ক্যানসার কেন হয়, জানেন?
ক্যানসার মরণব্যাধি। সাধারণত জিনগত ও পরিবেশগত কারণে ক্যানসার হয়। ক্যানসারের কারণের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১৪৪তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. রকিব উদ্দীন আহমেদ।
রকিব উদ্দীন আহমেদ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ক্যানসার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : সাধারণত কোন বিষয়গুলো ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়?
উত্তর : ক্যানসার একটি মরণব্যাধি বা ঘাতকব্যাধি। একে যতই ঘাতকব্যাধি বলা হোক, এখন চিকিৎসা ব্যবস্থা আসার পর, এটি কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আসলে যদি সম্পূর্ণ দৃশ্যের কথা বলি তিন ভাগের এক ভাগ ক্যানসার কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য। ক্যানসার যেন না হয়, সে বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি।
আবার তিন ভাগের এক ভাগ রোগী চিকিৎসাযোগ্য। মানে নিরাময়যোগ্য। তারা ভালো হয়ে যাবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তাহলে রোগীর ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক। ভালো হয়েও যায়। তিন ভাগের এক ভাগ রোগী অগ্রবর্তী পর্যায়ে আসে আমাদের দেশে। তখন এর চিকিৎসা করে অতটা সফলতা পাওয়া যায় না। এই জন্য আমাদের উচিত হবে ক্যানসার প্রতিরোধ করা। আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোকই গরিব। এই চিকিৎসা ব্যবস্থা একটু ব্যয়বহুলও বটে। আবার ব্যয়বহুল বলে যে অনেক ব্যয় ততটা না। চিকিৎসা ব্যয় সব ক্ষেত্রে সব রোগের জন্য প্রযোজ্য। ক্যানসারের রোগ নিয়ে মানুষের একটি ধারণা যে এটি খুবই ব্যয়বহুল। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ক্যানসার নিয়ে যুদ্ধ করতে হয়। এই যুদ্ধে তার বিভিন্ন সময় অনেক অর্থ ব্যয় হয়ে যায়। এই যুদ্ধটা যদি অনেক আগেই শুরু করা যায়, রোগ শনাক্ত যদি আমরা আগেই করি, তাহলে আমাদের এই অর্থ অপচয় বা অর্থ ব্যয় যেটি বলা হয়, এটিও কমে আসবে।
প্রশ্ন : ক্যানসারের ঝুঁকিগুলো কী?
উত্তর : ক্যানসারের কারণগুলোর কথা যদি বলি, এগুলোকে আসলে দুটো ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হলো জিনগত কারণ। এর মানে হলো এটি জিনের পরিবর্তনের কারণে আসছে। এই জিনগত পরিবর্তনের কিছু অংশ আবার বংশগত। মানে, পরিবারগতভাবেই চলে আসছে। মায়ের থাকলে মেয়ের হতে পারে। এটি একটি অংশ। আর আরেকটি অংশ হলো পরিবেশগত। আসলে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে পরিবেশগত কারণের দিকে।
এই পরিবেশগত কী কী কারণ হতে পারে? একটি খুব বড় কারণ রয়েছে। আমি মনে করি, এটি একেবারে প্রধান কারণ। সেটি হলো ধূমপান। আমরা যদি ধূমপানের বিষয়ে আরো জোড়ালো ভূমিকা নেই বা আমরা ধূমপানের বিষয়ে সতর্ক থাকি, একে যদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে আমাদের একটি বড় অংশ ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারবে।
প্রশ্ন : ধূমপান কি কেবল ফুসফুসের ক্যানসারের জন্য দায়ী? না কি অন্য ক্যানসারের জন্যও দায়ী?
