শিশুর ডেঙ্গু জ্বর : কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বর হয়। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ একটু বেশি। শিশুরাও এ বছর ডেঙ্গুর শিকার হচ্ছে।
শিশুরা যেহেতু তাদের সমস্যাটা বলতে পারে না, তাই যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে ভোগান্তিটা তাদের একটু বেশিই হয়। ডেঙ্গু জ্বরের বেলাতেও তাই। শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১৯৯তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মোহাম্মদ মশিউর রহমান।
ডা. মোহাম্মদ মশিউর রহমান বর্তমানে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : এবার ডেঙ্গু জ্বরে শিশুরা কতখানি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে?
উত্তর : আসলে বর্ষার এ সময়ে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী যে মশা এডিস ইজিপ্টাই, এটি বেশি বিস্তার করে। কয়েক বছর ধরে এই ডেঙ্গুটা ছড়াচ্ছিল, তবে এবার দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গুটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সবার সচেতনতায় এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। তারপরও যেহেতু শিশুরা সহজে সবকিছু বলতে পারে না, সেই কারণে তারা সব সময় বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। আমরা সবাই জানি এটি ভাইরাল জ্বর। এটা মশার মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত দেখা যায় সকাল বেলা সূর্যাস্তের পরে, আবার সূর্যোদয়ের দুই ঘণ্টা পরে, সূর্যাস্তের আগে আগে এই মশাটা ছড়ায়। এই মশাটা দিনের বেলা কামড়াবে। এরা সাধারণত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পানিতে জন্মায়।
দেখা যায়, টায়ারের মধ্যে পানি জমে রয়েছে, ফুলের টবের মধ্যে পানি জমে রয়েছে, এসির পানি জমে রয়েছে। যেখানে দুই থেকে তিন দিন পানিটা জমে থাকবে, সেখানে দেখা যাবে, মশাটা ছড়াচ্ছে। আর ডেঙ্গু যে ভাইরাস দিয়ে হয়, এদের চারটি ধরন রয়েছে। একবার একটি দিয়ে হলে, এদের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। তবে এর পরেরবার দেখা গেল আরেকটি ধরন দিয়ে এটি হচ্ছে। এর পরেরবার যখন হয়, তখন দেখা যায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর মানে একবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর আবার যদি সে আক্রান্ত হয়, তাহলে ঝুঁকিটা বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে এবার ঝুঁকিটা একটু বেশি হচ্ছে এবং মারাত্মক রূপ ধারণ করছে। বাচ্চারা বিশেষ করে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু হাসপাতালেও ডেঙ্গু জ্বরের রোগী এখন বেশি আসছে।
তবে সরকারের সচেতনতা ও চিকিৎসকদের সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, জ্বরটা নিয়ন্ত্রণে আছে। এরপরও যেহেতু এই জ্বরটা অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতো, সেই কারণে হয়তো বোঝা যায় না, তার জন্য যে ডেঙ্গু জ্বরটা শুরু হবে, দেখা যাচ্ছে অনেক বেশি মাত্রায় জ্বর আসে। বড়রা যেমন বলতে পারে, আমার মাথাব্যথা বা শরীর খারাপ লাগছে, বাচ্চারা সেটা বলতে পারে না। এই কারণে বাচ্চারা বেশি ঝুঁকির মধ্যে। অন্যান্য জ্বরের মতোই জ্বরগুলো আসবে। উচ্চ জ্বর হতে পারে। ১০২/১০৩ এ রকম হতে পারে। প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয়, চোখের পেছনে ব্যথা করে। দেখা যায়, সাধারণত দুই থেকে তিন দিন এই জ্বরের অবস্থানে থাকে।
প্রশ্ন : জ্বরের মধ্যে কী কী লক্ষণ দেখলে বাবা-মায়ের উচিত হবে শিশুকে বাসায় বসিয়ে না রেখে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া?
উত্তর : ভাইরাস জ্বর অন্যান্য জ্বরের মতোই হয়। টাইফয়েড জ্বর ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হয়। জ্বর শুরু হবে একই রকমভাবে। এখন আমাদের যে সুযোগ চলে এসেছে, ডেঙ্গু জ্বরের যে পরীক্ষাগুলো এসছে, এক থেকে দুই দিনের মধ্যে এটি নির্ণয় করা যায়। যদি বেশি মাত্রায় জ্বর, সঙ্গে খুব বেশি মাথাব্যথা, বমি হয়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
ডেঙ্গু জ্বরে প্রথম এক থেকে দুই দিনের মধ্যে আমরা যে এন এসওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করি,তাহলে জ্বরটা মোটামুটিভাবে ধরা পড়ে যায়। ডেঙ্গু জ্বর হলে খুব বেশি ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ, প্রথমবার ডেঙ্গু জ্বর ভালো হয়ে যায়। দুই থেকে তিন দিন থাকবে। এই জ্বরে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। তাই মা-বাবাকে প্রচুর পরিমাণ তরল খাবারটা দিতে হবে। এটা হতে পারে বাসায় তৈরি সতেজ জুস অথবা ডাবের পানি অথবা ওরস্যালাইন। এগুলো দিলে পানিশূন্যতাটা হবে না। সাধারণত দুই থেকে তিন দিন পরে ডেঙ্গু জ্বরে জ্বরটা কমে আসে। তখন দেখা যায় শরীরে র্যাশ আসে। এই র্যাশ যে সময় আসে, তখন আমরা বলি যে এই সময়টায় জ্বর থাকবে না। কিন্তু এই তিন দিন পর থেকে এই সময়টা হচ্ছে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। জটিল অবস্থা বলি আমরা। সাত থেকে আট দিন এই সময়টা হলো জটিল অবস্থা। এই সময় দেখা যায় যে পানি বের হয়ে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা রক্তের একটি পরীক্ষা করি। প্লেটিলেট কাউন্ট করি। পরিবারের সবাই খুব উদ্বিগ্ন থাকে। প্লেটিলেট কাউন্ট কমে যাচ্ছে। প্লেটিলেট কাউন্ট কমে গেলে উদ্বেগের কিছু নেই। যদি বাচ্চাটা পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারে, বাচ্চাটা পর্যাপ্ত খাওয়া-দাওয়া করতে পারে, তরল খাবার খেতে পারে, বাসায় বাচ্চাটার চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু কোনো যদি বিপদ চিহ্ন বলি, তাহলে ঝুঁকি।