শাকিব খানের নায়িকা রোদেলার সঙ্গে একদিন
নায়িকার ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ল বইয়ের তাক। তাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে হুমায়ূন আহমেদ, উইলবার স্মিথ থেকে তসলিমা নাসরিনের বই গা-লাগিয়ে সাজানো। রয়েছে অভিনয়শিল্পবিষয়ক বই ‘দেহের ভাষা’ও। মুহূর্তের আলাপেও টের পাওয়া গেল বেশ পড়াশোনা করেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যার থলেও পূর্ণ—মালয়েশিয়ার লিমককউইং ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি থেকে পিএইচডি করছেন। আর কিছুদিন পরই নামের আগে ভারী শব্দ ‘ড.’ যোগ হবে। তবে নির্ভার তিনি। হাস্যোজ্জ্বল। স্নিগ্ধ দেহবল্লরী, তাতে নায়িকা শব্দটির উত্তাপ নেই।
যাঁকে নিয়ে এই সূচনাকথন, তিনি রোদেলা জান্নাত। আর কিছুদিন পরই মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘শাহেনশাহ’। শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত এ ছবিতে সুপারস্টার শাকিব খানের সঙ্গে জুটিবেঁধে ঢালিউডে হতে চলেছে রোদেলার অভিষেক। অবশ্য ছবির আরেক নায়িকা নুসরাত ফারিয়া। এক নায়ক, দুই নায়িকার গল্প।
তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা। বিপণনবিদ্যাও ঢের। একটি বেসরকারি চ্যানেলে কয়েক মাস সংবাদ পাঠও করেছেন। অভিনয়ে কেন? রোদেলা জানালেন, শখের বশে। তবে রোদেলার মায়ের তরফে জানলাম, মেয়ের চাইতেও বিনোদন দুনিয়ার প্রতি দুর্বার আকর্ষণ তাঁর। মেয়েকে নায়িকারূপে দেখতে চান।
রোদেলার বাবা বড় ব্যবসায়ী। মা গৃহিণী। গ্রামের বাড়ি বরিশালে। মা ঢাকার মেয়ে। বনেদি পরিবার। রোদেলার অনুরোধেই আমরা তাঁর গাড়িতে বসলাম। এরপর রাজধানীর রাস্তায় চলতে শুরু করল শীতাতপ গাড়ি। সঙ্গে চলল আমাদের খোশগল্প।
নায়িকার কাছে জানতে চাইলাম, স্বপ্ন দেখেন? যেন হাসির তরঙ্গ উঠল রোদেলার সর্বাঙ্গে। সেই ঢেউ গাড়ির কাচে আছড়ে পড়তেই বললেন, ‘গতরাতেই তো দেখলাম। দেখলাম অনেক বর্ণিল বিছানার চাদর। চাদর সরাচ্ছি আর চিন্তা করছি কোন চাদরটা কিনব।’ এবার একটু চোখ বুজলেন। তারপর পাপড়ি মেলে ফের হাসি। বললেন, ‘স্বপ্ন সাদাকালো হয়। কিন্তু আমি সব কালারফুল চাদর দেখেছি।’
মধ্যদুপুর। ছুটছে রোদেলার গাড়ি। চাদরের স্বপ্নের পরই জানতে ইচ্ছে হলো, বিয়ের কথা ভাবছেন কি না। প্রশ্ন তুলতেই পাশ থেকে রোদেলার মায়ের টিপ্পনি, ‘একটা বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করতে পারে না, আবার বিয়ে!’ বেশ হতাশার ভঙ্গিতে রোদেলা বললেন, ‘পাচ্ছি না তো। আমি চাই প্রেমিক যেন আমাকে বুঝতে পারে, যত্নশীল হয়। এ দুটো গুণই তো কারো মধ্যে পাই না!’
রোদেলার প্রিয় রং সাদা। কেন? সেও ব্যাখ্যাও দিলেন। ‘সাদা স্নিগ্ধ রং। যেকোনো পরিবেশেই সাদাকে ভালো লাগে। সকালেও ভালো লাগবে, আবার রাতে পার্টিতে গেলেও ভালো লাগবে।’ পোশাকে অবশ্য বাছবিচার নেই। সব ধরনের পোশাকই পরেন। তবে স্বাচ্ছন্দ্য জিন্স আর টপে।
এরই মধ্যে আমরা পৌঁছে যাই উত্তরার দিয়াবাড়ি। রোদেলার প্রিয় সাদার রাজ্যে। বিস্তৃত কাশবনে। তবে বড্ড বেরসিক শারদ দুপুর। কড়া রোদ। নায়িকার নামের সঙ্গেও মেলে। ঘরে তাঁকে ‘রোদ’ বলেই ডাকে। ঘাম জমল রোদের কপালেও। বললেন, ‘আমি রোদেলা জান্নাত। গরম তো জাহান্নাম বানিয়ে ছাড়ল!’
