গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিসে নিয়মিত চেকআপ জরুরি
গর্ভাবস্থায় অনেকেরই ডায়াবেটিস হয়। আবার অনেকের আগে থেকেই ডায়াবেটিস থাকে এবং পরে গর্ভধারণ করে। এ সময় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে এটা শিশুমৃত্যুর কারণ হতে পারে। আজ ১৭ জুলাই এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৯৯তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন উত্তরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি এবং অবস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. পারুল জাহান।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের বিষয়টি কী?
উত্তর : গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের মধ্যে একটি হলো প্রেগনেন্সি ইনডিউসড ডায়াবেটিস। গর্ভধারণের আগে তার ডায়াবেটিস ছিল না। গর্ভধারণের পর ডায়াবেটিস ধরা পড়ল। একে জিডিএমও বলা হয়।
আরেকটি দল রয়েছে যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস ছিল, পরে গর্ভধারণ করেছে।
প্রশ্ন : প্রেগনেন্সি ইনডিউস ডায়াবেটিস বা জিডিএম কীভাবে বুঝবে?
উত্তর : প্রথম যখন নারীটি আমাদের কাছে আসে মূল কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়। যেমন : রক্তের গ্রুপ, হিমোগ্লোবিন। তার সঙ্গে রক্তের শর্করাটাও মাপা হয়।
গর্ভাবস্থার প্রথমে অনেক সময় ডায়াবেটিস ধরা পড়ে না। তখন সে ভাবে তার হয়তো ডায়াবেটিস নাই। তাই পুনরায় পরীক্ষাটি করাতে হবে। সবার জানা দরকার, ডায়াবেটিস পরেও হতে পারে ২৪ থেকে ৩০ সপ্তাহের মধ্যে।
প্রশ্ন : পরীক্ষার বিষয় তো গাইনোকোলজিস্টের ওপরে বর্তায়.........
উত্তর : হ্যাঁ উনিই করবেন। যার ডায়াবেটিস হলো তার তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। কিছু কিছু থাকে। যেমন ডায়াবেটিস হলে বারবার ইনফেকশন হতে পারে, ইউরিন ইনফেকশন, সাদাস্রাব হতে পারে, ভেজাইনাল ইচিং হতে পারে।
পাশাপাশি এ সময় বাচ্চাটা বড় হয়ে যায়। তার জন্য মায়ের ওজনটা বেশি হয়। এ ছাড়া যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে তবে জন্মগত অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। এমনকি কোনো কারণ বোঝার আগে বাচ্চা পেটে মারাও যেতে পারে।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় যদি ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তাদের প্রতি আপনাদের পরামর্শ কী থাকে?
উত্তর : প্রথম যখন ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, আমরা ধারণা করি তার পরিবারে এই সমস্যা থাকতে পারে। আগের গর্ভধারণ হয়তো তার বাচ্চা পেটে মারা গেছে বা বাচ্চা বড় হয়েছে বা অস্বাভাবিক বাচ্চা হয়েছে এ রকম ইতিহাস থাকে- এ ধরনের ঘটনা যদি ঘটে তাহলে আমরা ভাবতে পারি আগের গর্ভধারণের বেলায়ও এ ধরনের ঘটনা ছিল।
সুতরাং এবার আরো সচেতন থাকতে হবে। রক্তে শর্করা বেড়ে যাচ্ছে কি না এর পরীক্ষা করতে হবে। যদি ধরা পড়ে তাহলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যদি রক্তের শর্করা একেবারে নিযন্ত্রণে রাখা যায়, তাহলে সমস্যা হওয়ার কোনো কথা না।
প্রশ্ন : নিয়ন্ত্রণের জন্য কী করবে?