উত্তর : ধূমপানের সঙ্গে ফুসফুসের ক্যানসারের সম্পর্ক জোড়ালো। তবে এই ধূমপানের সঙ্গে বেশিরভাগ ক্যানসারের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। যেটি আমরা ফুসফুসের ক্ষেত্রে বলি, ঠিত অতটা অংশ হয়তোবা নয়, তবে থাকে। আমাদের দেশে দ্বিতীয় ক্যানসার হলো ল্যারিংস, যাকে আমরা শ্বাসনালি বলি- আসলে নাক কান গলা, মুখ গহ্বরের ক্যানসারের সঙ্গে একেবারে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
এ ছাড়া মেয়েদের অন্যতম ক্যানসার হলো জরায়ুর ক্যানসার। জরায়ুর ক্যানসারের সঙ্গে ধূমপানের সম্পর্ক রয়েছে। শুধু তাই নয়, আমরা যদি পাকস্থলীর কথা বলি, আমরা যদি ইউরিনারি ব্লাডারের কথা বলি, মোটামুটি কমবেশি সলিড টিউমারের সঙ্গে ধূমপানের সম্পর্ক রয়েছে।
প্রশ্ন : যেসব তামাক চিবিয়ে খেতে হয়, সেগুলোও কি ক্যানসার হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে?
উত্তর : আসলে কেবল ধূমপান নয়, তামাকজাত যেকোনো দ্রব্যের ব্যবহারের কারণে সমস্যা হতে পারে। জর্দ্দা, সাদা পাতা, সবগুলকেই আমরা তামাকজাত দ্রব্য বলি।
এগুলো ছাড়া আমাদের কিছু ভাইরাস রয়েছে, সেগুলোর কারণে হয়। হারপিক্স ভাইরাস, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ইত্যাদি। নারীদের যে জরায়ুর ক্যানসার এটির সঙ্গে সরাসরি জরিত। ৯৫ ভাগ জরায়ুর ক্যানসারের সঙ্গে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস জড়িত।
ন্যাজোফ্যারিংস নাকের একটি ক্যানসার। আমাদের দেশে এটি এতটা বেশি নয়। তবে এর সঙ্গে ইবিস্টিন ভাইরাস নামক একটি ভাইরাস রয়েছে, যেটি জড়িত। আর বাংলাদেশে আরেকটি প্রচলিত ভাইরাস রয়েছে, যাকে আমরা হেপাটাইটিস ভাইরাস বলি। এই ভাইরাস দিয়ে আমাদের হেপাটেসিওয়াল কারসিনোমা নামে লিভারের একটি ক্যানসার হয়।
এ ছাড়া আরো কারণের কথা বলতে গেলে বলতে হবে স্থূলতা। এই স্থূলতা একটি অন্যতম কারণ। আমি একটি তথ্য দিতে চাই, যাঁদের মেনোপোজ বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের যদি ১০ কেজি ওজন বাড়ে, তখন তার স্তন ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ে।
আর তার ওজন কমে গেলে ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করবে। অর্থাৎ স্থূলতা একটি বড় ধরনের কারণ।
প্রশ্ন : পরিবেশগত কারণের মধ্যে আমরা বিভিন্ন ধরনের রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসি। এখান থেকে কি ক্যানসার হতে পারে?
উত্তর : বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ক্যানসারের জন্য খুবই দায়ী। আমরা বিভিন্ন ডাই ফ্যাক্টরিতে কাজ করি। কয়লার ফ্যাক্টরিতে কাজ করি। তাদের কিন্তু মূত্রথলি, মানে ব্লাডারের ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা বেশি। প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি, রাবার ফ্যাক্টরি, রঙের ফ্যাক্টোরি – এগুলো থেকে বিভিন্ন ডাই এর মাধ্যমে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
কিছু রেডিয়েশন দায়ী, কিছু ওষুধ রয়েছে, এগুলো দায়ী। আরেকটি কারণ হলো কায়িক পরিশ্রম না করা। এগুলোও ক্যানসারের একটি প্রধানতম কারণ। এ ধরনের কারণের জন্য ক্যানসার হতে পারে।