মায়ের যত্ন বলতে কী বোঝায়?
একটি সুন্দর ও সুস্থ শিশুর জন্য একজন গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও পরিচর্যা খুব জরুরি। আজ ২৩ আগস্ট স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১২৯তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ডা. জুলফি আরা হায়দার।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় একটা মেয়ের যত্ন বা মায়ের যত্ন বলতে আমরা কী বুঝি? এবং কখন থেকে এটা শুরু হওয়া উচিত?
উত্তর : আসলে গর্ভবতী মায়ের পরিচর্যা পৃথিবীজুড়েই হচ্ছে। আমাদের দেশে এটা অত্যন্ত প্রয়োজন। এবং সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে ১০০ ভাগ করার জন্য। একটা মা যখন বুঝবে সে গর্ভবতী হয়ে গেছে তখন চিকিৎসকের কাছে যোগাযোগ করবে। একটু যদি বাড়িয়ে বলি, তবে বিয়ের পর থেকেই এ প্রস্তুতি নিতে হবে এটি চিকিৎসকরা পরামর্শ দিই। যখনই তার ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেল তখনই সে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
প্রশ্ন : গর্ভকালীন পরিচর্যা বলতে সার্বিকভাবে কী বোঝানো হয়?
উত্তর : এখানে চিকিৎসকের ভাষায় তো বলা হয় অ্যান্টিনেটাল কেয়ার বা বাংলা গর্ভকালীন পরিচর্যা। তবে এর নিয়মটা একটু গুছিয়ে বলা প্রয়োজন। চিকিৎসকের কাছে যখন মা প্রথমে আসবে, তখন চিকিৎসক তাঁকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। গর্ভকালীন পরিচর্যা বলতে তিনটি জিনিস বোঝায়। তাঁর আনুষঙ্গিক রোগ-শোক সবকিছু মিলিয়ে একটা ইতিহাস নেওয়া। তাঁর মেডিকেল ইতিহাস, অস্ত্রোপচারের ইতিহাস, গাইনিক্যাল ইতিহাস, আগে বাচ্চা আছে কি না – সব কিছুর ইতিহাস নিতে হয়। এই ইতিহাস নেওয়ার পর তাঁকে একটা পরীক্ষা করতে হবে। সব পরীক্ষা করার পর তাঁকে কিছু পরামর্শ দিতে হবে।
ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয় এবং পরীক্ষা- নিরীক্ষা করা হয়। তার পর প্রশ্ন হলো তাকে কী পরীক্ষা করবে? পরীক্ষাটা কম করতে হবে। একটা হিমোগ্লোবিন, গ্রুপিং আর এইচ ফ্যাক্টর। এ ছাড়া বাংলাদেশর জন্য প্রযোজ্য লিভারের এসবিএসএজি। মূলত এই তিনটা পরীক্ষা করতে হবে। এখানে আরেকটি বিষয় হলো ডায়াবেটিস চেকআপ করবে কি না। এই নিয়ে বিভিন্ন সেমিনারে আলোচনা করার ফলে অধিকাংশের মতামত হলো যাদের পরিবারে ডায়াবেটিস রয়েছে কিংবা তাঁর আগের বাচ্চা কোনো কারণে মারা গেছে, কিংবা তাঁর আগের বাচ্চা চার কেজির বেশি হয়েছিল তাদের ছাড়া আর কারো প্রথমেই পরীক্ষা করার দরকার নেই। তবে শেষের দিকে দেখতে হয় নতুন করে সমস্যা হলো কি না।
প্রশ্ন : অ্যান্টিনেটাল চেকআপের গুরুত্ব কতখানি এবং কতখানি করতে হবে সেটি যদি আমাদের একটু বলতেন।
উত্তর : এটা আসলে পরামর্শের মধ্যে চলে যায়। আমরা তিনটা ভাগ করি ইতিহাস, পরীক্ষা ও পরামর্শ। অবশ্য পরীক্ষার মধ্যে আমি একটা জিনিস বলতে ভুলে গেছি। সেটা হচ্ছে আল্ট্রাসোনোগ্রাম কখন করতে হবে। আমরা প্রথম দিকেই আল্ট্রাসোনোগ্রাম করব। দেখব বাচ্চা ভালো আছে কি না। তারপর দেখি যদি তার সামর্থ্য কম একটা মাত্র আল্ট্রাসোনোগ্রাম করতে বলব ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে। বাচ্চার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিকমতো আছে কি না এটাতে সেটি দেখা হয়। এরপর যদি পরামর্শের কথা বলি যে আমরা তাঁকে আসতে বলব কি না বা কী গুরুত্ব রয়েছে আসার। আমি প্রথম পরামর্শ দেব তিনি যেন নিয়মিত চেকআপে আসেন। তারপর আমি বলব আপনি আপমার স্বাস্থ্য ঠিক রাখবেন। স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে কী দরকার? তাঁকে খাবার ঠিকঠাক খেতে হবে। তাঁর নিজের পরিচর্যা নিজের করতে হবে। এবং যেকোনো ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।
তারপর তাঁকে মানসিকভাবে সাহস দিতে হবে। তাঁকে বলতে হবে বাচ্চা হওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়।
নিয়মিত চেকআপ এই জন্য প্রয়োজন তাঁর উচ্চ ঝুঁকি আছে কি না সেটা কেবল প্রথমবার দেখলে হবে না। ঝুঁকি প্রতিবারই আসতে পারে। আর সাধারণত আমরা প্রথম দিকে চার সপ্তাহ পরপর আসতে বলি। সাত মাস বা ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত বা চার সপ্তাহ পরপর একবার আসেন। এরপর এটা হবে প্রতি দুই সপ্তাহে একবার। সেটা হবে ৩২ সপ্তাহ পর্যন্ত। এরপর ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত এটাকে আমরা নিয়মিত করব। ৩৬ থেকে ৪০ প্রতি সপ্তাহ সপ্তাহে তাঁর আসতে হবে। প্রতিবারই পরীক্ষা করে কোনো ঝুঁকি আছে কি না দেখতে হয়। প্রতিবারই তাঁর হিমোগ্লোবিন ঠিক আছে কি না দেখতে হয়, প্রস্রাবে কোনো হিমোগ্লোবিন আছে কি না দেখতে হয়। পাশাপাশি তাঁর এবং তাঁর পরিবারের জন্য পরামর্শ থাকে।
খাবারের ক্ষেত্রে তাঁকে বলব সুষম খাবার খেতে হবে। মাকে একটু বেশি খেতে হবে। প্রায়ই টেলিভিশনে বলতে শোনা যায় এ সময় একমুঠো চাল বেশি, এক মুঠো ডাল বেশি খাওয়া জরুরি।
এখানে একটা বিষয় বলি, অনেক সময় মুরুব্বিরা গর্ভবতী মাকে খেতে দেন না। বলে বাচ্চা বড় হয়ে যাবে। এটা সঠিক না। আবার অনেক মুরুব্বিরা খুব শক্ত করে পেট বেঁধে দেন। এতে বাচ্চার ক্ষতি হয়। বাচ্চাকে মায়ের পেটে নড়াচড়া করতে হয়, খেলতে হয়।
আমি সরকারের কাছে আবেদন করব যেন শ্রীলঙ্কার মতো গর্ভকালীন সব সেবা বিনামূল্যে করে দেওয়া হয়।