নবজাতকের ছয় চর্মরোগ, করণীয়

Looks like you've blocked notifications!
নবজাতকের চর্মরোগ হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

জন্মের পরপরই শিশুদের কিছু চর্মরোগ দেখা যায়। এগুলো নাকি খুব স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে অথবা অজ্ঞতার কারণেও এ জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি হয়। শিশুর ত্বকের সঠিক পরিচর্যা, সময়মতো সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অতি সহজেই এ জাতীয় জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

১. প্রিকলি হিট বা ঘামাচি

দিনের তাপমাত্রা বেশি থাকা অবস্থাতেও আমাদের মা-চাচিরা নবজাতকের চারদিক থেকে বিভিন্ন গরম কাপড়ে জড়িয়ে রাখেন এবং এর থেকে সাদা অথবা লাল রংবিশিষ্ট পানি আকারে দেখা দেয়। এ জাতীয় ঘামাচি চেনার মূলমন্ত্র হচ্ছে যে, ঘামাচি কখনো লোমের গোড়াতে হয় না। ঘামাচিকে যদিও মনে হতে পারে সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু এ থেকে অনেক জটিল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন—এ থেকে শরীরে অনেক ফোঁড়ার সৃষ্টি হতে পারে। এটি সাড়ানো একটু কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আবহাওয়া যদি গরম থাকে, তবে জন্মের পর শিশুকে একটু খোলামেলা রাখা উচিত। ঘরের জানালা খোলা থাকা উচিত। ঘামাচিতে যেকোনো ট্যালকম পাউডারের ব্যবহার উপকারে আসে।

২. এরিথেমা টক্সিকাম নিউন্যাটোরিয়াম বা মাসিপিসি

গ্রামের মা-চাচিরা এ জাতীয় চর্মরোগকে মাসিপিসি বলে থাকেন এবং এটি নবজাতকদের হয়েই থাকে বলে তাদের ধারণা। সত্যিই এটি খুব সাধারণ ব্যাপার। জন্মের তিন থেকে চার দিনের দিন শিশুর শরীরে লাল লাল র‍্যাশ দেখা দেয়। এর সঙ্গে জ্বর বা অসুস্থতার অন্য কোনো উপসর্গ থাকে না। ১০ দিনের দিন কোনো ধরনের ওষুধ ছাড়াই এটি ভালো হয়ে যায়।

৩. ডায়াপার র‍্যাশ বা ন্যাপকিন র‍্যাশ

লেঙ্গটি পরিধারে নবজাতকের লাল লাল ভাব নিয়ে অ্যালার্জির মতো র‍্যাশ দেখা দিতে পারে। এ জাতীয় র‍্যাশ শরীরের যে সমস্ত স্থান কাপড়ের সংস্পর্শে আসে, সেই জায়গায় হয়ে থাকে। অর্থাৎ ঊরুতে হবে, তবে ঊরুর ভাঁজ বা কুঁচকির ভাঁজে হবে না। এমন অবস্থায় কাপড় সাময়িকভাবে বর্জন করা উচিত এবং সঙ্গে ফাঙ্গিডাল এইচসি নামক ক্রিমটি দৈনিক দুবার কিছুদিন ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। একটি বিষয় এখানে জরুরি, যে সমস্ত বাচ্চার ন্যাপকিন সারা রাতে একবারও বদলানো হয় না, তাদেরই এ সমস্যাটি বেশি হয়। এ ক্ষেত্রে পায়খানাতে অবস্থিত জীবাণু প্রস্রাবের ইউরিয়া থেকে অ্যামোনিয়া তৈরি করে অ্যালার্জির সৃষ্টি করে।

৪. ক্যানডিডিয়াসিস বা ফাঙ্গাস

নবজাতকের মুখের ভেতর, বিশেষ করে জিহ্বাতে দুধের সরের মতো আস্তরণ দেখা দেয়। সুস্থ-সবল শিশুকে কোনো খাবার খাওয়ানোর পর অল্প একটু পানি খেতে দেওয়া উচিত। এতে জিহ্বা পরিষ্কার হবে এবং ফাঙ্গাস হওয়ার আশঙ্কা কমে আসে। আক্রান্ত স্থানে কয়েক ফোঁটা নিস্ট্যাট ড্রপ দৈনিক তিন থেকে চার লাগিয়ে দিলে কয়েক দিনের মধ্যেই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

যে সমস্ত জায়গা সব সময় ভিজা থাকে, যেমন কুঁচকি, পায়খানার রাস্তার আশপাশ, গলার ভাঁজ, সে সমস্ত জায়গাতেও ক্যানডিডা দিয়ে সংক্রমণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানের চামড়া লাল লাল ভাব হয়ে যায় এবং এর ওপর সাদা সাদা ছোপ দেখা দেয় এবং প্রচণ্ড চুলকায়। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে আক্রান্ত স্থানকে অবশ্যই শুকনো রাখতে হবে। পেভারিল ক্রিম দৈনিক এক থেকে দুবার আক্রান্ত স্থানে মাখলে উপকার পাওয়া যায়।

৫. ক্যারাডাল ক্যাপ

কোনো কোনো নবজাতকের মাথায় চামড়া পুরু হয়ে জমতে দেখা যায়। এগুলো অনেকটা খুশিকর মতো। সাধারণত হলুদ অথবা বাদামি রঙের হয়। কখনো কখনো বাজে গন্ধ হয় এবং তেলতেলে ভাব দেখা যায়। এটি ছয় মাস বয়সে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। সাময়িকভাবে পরিষ্কারের জন্য অলিভ অয়েল রাতে মেখে সকালে গোসল করাতে পারেন।

৬. স্ক্যাবিস বা পাঁচড়া চুলকানি 

খোসপাঁচড়া ছোঁয়াচে রোগ। এটি নবজাতককে আক্রান্ত করে। প্রতিটি আঙুলের ভাঁজে ভাঁজে, কব্জিতে, হাত ও পায়ের তালুতে, বগলে, নাভি, যৌনাঙ্গে, গলা এমনকি সমস্ত শরীরে ছোট ছোট গোটা আকারে চুলকানি দেখা দেয়। তাই দ্রুত একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে এর চিকিৎসা নেওয়া উচিত। কারণ, খোস পাঁচড়াগুলো পেকে যেতে পারে এবং এ থেকে কখনো কখনো কিডনি আক্রান্ত হতে পারে।    

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