প্রসূনের অভিনয়-যাত্রা
হতে চেয়েছিলেন পরিচালক, হলেন অভিনেত্রী। তিনি এ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রসূন আজাদ। ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিমের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন দুই বছর। এরপর ছোটছোট চরিত্রে অভিনয়েও করেছেন। ২০১০ নালে নিজের প্রথম অভিনীত নাটকের চরিত্র ছিল কাজের মেয়ের। নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন গিয়াসউদ্দিন সেলিম। প্রথম নাটকে কাজের মেয়ে হতে পেরেও বেশ উচ্ছসিত ছিলেন প্রসূন। বাসায় এসে বাবাকে নাটকে অভিনয়ের গল্প বার বার বলেছেন। তখনো ভাবেননি পুরোদস্তুর অভিনেত্রী হবেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে প্রসূনের জবাব ‘আল্লাহ্ আমাকে অভিনেত্রী বানিয়েছেন’। বাবার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ প্রসূন। বাবা অভিনয়ের জন্য অনেক প্রশ্রয় দিয়েছেন। কিন্তু মা একদম রাজি ছিলেন না। প্রসূনের মা র্যাব অফিসার। তাঁর ধারণা ছিল এই গাধা মেয়েকে দিয়ে আর যাই হোক অভিনয় সম্ভব না। ২০১২ সালে লাক্সে যখন প্রসূন যান তখন তাঁর মা সাউথ আফ্রিকায় একটা মিশনে ছিলেন। ঢাকায় ফিরে মেয়ের উত্থান দেখতে পান তিনি।
প্রসূন বলেন, ‘শুটিং করে রাতে ফিরি মা এটা পছন্দ করতেন না। প্রথম প্রথম খুব রাগ করতেন। বাবা রাতে বাসার দরজা খুলে দিতেন। আমি ঢুকতাম। তারপর বাবাসহ একসঙ্গে খেতাম। মা অনেক পরে এসব মেনে নিয়েছেন। বলতে পারেন আমি অনেক সুখী। মা-বাবার দুজনের সমর্থন এখন পেয়েছি।’
তিন দিন ধরে বিক্রমপুরে আলী সুজন পরিচালিত ঈদের টেলিফিল্ম ‘মন দরিয়ার নাঈয়া’তে কাজ করেছেন প্রসূন। আমিন খানের বিপরীতে কাজ করেছেন তিনি।
প্রসূন বলনে, ‘সিনিয়র অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করে অনেক আরাম। অনেক কিছু শেখা যায়। আর আমি তো প্রতিনিয়ত অভিনয় শিখছি। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মিশি আর তাদের চরিত্রগুলো বোঝার চেষ্টা করি। তাদের জীবনবোধ নিয়ে অনেক ভাবি। তাই যেকোনো চরিত্রের সঙ্গে সহজে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি।’
আগামী ২২ মে এস আই খান পরিচালিত প্রসূন অভিনীত ‘অচেনা হৃদয়’ ছবিটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে।
ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রসূন বলেন, “এটা আমার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। যদিও ‘সর্বনাশা ইয়াবা’ আগে মুক্তি পেয়েছে।”
‘অচেনা হৃদয়ের’ ছবির পরিচালক, সহকর্মী এ বি এম সুমন সবার এটা প্রথম চলচ্চিত্র ছিল। তাই কাজটা সবার জন্য ছিল চ্যালেঞ্জিং। এই চলচ্চিত্রের গল্পটি যে রকম আমি আসলে এই ধরনের চলচ্চিত্রের নায়িকা হতে চাই। খুব বেশি ছবিতে কাজ করতে চাই না। হাতেগোনা কয়েকটা ছবিতে কাজ করব যে কাজগুলো দর্শক নন্দিত হবে।
ছবিতে ‘অচেনা ছিলে চেনা পৃথিবীতে’ এই গানটির শুটিং যখন আমরা করি তখন অনেক শীত ছিল। মাওয়াতে পদ্মার চরে শীতের মধ্যে ঘাগড়া পরে আমি শুটিং করেছি। অনেক কষ্ট হয়েছিল।’
বাবাকে ফোন করে বলেছিলাম, ‘বাবা আমি আর অভিনয় করতে চাই না। অনেক কষ্ট হচ্ছে।’ বাবা তখন বলেছিলেন, ‘মা যে কাজটি শুরু করেছ সেটা শেষ করে তারপর বাড়িতে আসবে, এর আগে বাড়িতে আসতে পারবে না।’
সেদিন বাবার কথা শুনে মনোবল ফিরে পেয়েছিলাম। এখন শুধু কাজ করে যেতে চাই। পিছনে তাকানোর সময় নেই আমার।’
প্রসূনের প্রিয় অভিনেত্রী সূচিত্রা সেন। মজার ব্যাপার হলো সূচিত্রা সেনকে অনেক বড় হয়ে চিনেছেন প্রসূন। সূচিত্রা সেনের মতো করে অনেক ফটোগ্রাফার তাঁর ছবি তোলেন।
এ প্রসঙ্গে প্রসূনের জবাব, ‘তাদের হয়তো মনে হয় আমি সূচিত্রা সেনের মতো দেখতে তাই উনার মতো করে ছবি তোলেন। আমিও উপভোগ করি। মাঝে মাঝে মনে হয় সেই সময় জন্মগ্রহণ করলে ভালো হতো। তখনকার নায়িকাদের স্টাইল অনেক সুন্দর ছিল।’
ব্যস্ত অভিনেত্রী প্রসূন অবসরে কী করেন? এমন প্রশ্ন শুনে প্রসূনের উত্তর ‘প্রচুর বই পড়ি আর দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র দেখি।’