উত্তর : মেডিকেশন দিই। এর আগে পরামর্শ দিই। খাবারের একটা তালিকা দিই। প্রোটিন খেতে পারবে, তবে কার্বোহাইড্রেট কম খাবে। নির্দিষ্ট ব্যবধানে খাবে। দিনে ছয়বার খাওয়ার কথা বলা হয়। তিনবার প্রধান খাবার খাবে।
তিনবার হালকা খাবার খাবে। খাদ্যতালিকার পাশাপাশি হালকা ব্যায়াম করতে হবে। এরপরও যদি নিয়ন্ত্রণ না হয় আমরা তাদের ওষুধ দিতে বলি। মুখের ওষুধের ক্ষেত্রে মেটফরমিন দেওয়া হয়। এ ছাড়া সবচেয়ে ভালো ইনসুলিন দেওয়া। প্রতিবার প্রধান খাবারের আগে যদি ইনসুলিন দিই এবং প্রসবের আগে যদি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে একেবারে ভালো থাকবে।
প্রশ্ন : ইনসুলিন নেওয়ার পরামর্শ কখন দেন?
উত্তর : যদি খাবার বা মুখে খাওয়ার ওষুধ কোনো কিছু দিয়েই নিয়ন্ত্রণ না হয়, সে ক্ষেত্রে ইনসুলিন দেওয়া হয়। এ জন্য নিয়মিত শর্করার মাত্রা দেখা খুবই প্রয়োজন। তাকে নিয়মিত চেকআপে থাকতে হবে। এমনকি কখনো আমরা রক্তের শর্করা মাপার যন্ত্র বাসায় কিনতে বলি।
আর যদি রক্তে শর্করার পরিমাণ খুব বেড়ে যায়, তাহলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ইনসুলিনের ডোজ বাড়িয়ে দিতে হয়। এটা উচ্চ ঝুঁকির গর্ভধারণের মধ্যে পড়ে যাবে। তাই তাকে আরো সচেতন থাকতে হবে। নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। কোনো ধরনের জটিলতা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। মায়ের তো বিভিন্ন জটিলতা থাকতে পারেই, পাশাপাশি বাচ্চারও জটিলতা তৈরি হতে পারে। আমরা সব সময় মাকে বলে দিই, বাচ্চা পেটে ঠিকমতো নড়াচড়া করছে কি না সেটি দেখার জন্য।
প্রশ্ন : জটিলতা তখনই হয়, যখন সে নিয়ন্ত্রণ না করে...।
উত্তর : হ্যাঁ ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য পরামর্শ নিতে হবে।
প্রশ্ন : যারা উচ্চ ঝুঁকিরপূর্ণ মা তাদের কতদিন পরপর চেকআপে আসার পরামর্শ দেন?
উত্তর : এমনিতে সাধারণ যে নিয়ম প্রথম তিন মাসে একবার এলো। এরপর মাসে মাসে একবার করে আসবে। ২৮ সপ্তাহের পরে ১৫ দিন পরপর আসবে। শেষ মাসে প্রতি সপ্তাহে আসবে। তবে এখানে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে চেকআপটা দ্বিগুণ করি। যেমন ১৫ দিন পরপর হয়তো আসার কথা তাকে সাতদিন পর এসে চেক করতে বলি। যাদের এক মাস পর আসার কথা, তাদের ১৫ দিন পর আসতে বলি।
প্রশ্ন : অনেকে ভয়ে থাকেন বাচ্চাটি জন্মের পর এই ডায়াবেটিসের কোনো প্রভাব থাকে কি না?
উত্তর : যে ডায়াবেটিস গর্ভধারণের সময়ই হচ্ছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একবারে ডায়াবেটিস হয়ে যেতে পারে। সে জন্য আমরা বলি প্রসবের পরও বিষয়গুলোতে খেয়াল রাখতে। পরবর্তী গর্ভধারণেও এই সমস্যা হতে পারে। বিষয়গুলোতে খেয়াল রাখতে হবে।
এমনকি যদি বাচ্চাটি পেটে থাকতে মা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখে, তাহলে সেই শিশুটি বড় হয়ে দ্রুত ডায়াবেটিকই হতে পারে।