‘চীন থেকে আসা মানুষের মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে’
চীন থেকে আসা পৌনে ছয় হাজার মানুষের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী। তবে সেই আশঙ্কা খুবই কম বলেও তিনি জানান।
মঙ্গলবার দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে সাইফ উল্লাহ মুন্সী এমন কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত পৌনে ছয় হাজার মানুষ চীন থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছেন। তাদের মাধ্যমে করোনাভাইরাসটি বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।’
সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘যেহেতু ভাইরাসটি শ্বাস-প্রশ্বাস বা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে, সেহেতু চীন থেকে আগতদের মাধ্যমে বাংলাদেশে যারা সুস্থ, তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। এই আশঙ্কা থেকে সরকার নানাবিধ ব্যবস্থাও নিয়েছে। চীন থেকে আসা মানুষকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। তাদের ভেতরে যদি কোনো ধরনের রোগের উপসর্গ ধরা পড়ে, তাহলে অবশ্যই তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’
ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, ‘যারা সম্প্রতি চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছে, তাদের বারবার সতর্ক করা যেতে পারে। তাদের ফোন নম্বর সরকারের কাছে অবশ্যই আছে। তালিকা করে করে তাদের এ সম্পর্কে বারবার বলা যেতে পারে। তাতে করে তারাও সচেতন থাকবে। আমাদেরও ঝুঁকি কমবে।’
১৪ দিনের বেশি সময় আগে যারা চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছে, তাদের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম জানিয়ে সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে এই ভাইরাসটির সুপ্তকাল দুই থেকে ১৪ দিন। যারা নভেম্বর বা ডিসেম্বরের দিকে বা ১৪ দিন আগে বাংলাদেশে এসেছে, তাদের মধ্যে থেকে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম। তাদের ভেতরে ভাইরাসটি থাকলে এতদিনে তার লক্ষণ দেখা যাওয়ার কথা। সে জন্যই বলছি আশঙ্কা কম। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘এটি নভেল করোনাভাইরাস। ভাইরাসটি চীনের উহান শহরের খাবারের দোকান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে। মূলত বাদুড় থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে। দোকানের বাদুড় বিক্রয়কর্মীদের মাধ্যমে প্রথমে এটি ছড়িয়েছে। পরে তাদের মাধ্যমে সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি শ্বাসযন্ত্রের প্রবাহজনিত ভাইরাস, যা শেষ পর্যন্ত মানুষকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত করে। এরই মধ্যে চীনের ২৮টি দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। মূলত ভাইরাসটির সূত্রপাত হয়েছে গত বছরের নভেম্বর থেকে। যদিও চীন স্বীকার করেছে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে।’
প্রতিরোধে করণীয়
তবে এই ভাইরাসকে নিয়ে চিন্তার চেয়ে সচেতনতা বেশি জরুরি জানিয়ে বিভাগীয় চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভাইরাসটি বাংলাদেশে ঢুকলে আমাদের চিন্তার কারণ হতে পারে। কারণ, আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা যে পর্যায়ে যাওয়া প্রয়োজন, সে পর্যায়ে নেই। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি বাংলাদেশে যদি ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে আমাদের এর থেকে মুক্তির জন্য করণীয় ঠিক করতে হবে। যদিও এখন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েনি। এই রোগের টিকা না থাকায়, প্রতিরোধই একমাত্র পথ। প্রতিরোধ করতে হলে, আমাদের হাত-মুখ ও চোখ নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। যখন আমরা বাইরে যাব, তখন সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। অধিক ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে যাওয়া যাবে না। আর যদি কোনো আক্রান্ত ব্যক্তিকে পাওয়া যায়, অবশ্যই তাকে কোয়ারেন্টাইন (আলাদা করে রাখা) করতে হবে।’
সাইফ উল্লাহ মুন্সী আরো বলেন, ‘এ ছাড়া গত ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত যারা চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছে, তাদের জ্বর থাকতে পারে, হাঁচি-কাশি থাকতে পারে বা পায়ে ব্যথা থাকতে পারে। চিকিৎসকদের উচিত হবে, তাদের সন্দেহের মধ্যে রাখা। এ ছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হ,বে তাদের রক্তে করোনাভাইরাস আছে কিনা। সরকার পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেছে। এই রোগের এখন পর্যন্ত কোনো টিকা তৈরি হয়নি। এর কোনো ওষুধও নেই। সুতরাং প্রতিরোধই একমাত্র উপায়।’
যাদের চীন থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, তাদের যৌক্তিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে এই চিকিৎসক বলেন, ‘এটি খুবই জরুরি সময়। এই মুহূর্তে আমাদের কিছু কিছু ঘাটতি আছে। এখন সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি করতে হবে। নাক-মুখ ও চোখ সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। এ ছাড়া ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। তবে ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে সেটা অনেকটা মুশকিল।’