শিশুর ভবিষ্যৎ নির্ভর করে মা-বাবার আচরণের ওপর
বাবা ও মা শিশুদের অভিভাবক। এই অভিভাকদের মোটা দাগে চারটি ভাগে ভাগ করেন মনোবিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৯২২তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. ফাহমিদা ফেরদৌস।
বর্তমানে তিনি জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মানসিক বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : একটি শিশুর মানসিকতা বিকাশের বাধা কী কী?
উত্তর : শিক্ষা আসে কোথা থেকে? মা-বাবার কাছ থেকে। মা-বাবাই হলো প্রথম কর্ণধার। এরপর শিশু কোথায় যায়। স্কুলে। প্রাথমিক শিক্ষা দেয় কিন্তু মা-বাবা। মা-বাবা কী শেখাচ্ছেন,তার ওপর নির্ভর করে তৈরি হয় শিশুর ব্যক্তিত্ব। মৌলিক মন গঠন হয়। একটি মানসিকতা তৈরি হয়। আমরা মা-বাবাকে চার ভাগে ভাগ করি।
একটি হলো অথোরিট্রেটিভ। এই ধরনের মা-বাবার খুব উচ্চ আকাঙ্ক্ষা থাকে। কর্তৃত্ববাদী হয় তারা। আমার কথাই আইন। শিশুর মন বুঝতে চায় না। এটি হলো অথোরিট্রেটিভ মা-বাবা।
এরপর হলো পারমেসিভ মা-বাবা। কিছু মা-বাবা আছেন যে সন্তান কী খাচ্ছে, কী করছে খেয়াল করে না। হয়তো শিশু কারো ঘরে গেছে একটি খেলনা নিয়ে এসেছে, তাও কিছু বলে না। অন্য কারো ঘরে গিয়ে না বলে নিয়ে আসা যে সমাজে ঠিক নয়, এটাকে যে আমরা একটি ভাষায় বলি চুরি সেটি বলে না। শিশুকে এই বয়সেই বলতে হবে যে বাবা এই কাজটা ঠিক নয়।
প্রশ্ন : কিন্তু আমরা যে বলছি শিশুকে ‘না’ বলবেন না। সবকিছুতেই ‘হ্যাঁ’ বলুন। তাহলে?
উত্তর : অবশ্যই আমরা ‘না’ বলব। তবে এসারটিভ পথে। যেমন, বাবা তুমি যে এই জিনিসটি নিয়ে এসেছে এটি আনবে না। তবে তাকে বলে নিয়ে আসবে। বলে নিয়ে এলে সে জানবে যে এটি তোমার কাছে আছে। ইতিবাচক পথে আমরা বলব। অবশ্যই আমরা কথা বলব। ‘না’ কথাটিকেও আমরা অনেক সুন্দরভাবে বলতে পারি। শিশুকে ইতিবাচকভাবে বুঝাতে হবে।
কাউকে আঘাত না করে, তার কাছ থেকে আমরা কাজ আদায় করে নিয়ে আসব, তার ক্ষতি বা আঘাত না করে।
আরেক ধরনের মা-বাবা রয়েছে যারা আনইনভলভ। তার সন্তানের প্রতি তেমন কোনো খেয়াল নেই। আমার একটি ছেলে হয়েছে বা একটি মেয়ে হয়েছে এটিই বড় কথা। ওর প্রয়োজন মূল জিনিস খাদ্য বস্ত্র অন্য বাসস্থান। তার যা দরকার তা তো দিচ্ছি। তবে ওর সঙ্গে বসে একটু সময় দিলাম। ছুটির একটি দিন তার সঙ্গে আমার বসতে হবে। আবেগীয় একটি সম্পর্ক করতে হবে, আত্মীক সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। যদি এই আত্মিক সম্পর্ক তৈরি করতে না পারেন, তখনই এক সময় দেখা যায় এই সন্তান মা-বাবাকে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে। বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে রেখে আসছে। কারণ, তার সঙ্গে তো তার আত্মিক সম্পর্ক হচ্ছে না। তখন আমরা বলি শিশুটি খারাপ বা লোকটি খারাপ। আসলে তার গঠন তৈরি হয় ছোটবেলায়। ১৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবের বৃদ্ধি হয়। একে বলে প্রি ফ্রন্টাল কর্টেক্স। এটি হলো যৌক্তিক চিন্তার জন্য। ১৮ বছরের মধ্যে অবশ্যই এটি হবে। এজন্য সারা বিশ্বে আমরা ১৮ বছরে ভোট দিতে পারি। এর আগে কিন্তু কেউ ভোটার হতে পারি না। আমরা জিনিসগুলো করছি। তবে কেন করছি, কী করছি, জানি না।
যখন আপনি একটি শিশুকে ভালো শিক্ষা দিবেন। আবেগীয় সম্পর্ক হবে। যার শিক্ষা ভালো হবে তার যৌক্তিক চিন্তা ভালোই হবে। যার শিক্ষা ভুল হবে, তার যৌক্তিক চিন্তাও ভুল হবে।
আরেকটি হলো অথোরিটেরিয়ান। মা-বাবার বাচ্চার সঙ্গে খুব আবেগীয় সম্পর্ক থাকবে। তারা বাচ্চাদের কাছ থেকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা করবে, কিন্তু শিশুকে সে বুঝিয়ে বলবে। এই সব মা-বাবার সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক থাকে ৬০ থেকে ৮০ ভাগ। এই সম্পর্কের শিশু বুদ্ধিগতভাবে হয়তো কম নিয়ে আসছে, তবে পরিবেশের কারণে অনেক কিছুতে সে এগিয়ে যেতে পারে।