করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিতবেন যেভাবে
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে অনেক দিন ধরেই থমকে আছে সারা বিশ্ব। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সংক্রমণের গতি এখনো ঊর্ধ্বগামী। বাইরে ভাইরাস আতঙ্ক, ভেতরে সন্ত্রস্ত ও ক্ষুধার্ত মানুষ। থমকে থাকা দেশগুলোতে অর্থনীতির চাকাও প্রায় অচল।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বিশেষজ্ঞরা যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন তা আমাদের কাছে পরিচিত হলেও অনেকেই এসব বিষয়ে অভ্যস্ত ছিলেন না। নিয়মনীতি বা বিবিধ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি অনেকের কাছেই খুব বেশি প্রয়োজনীয় ছিল না। কিন্তু প্রাণঘাতী ভাইরাসের আক্রমণে মানুষ মৃত্যুর শব্দ শুনে এই সময়ে যথেষ্ট শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকছেন।
ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজারের বরাত দিয়ে ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লকডাউনের পর্দা উঠে যাওয়ার পর আমাদের জীবন অবশ্যই আলাদা হবে। ভাইরাসের সঙ্গে মানুষের সে এক যৌথ জীবন। সে জীবনে ছন্দ ও পরিকল্পনা দুই-ই লাগবে। সতর্কতা মেনে এই সহাবস্থান না হলে জীবন আবার থমকে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
এই সময়ের মধ্যে কী কী জেনেছি এবং বুঝেছি, সেগুলো স্পষ্ট করা জরুরি। বিজ্ঞানকে সারথি মানতে হবে, গোঁয়ার্তুমি এবং রাজনীতির হিসাবকে নয়। বিজ্ঞানীদের মতে, করোনা-সাগরে আমাদের ভেলা নিয়ে ভেসে থাকতে হবে বহু দিন। ঝড় থেমে গেলে সব শান্তি, এমনটা ভাবার কারণ নেই। সরকার লকডাউন তুলে দিলেই ফের হৈ-হুল্লোড়ের জীবন কিন্তু বিপদ ডেকে আনতে পারে।
মনে রাখতে হবে, প্রতিটি মানুষের পথচলা সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। করোনা মোকাবিলার জন্য পুলিশ দিয়ে খুব বেশি দিন মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। মানুষের আত্মসচেতনতা ও আত্মনির্ভরতা আগামী দিনগুলোর ভালো-মন্দ নির্ধারণ করবে। এই সময়ে রপ্ত করা অনুশাসন আগামী দিনে আরো যথাযথভাবে মেনে চলতে করতে হবে। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। দলবদ্ধভাবে আড্ডা দেওয়ার সংস্কৃতি কয়েক বছর ভুলে যেতে হবে। মেনে চলতে হবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মও।
বলা যতটা সহজ, করা অবশ্য অতটা সহজ নয়। নিজের সঙ্গে কথা বলে এসব অভ্যাস রপ্ত করা প্রয়োজন। পরীক্ষিত তথ্যের ওপরে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞান স্থির করেছে, দুজন ব্যক্তির মধ্যে কমপক্ষে ছয় ফুট দূরত্ব রাখা বাঞ্ছনীয়।
অপরিচিত কারো সঙ্গে সাক্ষাতে আরো সতর্ক হতে হবে। বাস্তবে এগুলো প্রয়োগে অসভ্যতা নেই, বরং সবার কল্যাণের ইঙ্গিত রয়েছে। মনে রাখতে হবে, লকডাউন ওঠার পরই করোনা সংক্রমণের ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে অসতর্কতা কাল হবে। কাজের জায়গায় থার্মাল স্ক্রিনিং চালু রাখতে হবে। ন্যূনতম শরীর খারাপ হলে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে।
এদিকে করোনা ধরা পড়া যেন কোনো অপরাধ, এমন মনোভাবও দেখা যায় অনেকের মধ্যে। তাই কেউ কেউ উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও তা লুকিয়ে রাখছেন। শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তখন হাসপাতাল আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা ভাবছেন। কিন্তু বাঘ আসতে পারে ভেবে ভয়ে চোখ বন্ধ করে থাকলে সে এসে তো ঘাড়েই ঝাঁপাবে। বরং চোখ খুলে বাঘের সঙ্গে লড়তে হবে।
ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে মাস্কের ব্যবহার। করোনা হাঁচি-কাশির মাধ্যমেও ছড়ায়। তাই নিজেকে রক্ষা করা এবং অন্যকেও সংক্রমিত না করার বৈজ্ঞানিক কবচ এটি। মনে রাখা দরকার, নিয়ম করে মুখে রুমাল বেঁধে থাকলেই হবে না। নাক-মুখ ঢাকা দুই স্তরের আবরণী সম্পন্ন মাস্কের ব্যবহার করতে হবে। আমরা মানসিকভাবেও কিছুটা খামখেয়ালি জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তাই হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্বের নিয়ম আর ঘুমানোর সময় ছাড়া সর্বদা মাস্ক পরার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
জীবিকা ও মানসিক চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই থাকবে। তা সত্ত্বেও করোনার আবরণে পাল্টে যাওয়া পরিমণ্ডলের কথা মনে রাখতে হবে। যে শৃঙ্খলার জীবন গত কয়েক সপ্তাহে ভয় কিংবা ভক্তিতে আমরা রপ্ত করেছি, তাকে মাঝখানে রেখেই দরজা খুলে হাঁটতে হবে। করোনা-পরবর্তী পৃথিবীতে সবাই সবার থেকে ফারাক রেখে পথ চলবে। মাঝেমধ্যে আবার দরজা বন্ধের ডাক আসতে পারে, থাকতে হবে সেই মানসিক প্রস্তুতিও।