মাল্টিপল মায়ালোমার উপসর্গ কী?

Looks like you've blocked notifications!

মাল্টিপল মায়ালোমা অপ্রচলিত একটি রক্তরোগ। এর উপসর্গের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১৯১তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. এ বি এম ইউনুস।

ডা. এ বি এম ইউনুস বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : মাল্টিপল মায়ালোমার উপসর্গ কী?

উত্তর : অন্যান্য ক্যানসারের তুলনায় এর পার্থক্য রয়েছে। তবে এটি পর্যায়ক্রমে হয়। প্রথম যেটি আসে, সেটি হলো ব্যাক পেইন। কোমরে ব্যথা নিয়ে প্রকাশ করে। তখন কাছাকাছি যে চিকিৎসক পাওয়া যায়, তার কাছে যায়। কিছুদিন ওষুধ খাওয়ার পর দেখা যায় কোনো উন্নতি নেই, আরেকটু উন্নত জায়গায় যায়। এই পেইন কিলারের অবস্থা চলতে থাকে কয়েক বছর। হতে হতে একসময় দেখা যায় তার কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তো আমরা অনেক রোগীই পাই, যারা কিডনি চিকিৎসকের কাছ থেকে আসে। আরেকটি দিক হলো যখন এই ব্যথানাশক ওষুধ বারবার খেতে খেতে উপশম হচ্ছে না, ঠিক সেই অবস্থায় যদি একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বা ভালো একজন চিকিৎসকের কাছে যান, তিনি যদি ভালো করে দেখেন, তাহলে সেটি অনুমান করতে পারেন। দেখেন যে তার এই ধরনের কোনো সমস্যা রয়েছে কি না। এক্স-রে করলেই তো হাড়ের ক্ষয়টা ধরা পড়ে।

এই রোগ যখন আরেকটু অগ্রবর্তী পর্যায়ে পৌঁছে যায়, যখন রক্তের অন্যান্য কোষ তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে, তখন দেখা যায় তার রক্তশূন্যতা। তার যেহেতু এই একটি কোষই বাড়ছে, অন্য কোষগুলো বাড়তে পারছে না, তখন অন্য কোষের সংখ্যা কমে যায়, তার যে প্লাজমা সেলটা রয়েছে, সেটি অসুস্থ, ক্যানসারাস কোষ, প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পাচ্ছে না, তখন তার প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এতে ঘন ঘন সংক্রমণ হয়। এটি হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষণ। জ্বর হচ্ছে, অ্যান্টিবায়োটিক খেল, ভালো হয়ে গেল। কয়েক দিন পরে আবার হচ্ছে। গলাব্যথা হচ্ছে, কাশি হচ্ছে।

এই যে ঘন ঘন তার সংক্রমণ, সামান্য কয়েটা দিন ভালো থাকে, আবারও তার সংক্রমণ, এটা হলো তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার যে বিশাল রকম বিপর্যয় ঘটেছে, তারই একটি লক্ষণ।

দুই নম্বর হলো, যখন রক্তের লোহিত কণিকা ঠিকমতো উৎপাদন হবে না, তার রক্তস্বল্পতা হবে। যখন অনুচক্রিকা উৎপন্ন হবে না, তখন তার রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা হবে।

এ ছাড়া মাল্টিপল মায়ালোমা, প্লাজমা কোষ যেগুলো ক্যানসারাস হয়ে গেল, এক ধরনের পেরা প্রোটিন তৈরি করে। প্রতিরোধের জন্য যে ইমিউগ্লোবিন তৈরি করে, সেটি সে পারে না, ক্যানসারাস একটি প্রোটিন তৈরি করে। এই প্রোটিনটা রক্তের এই অনুচক্রিকার গায়ে যখন লাগে, তখন তার কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এতে প্লেটিলেট কাউন্ট যদি স্বাভাবিকের কাছাকাছি থাকে, এরপরও দেখা গেল, এমন লক্ষণ শুরু হয়েছে তার রক্তক্ষরণের যে হয়তো অনুচক্রিকা অনেক কম থাকলে হওয়ার কথা ছিল। এই গেল একদিক। আরেকদিক হলো এই যে আমরা প্রোটিনের কথা বললাম, সেটি যখন রক্তের ভেতর আসে, এটি যখন তৈরি হয়ে রক্তের প্লাজমার সঙ্গে মিশে যায়, তখন রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়। রক্তের ঘনত্ব বেড়ে গেলে সরু যে নালিগুলো রয়েছে, সেখান দিয়ে রক্ত চলতে পারে না। এতে মস্তিষ্কের যে সঞ্চালন, সেটি বাধাগ্রস্ত হয়। এতে তার স্বাভাবিক সচেতনতার মাত্রা, স্বাভাবিক যে পরিচিতি, সেগুলো বাধাগ্রস্ত হয়। দেখা গেল, একজনের সঙ্গে কথা বলছে কিছু স্মৃতি সে ধরে রাখতে পারছে না বা যা বলছে আবোলতাবোল বলছে। স্বাভাবিকভাবে সে কথা বলতে পারছে না। এর মানে হলো মস্তিষ্কের যে কোষগুলো, সেখানে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হচ্ছে না। এসবই হলো মাল্টিপল মায়ালোমার অগ্রবর্তী পর্যায়ের লক্ষণ।

এ ছাড়া মাল্টিপল মায়ালোমার কারণে হঠাৎ করে দেখা গেল, তার হাড় ভেঙে গেছে। প্যাথলজিক্যাল ফ্রাকচার হয়ে গেছে। এগুলো হলো মাল্টিপল মায়ালোমার লক্ষণ।