শিশুদের মূত্রতন্ত্রের সমস্যা ও চিকিৎসা
জন্মের পর থেকেই একটি শিশুর মূত্রতন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। তবে এর জন্য সঠিক চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এবং চিকিৎসা নেওয়া খুব জরুরি। আজ ১৩ সেপ্টেম্বর এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১৫০তম পর্বে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মো. নজরুল ইসলাম আকাশ।
urgentPhoto
প্রশ্ন : শিশুদের ক্ষেত্রে মূত্রতন্ত্র বা ইউরোলজির কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : সাধারণত ইউরোলজিক্যাল বা মূত্রতন্ত্রের সমস্যা বলতে কিডনি, ইউরেটার, ব্লাডার বা প্রস্রাবের থলি এবং যেই পথে প্রস্রাব বের হয়ে যায় ইউরেথ্রা-এই সম্পূর্ণ বিষয়টিকে ইউরিনারি পদ্ধতি বলে। এর সঙ্গে আরো কিছু জিনিস রয়েছে। সাধারণভাবে এই অংশগুলোর সমস্যাকে মূত্রতন্ত্রের সমস্যা বলে। এদের দুটো ভাগে ভাগ করা যায়। কনজিনেটাল (ছোট থেকে যে সমস্যা হয়) সমস্যা নিয়ে আসে। আর কিছু কিছু সার্জারি পরবর্তী সমস্যা নিয়ে আসতে পারে।
এখন যদি সমস্যার কথা বলি, একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে কিছু সমস্যা হতে পারে। যেটাকে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই খালি চোখে দেখতে পারি আমরা। দেখা গেল, প্রস্রাবের রাস্তাটা নিচে, প্রস্রাব করতে পারে না। ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব পড়ে। দেখা গেল, প্রস্রাবের রাস্তার ওপরের দিকে ছিদ্র। দেখা গেল, প্রস্রাবের থলি বা ব্লাডারটা পেটের চামড়া দিয়ে যে ঘেরা থাকে, সেটা নেই। এটা উন্মুক্ত, লাল মাংসের মতো এবং এখান থেকে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব আসছে। এটা একটা ভয়ঙ্কর অবস্থা।
আর কিছু সমস্যা রয়েছে যেগুলো আমরা দেখি না। লক্ষণ দেখে সমস্যা বুঝতে পারি। প্রস্রাব স্বাভাবিকভাবেই করল, তবে প্রস্রাব করার পরে, দুবার প্রস্রাবের মাঝখানে আবার ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব পড়ে। এ রকম সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসতে পারে। আবার দেখা যায়, বাচ্চা ভালো ছিল একটা বয়সে গিয়ে প্রস্রাব হয়তো পেন্টে লেগে আছে। দেখা যায়, অনেক সময় প্রস্রাবের সংক্রমণের কারণে প্রস্রাব করতে পারছে না। প্রস্রাবের রাস্তার মাথা ফুলে যাচ্ছে। এ রকম সমস্যা নিয়ে সাধারণত ছেলেবাচ্চারা আসে।
মেয়েবাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রস্রাব হয়তো ঠিক হচ্ছে, তবে যোনিপথ দেখা যাচ্ছে না। এ রকম সমস্যা নিয়ে আসে। বাচ্চার মায়েরাও খুব চিন্তিত থাকে। অনেক সময় যেসব চিকিৎসক বিষয়টি নিয়ে না জানে, তারাও অনেক চিন্তিত হয়ে যায়। এতে কিছু চিকিৎসা করলেই আর সার্জারির কোনো প্রয়োজন হয় না।
প্রশ্ন : কী ধরনের ব্যবস্থা এতে আপনারা দিয়ে থাকেন?
উত্তর : প্রথম হচ্ছে, বিষয়টি যে সমস্যা নয় সেটা তাদের নিশ্চিত করা। এখানে একটা ক্রিম আমরা ব্যবহার করি। যেটা দিয়ে ম্যাসেজ করলে আস্তে আস্তে এটি ঠিক হয়ে যায়। কারণ দুটো ল্যাবিয়া বন্ধ থাকার কারণে এখান থেকে একধরনের আঠালো পদার্থ নিঃসরণ হয় যেটার কারণে এই সমস্যা হয়।
প্রশ্ন : এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কোনো বিশেষজ্ঞদের কাছে যাওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর : আসলে এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। যিনি সব সময় গান করেন তাঁর গান যত ভালো হবে, আর একজন হয়তো গান গাইতে পারে, তবে তাঁর চর্চা নেই তাঁর গান তেমন ভালো হবে না।
ঠিক পেডিয়াট্রিক সার্জিক্যাল সমস্যা অথবা পেডিয়াট্রিক ইউরোলজিক্যাল সমস্যা তারাই ভালো পারবে যারা নিয়মিত এর চর্চা করে। কারণ চর্চাই মানুষকে নির্ভুল করে। সে ক্ষেত্রে সারা বিশ্বেই মনে করা হয় শিশুদের মূত্রতন্ত্রের সমস্যায় পেডিয়াট্রিক সার্জনরাই কাজ করবে। এর জন্য সঠিকভাবে চিকিৎসা এবং পরামর্শ নেওয়ার জন্য পেডিয়াট্রিক সার্জনদের কাছেই যাওয়া উচিত।
যেমন ধরেন মুসলমান ছেলেবাচ্চাদের মুসলমানি করানো হয়। এটা আগে আমাদের দেশে গ্রামে হাজামরা করতেন। পরবর্তীকালে দেখা যায় অনেক এমবিবিএস চিকিৎসক এটা করতেন। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পেডিয়াট্রিক সার্জারি উন্নত হয়েছে। আসলে একজন পেডিয়াট্রিক সার্জন এই বিষয়টি যত্নের সঙ্গে করবেন। অন্য সার্জনরা পারবেন না সেটা নয়, তবে তাঁরা এটার প্রতি অতটা গুরুত্ব দেন না। সেই ক্ষেত্রে শিশুদের মূত্রতন্ত্রের সমস্যার কারণে পেডিয়াট্রিক সার্জনদের কাছে যাওয়া উচিত।
প্রশ্ন : আপনি যেটি বলছিলেন অনেক ধরনের সমস্যা সেখানে সমাধানটা কিসের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর : হাজার বছর বা একশ বছর আগে থেকে এ রকম বিষয়ের বৃদ্ধি হয় নাই। পৃথিবীব্যাপী এই বৃদ্ধি কম হয়েছে। তবে এখন এটি বাড়ছে। আর পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশে এই বিষয় নিয়ে কাজ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা আমরা বাংলাদেশে দিয়ে থাকি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সার্জিক্যাল চিকিৎসা আমরা সুনামের সঙ্গে দিয়ে আসছি। এবং আমরা এখন থেকে বিশেষজ্ঞ পেডিয়াট্রিক সার্জন তৈরি করছি। বাংলাদেশে যে মেডিকেল কলেজগুলো আছে, বিশেষ করে পুরোনো আটটির সবগুলোতে পেডিয়াট্রিক সার্জন রয়েছে। আসলে বিশেষজ্ঞ সার্জন যাঁরা রয়েছেন, এসব বিষয় নিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাঁদের কাছে যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।