প্রায়ই ভুলে যাচ্ছেন? প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
কাজের ডেডলাইন, পরিবারের সদস্যের চেকআপের তারিখ, ক্রেডিট কার্ডের পিন, ইএমআই জমা করার তারিখ, নিজের জরুরি নথিপত্র, প্রিয় বন্ধুর জন্মদিন... প্রায়ই ভুলে যাচ্ছেন? খুব গুছিয়ে রেখেছেন যে জিনিসটা, সেটা খুঁজতেই নাজেহাল হতে হয় অনেক সময়ই? খুব দরকারি কিছু বিষয় মনে রাখতে পারছেন না?
এমনটা হয় বলে বাড়তি উদ্বেগের কারণ নেই। কারণ ভুলে যাওয়ার ‘অসুখ’ আজ ঘরে ঘরে। তবে বিভিন্ন বয়সে ভুলে যাওয়ার কারণ কিন্তু নানা রকম। সে ভুলে যাওয়ার প্রবণতাও স্বাভাবিকভাবেই আলাদা।
১০ থেকে ১৮ বছর বয়সে : অস্থিরমতি, দুরন্তপনা, নানা কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে রাখা এ সব কারণেই মূলত এই বয়সে মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেয়। ক্রনিক কোনো মস্তিষ্কজনিত অসুখ না থাকলে একাগ্রতার অভাবেই এই সমস্যা হয়।
১৯ থেকে ৬০ বছর : প্রতিদিনের নানা দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, বিভিন্ন কাজের ভার কাঁধে নিয়ে রাখা, কর্মজগতে প্রবেশ করার পর অনেকটা সময় অফিসেই কাটিয়ে ফেলায় লাইফস্টাইলের সমস্যার জন্যই এই সময় প্রয়োজনীয় জিনিস ভুলে যায় মানুষ। কেউ কেউ আবার অন্তর্মুখী হওয়ায় নিজের জগতে এতটাই মগ্ন থাকেন যে, বাইরের অনেক কিছুই তিনি মাথায় রাখতে পারেন না। তা থেকেই হয় সমস্যা।
৬০ বছরের ঊর্ধ্বে : মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করে এই বয়সে। মাঝেমধ্যেই ভুলে যাওয়ার সমস্যা তৈরি করলে তা কিন্তু ডিমেনশিয়ার লক্ষণ।
এ ছাড়া বেশ কিছু কারণে স্মৃতি কমে যায় :
- কোনো কারণে মাথায় কোনো আঘাত লাগলে আর তার ঠিকঠাক চিকিৎসা না হলে সমস্যা হতে পারে।
- দিনের পর দিন স্নায়ুর কোনো রোগের ওষুধ বা ঘুমের ওষুধ খেলে এই ধরনের প্রবণতা বাড়ে।
- শরীরে ভিটামিন কম থাকলে ভুলে যাওয়ার সমস্যা হয়।
- উচ্চমাত্রায় থাইরয়েড থাকলেও ভুলে যাওয়ার সমস্যা প্রকট হতে পারে।
টুকটাক ভুলে যাওয়াও কি এক ধরনের অসুখ?
মনোবিদদের মতে, তরুণ প্রজন্মের ভুলে যাওয়ার কারণ একসঙ্গে অনেক কিছু মনে রাখা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এটা ‘ইনফরমেশন ওভারলোড’। আজকাল এত কিছু মনে রাখতে হয় যে, অনেক সময়ই আমরা খেই হারিয়ে ফেলি। সেখান থেকেই ভুলে যাওয়ার শুরু। এ ছাড়া এসবের সঙ্গে যোগ হয় স্ট্রেস, অবসাদ, নানা দিক একা সামলানোর চাপ। এগুলো আজকাল খুব স্বাভাবিক। তাই অসুখ বলা যায় না। তবে যদি বারবার ভুলে যেতে থাকেন বা উত্তরোত্তর এই ভুলে যাওয়া বাড়তে থাকে, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
ডিমেনশিয়া ও অ্যালঝাইমার
বয়স্ক মানুষদের ভুলে যাওয়ার নেপথ্যে যে প্রধান দুই অসুখের কারসাজি, সে দুটি হলো ডিমেনশিয়া ও অ্যালঝাইমার। অনেক সময় বয়স্করা বাড়ির ঠিকানা বলতে পারে না। রাস্তা হারিয়ে ফেলে। এগুলো ডিমেনশিয়ার হাত ধরেই আসে। এই ডিমেনশিয়ারই একটি ‘টাইপ’ অ্যালঝাইমার। এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হলো ভুলে যাওয়া। রোগী সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কোনো কিছু ভুলে যেতে পারে। তবে দীর্ঘদিন আগের বিষয় মনে রাখে সহজে। ভুলে যাতে পারে গুরুত্বপূর্ণ দিন-তারিখ বা গোটা কোনো ঘটনাই।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে যদি দেখা যায়, রাস্তায় বেরিয়ে তারা পথ হারিয়ে ফেলেছে বা বাজারে গিয়ে মনে পড়ছে না কেন বাজারে এসেছে, এই লক্ষণগুলো ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক উপসর্গ বলে ধরা যেতে পারে।
স্মৃতিশক্তি বাড়বে কিসে?
সবুজ শাক, ইলিশ মাছ, পাম অয়েল এসবে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। তাই অনেকেই এসব খেয়ে বুদ্ধি তথা স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপদেশ দেন। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারণার তেমন বৈজ্ঞানিক তোনো ভিত্তি নেই। তারা বরং যোগাসন, মেডিটেশনে বেশি ভরসা করতে বলেন।
কোনো সৃজনশীল কাজে যুক্ত থাকলে একাগ্রতা বাড়ে। ফলে মনোযাগী হতে সুবিধা হয়।
বিশেষ করে গান বা বাদ্যযন্ত্র বাজালে মস্তিষ্কের কোষ বেশি সক্রিয় থাকে। তাই গবেষকদের দাবি, এসব কাজে মস্তিষ্ক বেশি সচল থাকে।
নিয়মিত ধাঁধাঁ, শব্দছকের সমাধান, সুডোকু, দাবা খেলা এসবের অভ্যাস বজায় রাখলেও মস্তিষ্ক সচল থাকে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা