নাতনিদের জন্য অমিতাভের চিঠি
তিনি যে শুধু বলিউডের মহাতারকা ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় তা-ই নয়, অমিতাভ বচ্চন পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও বি টাউনে অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। দুই নাতনি নব্য ও আরাধ্যর জন্য একটি চিঠি লিখেছেন বিগ বি, সেটি ইন্টারনেটে পড়ে ভিডিও আপলোডও করেছেন। এনডিটিভির খবরে জানা গেল, এই চিঠি কেবল নিজের দুই নাতনি নয়, বরং প্রতিটি নারীর জন্যই অনুপ্রেরণার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে প্রকাশ করেছেন অমিতাভ।
ভিডিওটি এরই মধ্যে বেশ ভাইরাল হয়ে গেছে সামাজিক মাধ্যমে। এই চিঠিতে কেবল জ্ঞানের কথাই নয়, জীবনধারা আর ইচ্ছা অনুযায়ী চলার প্রতিও গুরুত্ব দিয়েছেন অমিতাভ। অন্যের কথা, নির্দেশনা বা পরামর্শে কান না দিয়ে নিজের ইচ্ছা, সিদ্ধান্ত এবং বিবেচনা অনুযায়ী জীবনের পথচলার কথা বলেছেন অমিতাভ।
নাতনিদের জন্য অমিতাভের চিঠিটি ছিল এমন—
আমার প্রিয় নব্য ও আরাধ্য,
তোমরা দুজনেই তোমাদের ছোট্ট কাঁধে খুব বড় দুটো পরম্পরা বয়ে চলেছ—আরাধ্য, তোমার প্রপিতামহ ড. হরিবংশ রাই বচ্চনের এবং নব্য, তোমার প্রপিতামহ শ্রী এইচ পি নন্দর। তোমাদের প্রপিতামহদের নাম তোমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে খ্যাতি, সম্মান এবং পরিচিতি বড় করে তুলেছে।
তোমরা দুজনেই নন্দ বা বচ্চন, এ পরিচয় বহন করছ বটে, সঙ্গে কিন্তু তোমাদের আরেকটা বিশেষ পরিচয় রয়েছে! তোমরা মেয়ে, নারী! আর যেহেতু তোমরা নারী, এ কারণেই মানুষ তাদের চিন্তা আর সীমাবদ্ধতার ধারণা তোমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। তারা তোমাদের বলবে যে কীভাবে পোশাক পরতে হবে, কেমন আচরণ করতে হবে, কাদের সঙ্গে তোমরা দেখা করতে পারবে আর কোথায় তোমরা যেতে পারবে। মানুষের এহেন বিচারাচারের ছায়ায় কখনোই জীবনযাপন করবে না। তোমাদের নিজেদের চিন্তা আর জ্ঞানের আলোয় নিজেদের পছন্দ নির্ধারণ করবে। তোমার স্কার্টের মাপ তোমার চরিত্র নির্ধারণ করে দেবে—কাউকেই এমন চিন্তা তোমাদের মাথায় আরোপ করতে দেবে না। কাদের সঙ্গে তুমি বন্ধুত্ব করবে, এ ব্যাপারে কারো পরামর্শ আমলে নেবে না। তুমিই নির্ধারণ করবে, তুমি কাদের বন্ধু হবে। তুমি বিয়ে করতে চাও—এই ইচ্ছা ছাড়া অন্য কোনো পরিস্থিতি বা প্রয়োজনে কখনোই বিয়ে করো না।
লোকে কথা বলবেই। তারা অনেক ভয়াবহ কথাও হয়তো বলবে। তার মানে তো এই নয় যে তোমার সবার কথা শুনতে হবে। ‘হায় হায় লোকে তাহলে কী বলবে’—এ রকম বিষয় নিয়ে কখনোই মাথা ঘামাবে না। দিনশেষে তোমার কাজের ফলাফলের মুখোমুখি হতে হবে তোমাকেই, কাজেই অন্য কাউকে তোমার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেবে না।
নব্য—তোমার নামের সঙ্গে যে পদবিটি রয়েছে, সেটি কিন্তু তোমাকে জীবনের জটিলতা থেকে একেবারে আড়াল করে রাখতে পারবে না। এগুলোর মোকাবিলা তোমাকে করতে হবে, কারণ তুমি একজন নারী।
আরাধ্য—তুমি সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই অনেক কিছু দেখবে এবং শিখবে। আমি হয়তো তখন থাকব না, তবে যা আমি আজ বলছি, সেগুলো তখনো প্রাসঙ্গিক থাকবে।
হয়তো এই পৃথিবীটা একজন নারীর জন্য জটিল এক স্থান। তবে আমি বিশ্বাস করি যে তোমাদের মতো নারীরা একে বদলে দিতে পারবে। হয়তো ব্যাপারটা সহজ হবে না, এই নিজের গণ্ডিটা ঠিক করা, নিজের পছন্দ নিজে ঠিক করা, মানুষের বিচারের ঊর্ধ্বে গিয়ে জীবনযাপন করা। কিন্তু তোমরা, তোমরাই তো প্রতিটি নারীর জন্য ভিন্ন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারো।
তোমরা এই কাজটাই করো। আর তাতে আমি সারা জীবনে যা কিছু করেছি, তার চেয়েও বড় কাজ হবে। তখন অমিতাভ বচ্চন হিসেবে নয়, বরং তোমাদের দাদা হিসেবেই নিজেকে আমি ঢের গর্বিত মনে করব।
সমস্ত ভালোবাসাসমেত,
তোমার দাদাজি… তোমার নানা