শীতে শিশুর ত্বকের সমস্যা ও সমাধান

Looks like you've blocked notifications!
শীতে শিশুর ত্বকের যত্নে পরামর্শ দিয়েছেন ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন। ছবি : এনটিভি

শিশুদের ত্বক বড়দের তুলনায় অনেক বেশি নাজুক। তাই বড়দের পাশাপাশি শিশুদের ত্বকের যত্নের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

শীতে শিশুর ত্বকের যত্নের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৩২৪তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন। বর্তমানে তিনি শিওর সেল ডার্মাটোলজি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : শীতে শিশুদের ত্বকের যত্নের বিষয়টি কীভাবে করতে হবে?

উত্তর : আমাদের আজকের বিশেষ পর্বটি তাদের জন্য, যারা পরিবারের মধ্যমণি। পরিবারের সকলের মনোযোগ থাকে কিন্তু তাদের ঘিরে। ইদানীং আমার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের ঘরে এসেছে নতুন শিশু। আমি দেখছি, তারা খুব উদ্বিগ্ন রয়েছে কীভাবে শিশুর ত্বক ভালো রাখবে এই ভেবে। সে বিষয়গুলোকেই মাথায় রেখে আমি দর্শকদের সঙ্গে কিছু পরামর্শ শেয়ার করব।

প্রশ্ন : নবজাতক শিশুদের ত্বকের যত্নে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখতে হবে?

উত্তর : নবজাতকের সঙ্গে কিন্তু আসে নবজাতকের মা। আর মা যখন শিশুকে জন্ম দেন, এরপর তার মধ্যে হঠাৎ করে কিছু পরিবর্তন আসে। অনেক সময় এই মায়েরা বিষণ্ণতায় ভোগেন। সেই জন্য আমি বলি যে মাকে নিজের প্রতি যত্নবান হতে হবে। মা যদি নিজে ফিট থাকেন, তাহলে কিন্তু শিশুর যত্ন নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে মায়ের খাবার-দাবার, বিশ্রাম এগুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। তার নিজেকে নিজের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে এবং পরিবারের অন্যদেরও তার প্রতি যত্নবান হতে হবে।

আর আমাদের বিষয়টি যেহেতু নবজাতকদের নিয়ে। আমি মায়েদের বলব, যখন সন্তানকে কোলে নেবেন, তখন অবশ্যই হাত ধুয়ে নেবেন। কারণ, শিশুর ত্বক আমাদের তুলনায় ৩০ ভাগ পাতলা, তাই যেকোনো ধরনের জীবাণু কিন্তু শিশুকে আক্রমণ করতে পারে। তাদের ত্বক অনেক স্পর্শকাতর ও নাজুক। আর শুধু তা নয়, যখন আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবরা শিশুকে দেখতে আসবেন, তখন হাত জীবাণুমুক্ত করে নেবেন, শিশুর রোগমুক্তি ও জীবাণুমুক্ত জীবনের জন্য।

প্রশ্ন : শিশু একটু বড় হওয়ার পর তার ত্বকের বিশেষ কোনো যত্নের প্রয়োজন রয়েছে কি?

উত্তর : নবজাতকের ত্বক নিয়ে বলার পর আমি একটু বাড়ন্ত শিশুর ক্ষেত্রে যাচ্ছি। নবজাতকদের ক্ষেত্রে শীতের কথা ভেবে মা বা আত্মীয় স্বজনরা অনেক কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখেন। বা উলের কোনো কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখে। ত্বকে কিন্তু ইরিটেশন হয়। সেই ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ থাকবে, শিশুকে কোনো নরম গেঞ্জি বা সুতির কাপড় পরিয়ে ওপরে কোনো শীতের কাপড় জড়িয়ে রাখা ভালো। না হলে গরমে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। আবার শীতেও কিন্তু হিট র‍্যাশ হয়।

প্রশ্ন : একটু বড় বাচ্চাদের বেলায় কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখা দরকার?

উত্তর : শিশুর যখন দুমাস হয়, তখন তাদের মাথায় হলুদ রঙের এক ধরনের পদার্থ দেখা দেয়। মায়েরা হঠাৎ করে ভয় পেয়ে যায়। ভাবে, কী হলো আমার শিশুর। আসলে মাথার ওপর আরেকটি বাড়তি প্রলেপ পড়ছে। এটি কিছু নয়, ক্রেডাল ক্র্যাফ্ট। এর চিকিৎসাও খুব স্বাভাবিক, খুব সাধারণ। একটি বাড়তি আবরণ পড়ে বলে মায়েরা ঘষে ঘষে তোলার চেষ্টা করে। তা করবেন না। মিনারেল ওয়েল বা প্রাকৃতিক তেল মাথায় দিয়ে এই লেয়ারকে নরম করে, নরম ব্রাশ বা চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে পরে সাধারণ বেবি শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। কারণ, আট মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এটি চলে যায়।

আর মায়েদের বলব, প্রথম ছয় মাস কিন্তু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য। বুকের দুধ খাওয়ার মাধ্যমে মা ও সন্তানের সংযোগটা থাকবে। শিশুদের যে ফিলগুড হরমোন (ভালো অনুভূতির হরমোন) বের  হবে। ত্বক ও তার অন্যান্য অঙ্গ যেমন ফুসফুস হার্ট এগুলো থাকবে সুস্থ ও রোগমুক্ত।

প্রশ্ন : যখন বাচ্চাটি হাঁটতে থাকে, তখন ত্বকের কোনো যত্নের কী প্রয়োজন রয়েছে?

উত্তর : শিশুর ত্বক স্বাভাবিক হতে থাকে ছয় মাসের পরে। এরপর শিশু হামাগুড়ি দিচ্ছে, হাঁটছে। বিভিন্ন ধরনের পণ্যের সংস্পর্শে আসছে। যেসব বাবা মায়ের ত্বকে এটোপিক ডার্মাটাইটিস থাকে বা ত্বক খুব শুষ্ক থাকে, তাদের শিশুদের এসব সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই বয়সে শিশুদের এটোপিক ডার্মাটাইটিসের সমস্যা হয়। শীতে এটি বেশি দেখা যায়। দেখা যায়, বিশেষ কিছু জায়গায় কুনুই, হাঁটু, গোড়ালিতে এক ধরনের ঘা বা গোলাপি রঙের র‍্যাশ, চুলকানি হয়। মাঝেমধ্যে সেখানে পানির মতো হয়, চুলকানি হচ্ছে, যেগুলো একটু আশঙ্কারই কারণ। সেই ক্ষেত্রে যেসব শিশুর মা-বাবার ত্বক খুব শুষ্ক, তারা নিজেরাই আগে থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেবেন। শিশুর গোসলের সময় যে ক্লিনজার ব্যবহার করবে, সেটি যেন লিকোরিস বা মিনারেল ওয়েলযুক্ত বা ন্যাচারাল ওয়েলযুক্ত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।