আলো থেকে অন্ধকারে পাকিস্তানি সুপারমডেল আয়ান
পাকিস্তানের সুপারমডেল আয়ানের হয়তো এখন থাকার কথা ছিল প্যারিস কিংবা লন্ডনের কোনো জমকালো ফ্যাশন শোতে। গ্ল্যামারের এই অভিজাত দুনিয়ায় র্যাম্প ওয়াকে এক নামে জনপ্রিয় এই লাস্যময়ী তরুণী। কিন্তু এখন তিনি বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন রাওয়ালপিন্ডির অন্ধকার আদিয়ালা জেলহাজতে। হিন্দুস্তান টাইমসের খবর বলছে, দোষী সাব্যস্ত হলে ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর। কিন্তু কেন এই পরিণতি। তার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসবে গ্ল্যামার-জগতের অন্ধকার এক চেহারা।
ঝলমলে গ্ল্যামার দুনিয়ায় আলোর ঝলকানিতে ঢাকা পড়ে তার ক্রুর আদল। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ক্যারিয়ার শুরু করা আয়ান তাঁর নৃশংস রূপ দেখে ফেললেন অনেক বেশি মূল্য দিয়ে। আন্তর্জাতিক খ্যাতি, ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে তুমুল চাহিদা, ক্যারিয়ার—সব এখন তাঁর হিসাবের উর্ধ্বে চলে যাওয়ার উপক্রম। শুধু তাই নয়, তাঁর পরিবারও এখন বিপদে।
মাত্র ২৩ বছর বয়সী আয়ান আলির গল্পটাকে বিস্ময়করই বলতে হয়। দুবাইয়ে জন্ম হলেও জাতীয় পরিচয়ে তিনি পাকিস্তানি। পাকিস্তানের মতো রক্ষণশীল দেশে ফ্যাশন মডেলিংয়ে ক্যারিয়ার ঠিক বড় মাপে গড়া সম্ভব নয়। এ জন্যই উচ্চাভিলাসী এই তরুণীর নজর ছিল বাইরের বিশাল দুনিয়ার দিকে। কিশোরী বয়সে ক্যারিয়ার শুরু করলেও খুবই অল্প সময়ে নিজের নামের আগে ‘সুপারমডেল’ টাইটেলটি যোগ করে ফেলেছেন। আলোচনা ছিল, মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের হয়ে প্রতিনিধিত্বও করতে পারেন তিনি। তবে গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে পাকিস্তানের কোনো ধরনের ফ্যাশন শো বা ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেননি আয়ান।
গল্পের শুরুটা সুন্দর, কিন্তু গল্পের শেষ হতে না হতেই সেখানে ঢুকে পড়েছে কদর্য সত্য। গ্ল্যামার-জগতের সাথে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী কিংবা প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের সম্পর্ক তো চিরন্তন! টাকার মোহেই হোক কিংবা ভিন্ন কোনো চাপে পড়েই হোক, এমনই বেশ কিছু মানুষের অবৈধ টাকা নিয়মিত বিদেশে পাচার করতেন আয়ান। দুবাই, আবুধাবি, লন্ডন, জার্মানি, ফ্রান্স, রোমানিয়া আর ইতালিতে প্রায়ই যাতায়াত ছিল তাঁর। গত ১৪ মার্চ অবৈধভাবে পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার নিয়ে দুবাইগামী প্লেনে ওঠার সময় ইসলামাবাদে গ্রেফতার হন তিনি। এই অর্থ তাঁর নিজের নয়, কোনো বিত্তশালী ব্যবসায়ী বা রাজনীতিবিদের কালো টাকা, যা তিনি দুবাইয়ে পাচারের ব্যবস্থা করছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে এরই মধ্যে আয়ান তাঁদের বেশ কয়েকজনের নাম বলেছেন। আয়ানের দাবি, প্রভাবশালীদের নির্দেশে তিনি বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করছিলেন বাধ্য হয়ে। দিনকয়েক আগে তাঁর বাবাকেও গুলি করেছে দুর্বৃত্তরা।
গ্রেফতার হওয়ার পর আদালতে জামিনের আবেদন করলেও সেই আবেদন একেবারে বাতিল করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সুতরাং জেলহাজতে আয়ানের সময়টা দীর্ঘ হবে বলেই ধরে নেওয়া যায়।
রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা ভয়ংকর এক কারাগার হিসেবে পরিচিত। ডাকাতি, দুর্নীতি থেকে শুরু করে খুনের আসামিতে ছড়াছড়ি সাড়ে চার হাজার কয়েদির এই কারাগার। এদের মধ্যে আলাদা কোনো ব্যবস্থাপনায় রাখা হবে না আয়ানকে।