বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ
মাতৃদুগ্ধ পানের প্রয়োজনীয়তা কী
আজ পয়লা আগস্ট। আগামী সাত তারিখ পর্যন্ত পালিত হবে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। এ কারণে এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে আজকের বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে মাতৃদুগ্ধ পানের প্রয়োজনীয়তা এবং শিশুর পুষ্টি। অনুষ্ঠানের ২১০৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফাতেমা পারভীন।
urgentPhoto প্রশ্ন : এই সপ্তাহটিকে কীভাবে পালন করা হয় আমাদের দেশে?
উত্তর : মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ বহু বছর ধরে বাংলাদেশে নিয়মিত পালন করা হয়। এটা বিভিন্নভাবে পালন করা হয়। এর মূল বিষয়টি হলো জনসচেতনতামূলক। আমাদের মধ্যে সচেতনতা যত বাড়বে এর উপকারিতা, ব্যবহার , আইনের প্রয়োগ সবকিছু বেড়ে যাবে। এ জন্য পুরো সপ্তাহের মূল বিষয়টি থাকে প্রচার-প্রচারণা। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে একটি প্রতিপাদ্য বিষয় ধরে নেওয়া হয়। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘মাদার ফ্রেন্ডলি ওয়ার্কপ্লেস’। অর্থাৎ মায়ের উপযোগী কর্মস্থল। এখন যে হারে মায়েরা কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে তাদের সুবিধার জন্য এটিকে প্রতিপাদ্য বিষয় করা হয়েছে।
আমাদের দেশে মাতৃদুগ্ধ পানের হার ছিল ৪৩। তবে গত পাঁচ বছরে এটি ৬৪ শতাংশে। আরো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে কাজের ক্ষেত্রে তাকে সেই সুবিধা দিতে হবে। যাতে সেই সময় মা তার শিশুটিকে দুধ খাওয়াতে পারে।
আর যেই বিষয়টি বলা হচ্ছে মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা সেটা বলে শেষ করা যাবে না। পৃথিবীতে প্রায় চার হাজার প্রজাতির প্রাণী বাচ্চা প্রসব করে এবং তার বাচ্চাকে দুধ দেয়। এর মধ্যে উন্নততর প্রাণী হলো মানুষ। এর মধ্যে আমরা ছাড়া কেউ কৃত্রিম দুধ খাওয়ায় না। আমরাই এটা করি। তবে প্রশ্ন থাকে সবচেয়ে উন্নত প্রাণী হয়ে আমরা কেন এটা করব?
মাতৃদুগ্ধ একটা শিশুর জন্য আদর্শ খাবার। এর মধ্যে ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, ফ্যাট সব সুন্দর পরিমাণে মেশানো রয়েছে। কেউ কখনো শুনেনি এই দুধ খেলে বাচ্চার শরীরে কোনো কারণে সহ্য হয়নি।
প্রশ্ন : নবজাতকের জন্য শালদুধ কতখানি জরুরি?
উত্তর : শাল দুধ একটি টিকার মতো। এর মধ্য দিয়ে সরাসরি মায়ের কাছ থেকে জীবন্ত কোষটা বাচ্চার মধ্যে চলে যাচ্ছে। তাই সারাজীবনের রোগ প্রতিরোধের জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই দুধটা খুব ঘন এবং খুব অল্প পরিমাণ থাকে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ পুষ্টি রয়েছে। এটা একটা আশীর্বাদ। যার জন্য কোরআন শরীফে প্রায় ১৩ বার মায়ের দুধের বিষয়ে বার্তা দেওয়া রয়েছে।
যেই বাচ্চা মায়ের দুধ খায় ওই বাচ্চার মেধা অন্য বাচ্চার তুলনায় বেশি হবেই। ওই বাচ্চার রেসপেরেটোরি ট্র্যাক্ট, কান- এগুলোর ইনফেকশন সহজে হবে না।
প্রশ্ন : আমরা দেখি বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। পাশাপাশি অন্য খাবারও দিচ্ছেন ...
উত্তর : এটা আরো খারাপ। তাই মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। ওমেগা থ্রি লং চেইন ফ্যাটি এসিড নামে একটি জিনিস দুধে থাকে। প্রোটিন থাকে। বিশেষ করে ওই প্রোটিনটি আজ পর্যন্ত অন্য কোনো কৃত্রিম দুধে দেওয়া যায়নি। আর ওমেগা থ্রি জীবনভর মানুষকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন : বাচ্চা ভূমিষ্ট হওয়ার পর অনেক মা বলেন বাচ্চাটি ঠিকমতো বুকের দুধ নিচ্ছে না। এটার কারণ থাকে এ বিষয়ে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত না হওয়া। এ ক্ষেত্রে আপনার কী মনে হয় এই প্রশিক্ষণের কতখানি গুরুত্ব রয়েছে?
