বিষণ্ণতা নিয়ে কথা বলা : কেন প্রয়োজন?
কিছুদিন আগে পালিত হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, ‘বিষণ্ণতা : চলুন কথা বলি’। কেন এই কথা বলা? তাতে উপকার কী? এ বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৭১৯তম পর্বে কথা বলেছেন ড. তানিয়া রহমান। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে সোশ্যাল ওয়ার্ক প্রোগামের পরিচালক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : বিষণ্ণতার সঙ্গে লেটস টক বিষয়টি কেন- সেটি একটু বুঝিয়ে বলুন?
উত্তর : বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্য সাংঘাতিক রকমভাবে ক্রাইসিস (সংকট) হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা যাচ্ছে, আমরা বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে বিষণ্ণতা হলো একটি বড় সমস্যা। কেবল আমাদের দেশেই নয়, সব দেশেই দেখা যাচ্ছে বিষণ্ণতা এত বেশি প্রচিলত যে এর ধারাবাহিকতা অনেক খারাপ। যারা বিষণ্ণতায় ভুগছে, তাদের মধ্যে আত্মহত্যা করার একটি প্রবণতা আছে। বিষণ্ণতা থেকে সাংঘাতিক রকমের পারিবারিক ভাঙন শুরু হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে বা যেকোনো ধরনের কাজকর্মে সে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। ভায়োলেন্সও হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সমস্যা দেখা যাচ্ছে। আগে আমরা বলতাম, শারীরিক কারণেই বোধ হয় মানসিকভাবে অসুস্থ হই। পরে দেখা যাচ্ছে মানসিক কারণ থেকে এই জিনিসগুলো বেশি আসছে।
ওষুধ দিলে, অ্যান্টি ডিপ্রেশন ওষুধ দিলে সমস্যা ভালো হয়ে যাচ্ছে। তবে কথা বলার বিষয় কেন আসছে? কারণ, আমাকে উৎসটা খুঁজে বের করতে হবে। এই বিষণ্ণতার উৎস হতে পারে পরিবার। বিষণ্ণতার উৎস হতে পারে তার কর্মক্ষেত্রের কোনো সমস্যা, ব্যর্থতা। এই সমস্যার সূত্র হতে পারে মা- বাবার সমস্যা, যেটা বাচ্চাদের চিন্তিত করে। আবার এই বিষণ্ণতার উৎস বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হতে পারে, তার বইয়ের পড়ার বোঝা। তার বিনোদনের অভাব।
ছোট্ট বাচ্চার ক্ষেত্রে বলা হয় ওদের আবার কিসের বিষণ্ণতা? তবে ওদের অনেক বিষণ্ণতা রয়েছে। বাচ্চাদের ওপর কিন্তু সব কিছু আমরা চাপিয়ে দিচ্ছি। তার নিজস্বতা বলতে কিছু থাকছে না। এ্ক সময় দেখা যাচ্ছে বাচ্চার যে সৃজনশীলতা এই জিনিসগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে বিষণ্ণতা আসে। একেকটি পর্যায়ে এক এক রকম বিষণ্ণতা আসে। এই জন্য আমরা বলছি ‘লেটস টক’। কথা বলার বিষয়টি আসছে। কোন পর্যায়ে বিষণ্ণতাটা কোন কারণে হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে? ছোট বাচ্চাদের বিষণ্ণতার কারণ কী? বয়োঃসন্ধিদের বিষণ্ণতার কারণ কী? আমরা যখন মধ্য বয়সে থাকি, মধ্য বয়সের কারণ কী? আবার প্রবীণ মানুষ, তাদের মধ্যেও বিষণ্ণতা দেখা দেয়। বলা হচ্ছে, তাদের আবার বিষণ্ণতা কী? তখনো দেখা যায় বিষণ্ণতা। একেকজনের বিষণ্ণতার কারণ একেক রকম।
আমরা কিছু আগে জানতাম না যে ছোট বাচ্চাদের বিষণ্ণতা হতে পারে। আমরা জানি না যে প্রবীণদের বিষণ্ণতা হতে পারে। আমাদের দেখতে হবে বিষণ্ণতার উৎস কোথায়? কোন পর্যায়ে কোন জায়গা থেকে আসছে। একে যদি আমরা নির্ণয় করতে পারি এবং এই সম্পর্কে যদি সচেতনতা বাড়াতে পারি, পুরোপুরি না হলেও যদি একে কমিয়ে আনতে পারি, তাহলে দেখা যাবে আমাদের বিষণ্ণতা কমে যাবে।