঁচি হচ্ছে। হাঁচি হলে দেখা যায় যে বুকটা আটকে আসল। এরপর একটি সময় দেখা গেল যে শ্বাসকষ্ট উঠে গেল। বুকে শোঁ শোঁ আওয়াজ হচ্ছে, কাশি হচ্ছে। এটি আপনার অ্যাকিউট অ্যাটাক।
এই অ্যাকিউট অ্যাটাক যদি হয়, তাহলে চিকিৎসক আপনাকে বলে দিয়েছে, আপনার কী করতে হবে। সে অনুযায়ী আপনাকে ওষুধ দিতে হবে। অথবা যদি দেখা যায়, ওষুধ নেওয়ার পরও আপনি আরাম পাচ্ছেন না, কমছে না বা আপনি হয়তো আগে কোনো চিকিৎসকের সঙ্গে কথাই বলেননি, তখন আপনাকে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যেতে হবে। এটি নিয়ে বসে থাকার কোনো উপায় নেই।
আমি একটি উদাহরণ দিই। আমরা বলি, হার্ট অ্যাটাক হলে রোগী মারা যায়। অ্যাজমা এমন একটি রোগ যে কেউ টেরও পাবে না। কিন্তু এর বিপরীতে আমি বলি, আপনার ধরুন, সন্ধ্যাবেলা অ্যাজমা অ্যাটাক হলো, আপনি হাসপাতালে গেলেন না, শেষ রাতে আপনি কিন্তু কোথাও যেতে পারছেন না। আপনার অ্যাজমা হয়তো বাড়তে থাকল। এমন একপর্যায় আসবে যে আপনার মৃত্যুর ঝুঁকিও হতে পারে। দেখা গেছে, অনেকে রাতের বেলা এ রকমভাবে মারা গেছে। সে হয়তো একা ছিল বাসায়। তাকে সাহায্য করার কেউ ছিল না। অথচ সে যদি কোনো হাসপাতালে গিয়ে একটু নেবুলাইজিং করত, ইনজেকশন দিত, অক্সিজেন দিত, আরো কিছু ওষুধ প্রযোগ করত সে বেঁচে যেত।
প্রশ্ন : অ্যাজমা রোগীরা ব্যায়াম করলে কি ভালো থাকবেন?
উত্তর : আমরা যদি অ্যাজমা রোগের কথা বলি, এ ধরনের রোগীদেরও শরীরচর্চা রয়েছে। এটি আমরা ফিজিওথেরাপিস্টের মাধ্যমে করতে পারি। আমাদের ফিজিওথেরাপিস্ট রয়েছে এ বিষয়ে শেখানোর জন্য। আমরা অ্যাজমা রোগীদের অনেক সময় ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসকের কাছে রেফার করি। তারা ব্যায়াম দেখিয়ে দেবেন। একজন অ্যাজমা রোগী, কীভাবে শরীরচর্চা করবে।