বেশ কিছুক্ষণ চলল রোদেলার ফটোশুট। কাশবন, নির্মাণাধীন কোনো প্রকল্পের কোলঘেঁষে, আবার ঘাসময় খোলা দিগন্তে। দিচ্ছেন নানা ভঙ্গির পোজ। শাড়ি আর টপে চলল রোদেলার মুহূর্তবন্দি। রোদেলার চেহারায় সারল্য আছে। প্রাণবন্ত। সদা হাস্যোজ্জ্বল। লালরঙা ঢেউটিনের দেয়ালের সামনে দাঁড়াতেই আমরা উষ্ণ ভঙ্গি দিতে বললাম। রোদেলা উচ্চৈস্বরে হেসে বললেন, ‘আমার চেহারায় সেই হটনেস নেই। একদম হবে না।’
দেখুন ভিডিওতে :
দেশে রোদেলার প্রিয় নায়ক শাকিব খান। আর প্রথম ছবিতেই তাঁর সঙ্গে পর্দা ভাগাভাগি। শাকিবের হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আসা। দারুণ উচ্ছ্বসিত তিনি। কিন্তু কীভাবে আলাপ শাকিবের সঙ্গে? জানালেন, মালয়েশিয়ায় প্রথম দেখা হয়েছিল। ওই দেশেই তো তিনি গবেষণা করছেন। মালয়েশিয়ায় ‘শিকারি’ ছবির প্রচারণায় গিয়েছিলেন শাকিব। সেখানেই পরিচয়। এরপর আলাপ। আরো পরে তাঁর ছবিতে সুযোগ। এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন ‘শাকিবের নায়িকা’ হিসেবে।
শাকিবের সঙ্গে শুটিং সেটের অভিজ্ঞতাও দারুণ। রোদেলা বললেন, ‘সহ-অভিনেতা হিসেবে শাকিব খান খুবই কো-অপারেটিভ ছিলেন। অনেক সহযোগিতা করেছেন। সিনিয়র হিসেবে যথেষ্ট দেখভাল করেছেন। ক্যামেরার সামনে এটা আমার প্রথম কাজ ছিল—এত বড় প্রজেক্ট, যে প্রেরণাটা দরকার ছিল, তা ওনার কাছ থেকে পেয়েছি।’
ছবির আরেক নায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে ‘কিউট একটা মেয়ে’ বললেন রোদেলা। ‘সেটে আমরা অনেক মজা করেছি। নাচ-গানেও অনেক মজা হয়েছে। ওনার সঙ্গে ভালো সময় কেটেছে,’ যোগ করেন রোদেলা।
এবার চা পানের বিরতি। রোদেলা আইসক্রিম খেলেন। হঠাৎ বৃষ্টি এলো ক্ষণিকের অতিথির মতো। আস্তে করে বললাম, ‘এর আগে তো খবর বেরিয়েছিল গোপনে বিয়ে সেরে ফেলেছেন। সাবেক প্রেমিকের ব্যাপারে কিছু বলবেন?’ রোদেলা হাসলেন। বললেন, ‘প্রেম ছিল। ভেঙে গেছে। স্যাড পার্ট। বিয়ের গুঞ্জন মিথ্যা। আমি খুব স্বচ্ছ মানুষ। কোনোকিছু বলতে আপত্তি নেই। আপনি যে এর আগে গোপন কিছু বলতে বলেছিলেন, খুঁজে পাইনি। সত্যিই আমার গোপন কিছু নেই।’
‘শাহেনশাহ’ ছবিতে রোদেলার চরিত্রের নাম ‘প্রিয়া’। বাস্তবের মতো ছবিতেও বিত্তশালী পরিবারের মেয়ে। বললেন, দর্শক ছবিটি দেখে মজা পাবে। সম্পূর্ণ বিনোদনধর্মী ছবি। আরো বললেন, প্রথম ছবি। সিনেপ্রেমীরা যেন তাঁর পাশে থাকেন। নিজেকে প্রমাণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে চলেছেন। ‘শাহেনশাহ’ মুক্তি পাচ্ছে আগামী ৪ অক্টোবর।
আমরা দূর আকাশের দিকে তাকালাম। রংধনু দেখে চিৎকার করে উঠলাম। সেই উল্লাসশব্দ ছড়িয়ে পড়ল বিস্তৃত দিগন্তে।