কান ব্যথা : করণীয়
কানে অনেক কারণেই ব্যথা হতে পারে। কান ব্যথার কারণকে দুভাগে ভাগ করা যায়। একটি স্থানীয় ব্যথা, দুই স্থানাস্তরিত ব্যথা।
স্থানীয় কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. কানে ও কানের বাহ্যিক পথে ফোঁড়া বা ইনফেকশন ও আঘাত।
২. কানের বাহ্যিক পথটিতে ছত্রাক/ভাইরাসজনিত সংক্রমণ।
৩. কানে কোনো পোকামাকড় ঢুকলে।
৪. কানে খইল জমে আটকে থাকলে।
৫. কানের পর্দায় আঘাত।
৬. মধ্যকর্ণের তীব্র প্রদাহ, মধ্যকর্ণে পানি জমা।
৭. কানের পেছনের দিকে হাড়ের প্রদাহ।
দূরবর্তী কারণ, অর্থাৎ অন্য কোনো স্থানের অসুখের কারণে ব্যথা কানে স্থানান্তরিত হতে পারে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. দাঁত, মাড়ির সমস্যা।
২. টনসিলের ইনফেকশন, জিহ্বার ক্ষত বা অন্য কোনো অসুখ, মুখগহ্বরের তলায় প্রদাহ।
৩. গলবিল ( ফ্যারিংস)-এ প্রদাহ বা কোনো অসুখ।
৪. গলবিলের ওপর এডিনয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া।
৫. চোয়াল সন্ধির প্রদাহ।
এসব কারণের সবই জরুরি অবস্থা নয়। তবে এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিতেই তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে। যদিও সেগুলো জরুরি নয়। আর কিছু রয়েছে জরুরি, তবে ব্যথা খুব তীব্র হয় না।
সাধারণভাবে কানের খইল পানিতে ভিজে ফুলে-ফেঁপে কানের পথে চাপ প্রয়োগ করে এবং তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। এ ছাড়া কানের বাহ্যিক সরুপথে যেকোনো ইনফেকশন এবং কানের গায়ে যেকোনো ফোঁড়াও তীব্র ব্যথার কারণ হয়। এ ছাড়া কানের মধ্যে পানি জমলে মধ্যকানের প্রদাহ এবং মধ্যকর্ণের সঙ্গে বাহ্যিক যোগাযোগ পথ কোনো কারণে বন্ধ হলেও কানে বেশ ব্যথা হয়।
তবে কানের পেছনের অংশে ফোলা ও ব্যথা থাকলে সঙ্গে কান দিয়ে পুঁজ পড়ার ইতিহাস থাকলে, অর্থাৎ কান পাকার ইতিহাস থাকলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা করাতে হবে।
এটি মধ্যকর্ণের প্রদাহজনিত জটিলতা। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ব্যবস্থা নিতে হবে।
কানে খইলের কারণে ব্যথা সাধারণত রাতে হয়। এ ক্ষেত্রে কানে তিন/চার ফোঁটা করে অলিভ অয়েল ১০ দিনের মতো দিতে হবে। এতে খইল নরম হয়ে গেলে বেরিয়ে আসতে চায় না। সে ক্ষেত্রে অবস্থায় কান পরিষ্কার করে দিতে হবে।
সর্দিজনিত কারণে অথবা আকাশপথে ভ্রমণের পর কান বন্ধ হয়ে ব্যথা হলে সে ক্ষেত্রে সর্দির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ (যেমন—সিটিন/এসিট্রিন/ইনসিডাল ইত্যাদি) একটি করে খেতে হবে। চুইংগাম চিবাতে হবে। নাক বন্ধ থাকলে নাতে নোভিন ন্যাজাল ড্রপ (দশমিক ১ শতাংশ) দিতে হবে তিন/চার ফোঁটা করে দিনে তিনবার, তবে পাঁচ দিনের বেশি নাকে ড্রপ দেওয়া উচিত নয়। তাতে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া অন্যান্য কারণে কানে ব্যথার ক্ষেত্রে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এতে কোনো কাজ না হলে রোগীকে হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে পাঠিয়ে দিতে হবে। কাছাকাছি কোনো চক্ষু বিশেষজ্ঞ থাকলে তার কাছেও যেতে পারেন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।