গর্ভাবস্থায় স্ক্রিনিং কেন জরুরি
ট্রিপল মার্কার স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরের তিনটি হরমোনকে দেখা হয়। এর ফলে শিশুটির ক্রোমোজোমালভাবে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি না সেটি বোঝা যায়। আজ ৩০ মে এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৫১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ফোরসাইট প্রিনেটাল ক্লিনিকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. লুবনা ইসলাম।
প্রশ্ন : ট্রিপল মার্কার এই বিষয়টি কী? এবং প্রিনেটাল স্ক্রিনিংয়ের সাথে এর সম্পর্ক কী শুরুতেই জানতে চাই।
উত্তর : ট্রিপল মার্কার হলো, আমরা মায়ের শরীরে তিনটি হরমোন দেখি গর্ভাবস্থায়। যেই মায়ের স্ক্রিনিং পজিটিভ বা স্ক্রিন উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে তাদের এটি করা হয়। যেটা বিশ্বের সব দেশেই হয়, নিয়মিত পরীক্ষা হিসেবেই হয়। যেই গর্ভাবস্থাগুলো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে অ্যান্টি স্ক্যানে। তাদের জন্য একটু ভালোভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ট্রিপল মার্কার করা হচ্ছে। তার মানে অ্যান্টি স্ক্যানে যদি কোনো উচ্চ ঝুঁকি ধরা পড়ে সেই ক্ষেত্রে পরবর্তী পর্যায়ে ট্রিপল মার্কার পরীক্ষা করা হয়।
এটি ১৯৮০ সাল থেকে চালু হয়। কিন্তু ট্রিপল মার্কারের স্পর্শ কাতরতাটা একটু কম, এটি প্রায় ৭০ শতাংশ। অ্যান্টিস্ক্যান হলো নিউক্যাল ট্রান্সলুসিন্সি স্ক্যান। এটি আপনাকে একটি স্পর্শকাতর প্রতিবেদন দেবে। যার সঠিকতা (একিউরেসি) পরিমাণ হলো ৯০ শতাংশ। তবে ট্রিপল মার্কারের সঠিকতার পরিমাণ হলো ৭০ শতাংশ। তিনটি মার্কার বিটা এইট সিজি, অ্যালফা ফিটোপ্রোটিন এবং আনকনজুগেটেট এসট্রিওল। রক্তের পরীক্ষার প্রতিবেদন আবার আমরা একটা সফটওয়্যারের মধ্যে দিই। ওটা একটা স্লাইডিং স্কেলের মতো করে একটা গ্রাফ আসে, আমরা হরমোনগুলোর মাত্রা দেখে বোঝার চেষ্টা করি যে গর্ভাবস্থাটি ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতা থেকে নিরাপদ না কি উচ্চঝুঁকিতে আছে। ক্রোমোজোমাল মানে ডাউন সিনড্রম, ট্রাইজোমি থার্টটিন , এইটটিন। শিশু শারীরিক প্রতিবন্ধী হতে পারে বা বাচ্চাটির ও রকম হওয়ার আশঙ্কা আছে, এমনটা যদি দম্পতি বুঝতে পারে তার এ রকম একটা অস্বাভাবিক বাচ্চা হওয়ার আশঙ্কা আছে এবং এরপরও এই বাচ্চাটাকে সে চাচ্ছে তাহলে তারা প্রস্তুতি নিতে পারেন মানসিকভাবে, এই পরীক্ষার মাধ্যমে।urgentPhoto
আর আগে দেখা যেত একটা পরিবারে ছয়-সাতজন ভাইবোন থাকত। কিন্তু আজকাল তো পরিবারের আকার অনেক ছোট হয়ে এসেছে। তিন ভাইবোনও এখন দেখা যায় না। আগে দেখা যেত একটি বাচ্চা অসুস্থ। অন্য ভাইবোনগুলো তাকে দেখছে। আর স্ক্রিনিংয়ের বিষয়টি তো তখন ছিলও না।
আরেকটি বিষয় বলব, এখন মা-বাবা উভয়ই চাকরিজীবী। আগে তো দেখা যেত মা-ই বেশির ভাগ সময় বাড়িতে থাকত। বাবা কাজ করত। অন্তত একজন দেখভালের লোক বাসায় ছিল। কিন্তু এখন আমাদের জীবনটা অনেক ছকে বাঁধা হয়ে যাওয়ায় ওই অবস্থাটিও আমাদের নেই। তাই সবাই চায় ছেলে হোক আর মেয়ে হোক যেন একটি সুস্থ বাচ্চা হয়।
প্রশ্ন : এই যে ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতার কথা বলছিলেন, তার মধ্য দিয়ে একটি বাচ্চার কোন কোন সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : ক্রোমোজোমাল যেমন অ্যান্টিস্ক্যান। এটির অনুসরণ হচ্ছে ট্রিপল মার্কার। এটি নির্ণয় করে ট্রাইজমি টুয়েন্টি ওয়ান বলে যা ডাউন সিন্ড্রম। তারপর ট্রাইজমি এইটটিন। ট্রাইজমি থার্টিনের অর্থ টার্নার সিনড্রম। নিউরাল টিউব সমস্যা যেমন, স্পাইনাল বাই ফিডা। আর কোনো বাচ্চার যদি বড় রকমের হার্টের সমস্যা থাকে। তাহলে সেটাও এই স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে আমরা ধরতে পারি।
প্রশ্ন : কোথায় গেলে এই সেবা পাওয়া যাবে?
