ছবির ছবি তোলার কারিগর রনি
ছবিতে ক্যামেরার সামনে যাঁরা কাজ করেন, আমরা তাঁদের চিনি সহজেই। অনেক সময় ছবি দেখার আগে আমরা পোস্টার দেখে অনুমান করতে চাই যে ছবিটি কেমন হবে। ক্যামেরার পেছনের মানুষরাই কিন্তু এই ছবি তোলার কাজটি করেন। এমনই এক আলোকচিত্রী রফিকুল ইসলাম রনি। এনটিভি অনলাইনের সাথে কথায় জানালেন চলচ্চিত্রে ফটোগ্রাফি এবং ফটোগ্রাফারের আদ্যোপান্ত।
প্রশ্ন : একটি চলচ্চিত্রে একজন স্টিল ফটোগ্রাফারের কাজ কী?
রনি : বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের মার্কেটিং হয় এই স্টিল ফটোগ্রাফি থেকে। একটি ছবির পোস্টার করতে লাগে প্রচুর ছবি। আড়াই ঘণ্টার একটি ছবিতে পরিচালক তাঁর গল্পটা বলেন, আর আমাদের এই আড়াই ঘণ্টার ছবিকে নিয়ে আসতে হয় একটি পোস্টারের মধ্যে। দর্শক যেন একটি পোস্টার দেখে বুঝে নিতে পারে যে এই ছবিতে কী আছে। একইভাবে, বিলবোর্ড বা ছোট স্টিকার, সব জায়গাতেই ফটোগ্রাফি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন : শুধু কি পোস্টার, বিলবোর্ড বা স্টিকারের জন্যই ছবি তোলা হয়?
রনি : ছবির শুটিংয়ের আগে আমাদের নির্ধারণ করতে হয় আমরা কোথায় শুটিং করব। পরিচালকের সাথে লোকেশনে গিয়ে ছবি তুলে সেগুলো টিমের সবার সাথে বসে লোকেশন ঠিক করা হয়ে থাকে। ধরেন, শাকিব খান বাসা থেকে কক্সবাজার যাচ্ছেন, যাওয়ার সময় তাঁর কী পোশাক ছিল সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রথম দৃশ্যটি হয়তো আমরা এফডিসিতে শুটিং করেছি। টানা ১০ দিন শুটিং করে আমরা কক্সবাজারে গেলাম। শাকিবের কক্সবাজারে যাত্রা করার দৃশ্য নেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় দিন। তারপর আমরা আরো আটদিন শুটিং করলাম, তারপর গেলাম কক্সবাজার। কিন্তু শাকিব কক্সবাজারে কোন পোশাক পরে বাস থেকে নামবে? এটা মনে রাখা সম্ভব না যদি স্থিরছবি না থাকে। আবার মারামারি, মানে অ্যাকশনের সময় জামা ছিঁড়ে যায়, রক্ত বের হয়- তার অনেকদিন পরে হয়তো মিলন হলো, মানে ছবির শুটিংয়ে তো এমন হয় আর কি! এমন সময় কোন ড্রেসে কোথায় ছেঁড়া ছিল, কোথায় রক্ত ছিল; সেগুলো একটু ভুল হলেই দর্শক ছবি দেখবে না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ক্যামেরার পেছনে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কোনোকিছুই মনে রাখার অবস্থা থাকে না। এই স্টিল ফটোই তখন একমাত্র সম্বল।
প্রশ্ন : আপনি কীভাবে এই পেশায় যুক্ত হলেন?
রনি : আমি বড় হয়েছি সিলেটে। তারপর ঢাকার টঙ্গীতে পড়ালেখা করেছি। ছোটবেলা থেকে চলচ্চিত্রে কাজ করার ইচ্ছা ছিল। তারপর ২০০১ সালে স্বনামধন্য ফটোগ্রাফার আইয়ুব আকন্দ স্যারের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়। তিনিই আমাকে হাতে ধরিয়ে কাজ শিখিয়েছেন। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হচ্ছে, ছয়দিনের মাথায় তিনি আমাকে একা ছবি তোলার অনুমতি দেন। এ পর্যন্ত একশর বেশি ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করেছি। আর নিজে ফুল ফটোগ্রাফার হিসেবে ৪৭টি ছবির কাজ করেছি।
প্রশ্ন : আপনার এই কাজটি পেশা হিসেবে কেমন? নতুন যাঁরা কাজ করতে চান, তাঁরা কীভাবেএই পেশায় যুক্ত হতে পারেন?
রনি : কিছুদিন আগেও চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো ছিল না। এখন কিন্তু অনেক ছবি হচ্ছে। আমি বলব এ পেশায় অর্থ ও সম্মান দুটোই আছে। আমরা প্রতিটি ছবিতে ৪০ থেকে ৪৫ দিন কাজ করে পাই ৮০-৯০ হাজার টাকা। আমার গুরু আইয়ু্ব আকন্দের মতো ফটোগ্রাফাররা পান প্রায় দেড় লাখ টাকা। আর নতুন যাঁরা কাজ করতে চান, তাঁদের বলব ক্যামেরার প্রতি প্রেম থাকতে হবে। ক্যামেরার প্রতিটি অপশন তাঁর জানতে হবে। বাংলাদেশে যেহেতু এই বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো পড়ালেখার ব্যবস্থা নেই, তাই কাজ করতে করতেই কাজ শিখতে হবে।
প্রশ্ন : এ পেশায় পরিশ্রম কেমন? এর ভবিষ্যৎ কেমন বলে আপনার ধারণা?
রনি : অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয় এই লাইনে, সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা। নিজের জন্য সময় বলে কিছু থাকে না। আবার কাজের প্রয়োজনে কখনো পাহাড়ে উঠতে হয়, আবার পানিতে নামতে হয়। খুব খেয়াল রাখতে হয় কারণ একটা দৃশ্য শেষ হয়ে গেলে, এই ছবি আর পরে তোলা যাবে না। আর কোন ছবিটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা একজন ফটোগ্রাফারকেই লক্ষ রাখতে হয়। ভবিষ্যতে এর বাজার আরো বড় হবে,পারিশ্রমিকও বাড়বে। যাঁরা ভালোবেসে কাজটি করতে চান, আবার পরিশ্রমও করতে পারেন দিনরাত, তাঁদের জন্যই এই কাজ।