সায়রাও আমার মতো হবে : বাঁধন
এ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। এই মুহূর্তে বাঁধনের চারটি ধারাবাহিক নাটক বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে। তাঁর অভিনীত ‘দলছুট প্রজাপতি’, ‘সাপলুডু’ ও ‘ঘোমটা’ নাটক বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। সম্প্রতি আরো একটি নতুন ধারাবাহিক নাটক ‘মেঘে ঢাকা শহর’-এর কাজ শেষ করেছেন তিনি।
শুধু ধারাবাহিক নাটকে এত বেশি অভিনয় করছেন কেন? এই প্রশ্ন করতেই বাঁধন বলেন, ‘আমার জন্য ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করাই অনেক বেশি সুবিধার। কারণ আমি সকাল থেকে শুটিং করে রাত ৮টায় বাসায় ফিরি। এর পর কখনই কাজ করি না। খণ্ড নাটকগুলোতে অভিনয় করে আমি আরামও পাই না। কারণ খণ্ড নাটকগুলোতে তিন দিনের কাজ দুই দিনে শেষ করা হয়। তখন কাজ অনেক রাত পর্যন্ত করা হয়। আমার সময় অনুযায়ী নির্মাতাদের কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়। তাই ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। খণ্ড নাটক একেবারেই যে করছি না তা নয়। সবকিছু ব্যাটে-বলে মিলে গেলেই করছি। কিছুদিন আগে দুটি কাজ করেছি। তবে নাটকগুলো কবে প্রচারিত হবে তা জানি না।’
এখন ধারাবাহিক নাটকের দর্শক কম বলে অনেকে দাবি করছেন। আপনার কী মনে হয়? এমন প্রশ্ন শুনে বাঁধন বলেন, ‘আসলে নাটক কম দেখার অনেক কারণ আছে। প্রথম কারণ হলো সময় স্বল্পতা। মানুষ এখন অনেক ব্যস্ত। তাই তারা নাটক দেখার জন্য ইউটিউবের ওপর বেশি নির্ভরশীল। আর দ্বিতীয় কারণ হলো নাটকের ফাঁকে অনেক বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়। মাঝে মাঝে আমারও দেখার ধৈর্য থাকে না। কারণ এত বিজ্ঞাপন কেন দেখাবে? আর একটা ব্যাপার হলো নাটকের গল্প ও চিত্রনাট্য। এখন অনেক নাটকের চিত্রনাট্য অনেক দুর্বল।’
নিজের অভিনীত নাটক মেয়ে মিশেল আমানী সায়রাকে নিয়ে দেখতে পছন্দ করেন বাঁধন। এ প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন, “আমি বাংলা নাটক, ছবি, ইংরেজি ছবি, হিন্দি সিরিয়াল সবই দেখি। আমার কাজগুলোও সব দেখার চেষ্টা করি। কারণ আমার মঞ্চ ও অভিনয়ের কোনো ভিত্তি নেই। আমি দেখে দেখে অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করি। সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করেও অনেক কিছু শিখেছি। আমি সব সময় শিখতে চাই। সায়রাকে নিয়ে যখন নাটক দেখি তখন ও খুব আগ্রহ নিয়ে আমার নাটক দেখে। ও পর্দায় সব সময় আমাকে দেখতে চায়। ‘ওই দেখ আমার মা...’ বলে চিৎকারও করে। আমার ভীষণ ভালো লাগে তখন। তবে সায়রাকে নিয়ে কান্নায় অভিনীত কোনো দৃশ্য দেখা যায় না। আমাকে পর্দায় কাঁদতে দেখলে ও কান্না শুরু করে। কোনোভাবেই ওর কান্না থামানো যায় না।”
আপনি নিজেকে সব সময় পরিপাটি করে রাখেন। ছোটবেলা থেকে কি সাজগোজ পছন্দ করতেন? প্রশ্ন শুনে হাসলেন বাঁধন। হাসি থামিয়ে বললেন, “কথা সত্যি। আমি ছোটবেলা থেকেই অনেক আগ্রহ নিয়ে সাজগোজ করতাম। সব সময় টিপটপ ছিলাম। স্কুল, কলেজ এমনকি মেডিকেল কলেজে পড়ার সময়ও আমি অনেক পরিপাটি হয়ে ক্লাসে যেতাম। মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় আমি ফার্স্ট স্টুডেন্ট ছিলাম। কলেজে অনেক বাধা ছিল এভাবে সাজা যাবে না, ওভাবে সাজা যাবে না। আমি কিন্তু ঠিকই সাজতাম। অনেক শালীন ছিলাম। আমার শিক্ষকরা এ বিষয়ে কখনো বিরক্ত হননি। বরং শিক্ষকরা অন্য শিক্ষার্থীদের বলতেন, ‘তোমরা তো পড়াশোনাও ভালো করে কর না, আবার নিজেকে গুছিয়েও রাখতে জান না। তাহলে করটা কী বাসায়? কিন্তু বাঁধনকে দেখ, ও এত ভালো স্টুডেন্ট আবার অনেক গোছানো।’”
আপ্যায়ন ও রান্না করতে অনেক পছন্দ করেন বাঁধন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘আমি মানুষের প্রশংসা করতে যেমন পছন্দ করি তেমনি রান্না ও অতিথি অ্যাপায়ন করতেও ভালোবাসি।’
নিজে ডিজাইন করে কাপড় বানান বাঁধন। কীভাবে একসঙ্গে এত কিছু করেন জিজ্ঞেস করতেই বাঁধন বলেন, ‘আমি কম টাকার কাপড় হলেও নিজেই ডিজাইন করতে পছন্দ করি। নিজেকে সব সময় আলাদা পোশাকে দেখতে ভালো লাগে। একটু কষ্ট হলেও সবকিছু নিজেই করি। বলতে পারেন আমি অনেক স্বাধীন। বোরকা পরে মিরপুর ১১ তে গিয়ে শপিংমল ঘুরে ঘুরে কিনে নিয়ে আসি নিজের পোশাকের কাপড়। তারপর সেটা ডিজাইন করে বানাই।’
অভিনয়, পড়াশোনা, ঘর-সংসার এত কিছু একসঙ্গে করছেন। কীভাবে সামলান এসব? প্রশ্ন শুনে বাঁধন বলেন, ‘আমি নিজেকে কখন শুধু মেয়ে হিসেবে বেঁধে রাখতে চাইনি। আমি সুন্দর এটা নিয়ে আমি গর্ব করি। কিন্তু মেয়েদের সৌর্ন্দযকে অনেক মানুষ অপরাধে রূপান্তর করে। সুন্দর মেয়েদের বাড়তি সুবিধা দিতে চায়। আমি কখনো এই সুবিধাগুলো নেইনি। এত দূর আসতে আমি অনেক কষ্ট ও সংগ্রাম করেছি। আমার মেয়েকেও সুশিক্ষায় বড় করে তুলছি। আশা করি সায়রাও আমার মতোই হবে।’
‘দলছুট প্রজাপতি’ নাটকের সেটে, কাজের ফাঁকে এসব কথা বলছিলেন বাঁধন। ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা ৬টা বাজে। ৮টার মধ্যেই বাঁধনকে ফিরতে হবে বাড়ি। কারণ বাসায় মেয়ে সায়রা একা। কাজেই আলাপ শেষ করতে হলো। ধন্যবাদ দিলে বাঁধন উল্টো ধন্যবাদ দিলেন আমাদেরকেও।