ডায়াবেটিস রোগীর ‘হাইপো’ হলে করণীয়
রক্তের গ্লুকোজ বা শর্করা যখন নির্দিষ্ট স্বাভাবিক মাত্রার নিচে চলে যায় তখন আমরা সেই অবস্থাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা হাইপো বলে থাকি। এই শব্দটির সঙ্গে বেশির ভাগ ডায়াবেটিক রোগীই পরিচিত। আর যাঁরা পরিচিত নন তাঁরা যাতে তা জানতে পারেন সে উদ্দেশ্যেই এ বিষয়ের অবতারণা।
শক্তির উৎস হিসেবে মানুষের জন্য গ্লুকোজ বা শর্করার ভূমিকা প্রধান। এই গ্লুকোজ মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর জন্য একমাত্র শক্তির উৎস। সেজন্য শরীরের সুস্থতার জন্য শক্তির উৎস হিসেবে রক্তের শর্করার পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে রাখা আবশ্যক।
অগ্নাশয় গ্রন্থির অন্তর্গত বিটা কোষ নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। খাবার খাওয়ার পর ইনসুলিন বেরিয়ে আসে।
প্রধান কারণগুলো কী?
বহুমূত্র বা ডায়াবেটিক রোগীদের কখন ‘হাইপো’ হতে পারে-
- যখন সময়মতো খাবার খান না, দেরিতে খান বা অল্প খান।
- যখন বমি বা পাতলা পায়খানা হয়ে খাবার শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
- যখন অতিরিক্ত ব্যায়াম করেন (খেলাধুলা বা ভারি কাজ)।
- যখন অতিরিক্ত ইনসুলিন নেন বা বড়ি বেশি খান।
- যখন খালি পেটে অতিরিক্ত মদ্যপান করেন।
তাই দেখা যাচ্ছে হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধ করার মতোই একটি সমস্যা।
তাহলে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার সতর্ক সংকেত কী?
- অবস্বাদ
- হঠাৎ ক্ষুধা পাওয়া
- অতিরিক্ত ঘাম
- মাথা ঘোরা
- শরীর কাঁপা
- দ্রুত হৃদস্পন্দন
- একটি বস্তুর দুইটি প্রতিবিম্ব দেখা
- দুর্বলতা
- মাথা ব্যথা।
- এ ধরনের সংকেত পেলে আমাদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। বহুমূত্র রোগীরা এ অবস্থায় টেস্ট স্ট্রিপের মাধ্যমে রক্তের শর্করা দেখবেন।
কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন?
সর্ব প্রথম ও প্রধান কর্তব্য- নিম্ন শর্করার মাত্রাকে উচ্চ বা স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসা এবং যতটা সম্ভব যে কোনো ধরনের চিনি, ফলের রস, গুড়ের শরবত বা গুড়, লেজেন্স ক্যান্ডি, শর্করা বা গ্লুকোজ মিশ্রিত শরবত বা যেকোনো শর্করাযুক্ত খাবার।
কোনো রোগী যদি অজ্ঞান হয়ে যায় তবে জোর করে মুখে কিছু দেওয়া হবে চরম বোকামি। এ অবস্থায় দাঁত ও গালের মাঝখানে চিনি জাতীয় জিনিস ঘষে দেওয়া যেতে পারে, তবে নালিতে গ্লুকোজ দেওয়া হচ্ছে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা।
কীভাবে ‘হাইপো’ থেকে দূরে থাকবেন?
- আপনাকে চিকিৎসক প্রদত্ত বড়ি বা ইনসুলিনের মাত্রা সম্বন্ধে নিশ্চিত হোন।
- খাদ্য বিশারদ অথবা আপনার চিকিৎসক প্রদত্ত খাদ্য তালিকা মেনে চলুন। কম খাবেন না।
- অন্য অসুস্থতার জন্য কোনো ওষুধ দেওয়া হলেও আপনার চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন সেগুলো রক্তে শর্করা হেরফের করবে কি না।
- যদি আপনি ব্যায়াম করেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বড়ি বা ইনসুলিনের মাত্রা কমাবেন ।
- হাইপো গ্লাইসেমিয়ার মতো উপসর্গ হলে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