উত্তর : এটাতো শতভাগ সত্য কথা। মায়ের দুধ শিশু পাবে না বা খেতে পারবে না এটা অসম্ভব। এক সাথে একজন মা তিনটি শিশুকে দুধ দিতে পারে। অক্সিটোসিন নামে মস্তিস্কে একটি হরমোন রয়েছে। সেটা যখন নিঃসরণ হবে দুধ এমনিতেই বের হবে। তখন শুধু প্রয়োজন হবে মাকে পর্যাপ্ত পুষ্টি দেওয়া।
একজন নতুন মা কীভাবে জানবে বাচ্চাটিকে কোনভাবে বুকে লাগালে দুধ পাবে? তাই প্রশিক্ষণ দরকার। তাই সবসময় তাকে কারো সাহায্য করা প্রয়োজন। প্রশিক্ষিত নার্স, দাই মা, শাশুড়ি তাদের সাহায্য প্রয়োজন এবং মজার বিষয় হলো এই প্রশিক্ষণ যদি থাকে তাহলে এক বার, দুবারের পর বাচ্চাটি নিজেই দুধ মুখে নেওয়া শিখে যাবে।
প্রশ্ন : আপনি কী মনে করেন গর্ভাবস্থায় থেকেই ওই প্রশিক্ষণটি নেওয়া প্রয়োজন?
উত্তর : অবশ্যই প্রথম থেকেই যখন এন্টিনেটাল চেকআপ শুরু হয় তখন থেকেই মাকে এই বিষয়ে সচেতন করতে হবে। এন্টিনেটাল চেকআপের অংশ এখন স্তন পানের প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ শুধু মাকে করলে হবে না। বাবাকেও বোঝাতে হবে। মা , শাশুড়ি যারা সাথে থাকেন তাঁদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত করতে হবে।
প্রশ্ন : এই যে সপ্তাহব্যাপী এই দিবস পালিত হচ্ছে- এর মধ্যে কী এটাও থাকে মা-বাবা এবং আত্মীয়স্বজনকে প্রশিক্ষিত করা?
উত্তর : এটাই তো মূল বিষয়। একটি বিষয় থাকে মায়ের খাবারটা সঠিক দাও। বাচ্চাকে অন্য কোনো খাবার না দিয়ে মায়ের বুকের দুধ দাও। আর মাকে এমন একটা সুস্থ পরিবেশ দাও যাতে সে তার বাচ্চাটাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারে।
আপনি যদি হিসেব করে দেখেন প্রায় চারশ কোটি টাকার বিদেশি দুধ বাংলাদেশে আমদানি হয়। যদি অর্থনৈতিক দিকটি বিবেচনা করেন তাহলে দেখেন মাতৃদুগ্ধ পান কতটা সাশ্রয়ী।
এ ছাড়া বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাতৃত্বকালীন ছুটিও ছয় মাস করে দিয়েছেন। তবে অনেকে এই আইনটি যথাযথভাবে পালন করে না।
প্রশ্ন : একটি বাচ্চা মায়ের দুধ খাওয়ার মাধ্যমেই ভালো আছে এটি তার কোন কোন কার্যক্রমের মাধ্যমে মা-বাবারা বুঝতে পারবেন?
উত্তর : বাচ্চার একটি প্রবণতা থাকে সে ক্ষুধা লাগলে কাঁদে। যখন সে কাঁদবে না স্বভাবতই আমরা ধরে নেব তার খাওয়াটা ঠিক হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখতে হবে তার নিচের কাপড় যদি ভেজা থাকে এবং অন্য কোনো অসুবিধা যদি থাকে তাহলেও সে কাঁদবে।
আরেকটি বিষয় হলো বাচ্চার বৃদ্ধির চার্ট যদি পর্যবেক্ষণ করি, সপ্তাহে সপ্তাহে, মাসে মাসে তার কতটুকু বৃদ্ধি হচ্ছে সেটা দেখলে খুব সহজেই আমরা সেটা বুঝতে পারি।
একটা কথা এখন বলা হয় কোনোভাবেই যেন একজন বাচ্চা তার একবছর হওয়া না পর্যন্ত ১০ কেজি না পার করে।
সব মায়ের প্রতি আমার অনুরোধ, একবার ভাবুন আপনি তো নিশ্চই সেরাটিই আপনার বাচ্চার জন্য করবেন, তাহলে কেন আপনার কাছে ওই সেরা জিনিসটি থাকতে সেটা দেবন না।