উত্তর : এই সার্ভিসটা আমরা দিচ্ছি আমাদের বনানী শাখায়। রোড ১২। আমাদের ক্লিনিকটির নাম ফোরসাইট প্রিনেটাল ক্লিনিক। তা ছাড়া আমাদের ওয়েবপেইজ আছে www.foresiteprenetal.com। এখানে লগইন করলে আমাদের সব কিছু পাওয়া যাবে।
আমাদের দেশে রুটিন চেকআপ তো দূরের কথা, যারা এই রকম উচ্চঝুঁকির মধ্যে আছে তারাও এ রকম চেকআপে যায় না।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আমি অস্ট্রেলিয়ার পার্থে গর্ভবতী হই। আমার চিকিৎসক আমাকে কী করতে হবে তার সব কিছু বলে দিল। ওখানে আমি প্রথম অ্যান্টিস্ক্যান সম্বন্ধে জানলাম। তখন আমি চিকিৎসকের সঙ্গে একরকম তর্কই করলাম। কেননা আমি বিষয়টি নিয়ে জানতাম না। জানতাম সাধারণত এসব বিষয় করা হয় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মায়েদের ক্ষেত্রে। ৩৫ বছরের পর। আমার বয়স তখন ৩৫ বছর নয়। তখন চিকিৎসক আমাকে বলল একটা সময় ছিল কেবল বেশি বয়সকেই ঝুঁকিপূর্ণ বলা হতো। কিন্তু এখন ওই কথাটাকে কেউ আর মানে না। এ সময়ের কথা হচ্ছে সব গর্ভাবস্থা অবশ্যই স্ক্রিন করতে হবে।
আরেকটি বিষয় আমাদের জীবন-যাপনের ধরনও পরিবর্তন হয়েছে। এখন অধিকাংশ মেয়েরই ৩০ বছরের পরে বিয়ে হয়। তাই কেউই উচ্চঝুঁকির বাইরে নয়। তারপর পাশ্চাত্যের জীবনযাত্রার কিছু বিষয়ও আমরা নিজেদের মধ্যে নিয়ে এসেছি, যা আগে ছিল না।
প্রশ্ন : একটু কি আমাদের দর্শকদের জন্য বলবেন আসলে জীবনযাত্রার কোন কোন বিষয়গুলো এ বিষয়ে কাজ করছে?
উত্তর : ধূমপান, মদ্যপান, অনেকগুলো অ্যাবরশন, দেরিতে বিয়ে এগুলো। আবার ধরেন তালাকের হারও অনেক বেড়ে গেছে। তাই বিয়ের সংখ্যাও বাড়ছে। এগুলো এই সমস্যা হওয়ার কারণ। তবে এগুলো হলেও যে আপনার অস্বাভাবিক সন্তান হবে তাও না। তাই স্ক্রিনিং করাটা জরুরি। আর এই স্ক্রিনিং করলেই যে সব এ রকম ফলাফল আসবে তা নয়। হয়তো ১০০-তে দুটি আসবে। তবু আগে থেকে বোঝার জন্য এটি খুব জরুরি। কারণ এতে প্রস্তুতি নেওয়া যাবে।