‘নোলক’ দর্শক রিভিউ : যে কারণে দশে আট দেব
কাহিনি : দুই ভাই গ্রামে বসবাস করেন। পারিবারিক সূত্রে তাঁদের অগাধ সম্পদ। দুই ভাইয়ের অনেক জায়গা-জমি, টাকা-পয়সা থাকলেও হাতে তেমন কোনো কাজ নেই। দুই ভাই একে-অপরকে খুবই ভালোবাসেন। তাদের দুজনকে ‘পরামর্শ’ দেওয়ার জন্য দুজন উপদেষ্টাও রয়েছেন।
বড়ভাইয়ের ছেলে শাওন সব-সময় বন্ধুদের নিয়ে হৈ-হুল্লোর করে সময় কাটান। অন্যদিকে ছোটভাইয়ের মেয়ে কাজলও বান্ধবীদের নিয়ে ব্যস্ত দিন পার করেন। শাওন ও কাজলের মধ্যে কথার লড়াই ও ঝগড়াঝাটি লেগেই আছে। কিন্তু পারিবারিক একটি বৈরিতা এই দুজনকে কাছে টেনে আনে। আবার শাওন-কাজলের সম্পর্ককে কেন্দ্র করেও বাড়তে থাকে দুই ভাইয়ের দূরত্ব। এর মধ্য দিয়েই ছবিটির কাহিনি এগিয়ে যায়। যদিও ছবিটি শেষ দৃশ্য আপনাকে কাঁদিয়ে ছাড়বে নিশ্চিত।
পরিচালনা : ‘নোলক’ ছবিটির নায়ক শাওন ও নায়িকা কাজলের চরিত্র দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। বিশেষ করে কাজলের মেকআপ-পোশাক সবকিছুই ছিলো অসাধারণ। আর অন্যদিকে গ্রামের ছেলে হিসেবে শাওনের চরিত্রটি ছিল বেশ মানানসই। শাওনের বন্ধুবান্ধব এবং তাঁদের দূরন্তপনাও বেশ আনন্দ দিয়েছে।
বড়ভাই, ছোটভাই, তাঁদের স্ত্রী ও উপদেষ্টাদের চরিত্রগুলো সিনেমাতে জুতসই লেগেছে। সিনেমার লোকেশন ছিলো চমৎকার। বিশেষ করে তালুকদার বংশের যেমন বাড়িঘর হওয়া দরকার তেমনই অভিজাত্য ফুটে উঠেছে। আর চলচ্চিত্রটির গানগুলোর লোকেশন ও দৃশ্যায়ন চমৎকার হয়েছে।
অভিনয় : শাওনের চরিত্রে শাকিব খান ও কাজলের চরিত্রে ববি অভিনয় করেছেন। এই ছবিতে শাকিব ও ববির জুটি আপনাকে মুগ্ধ করেই ছাড়বে। তাঁদের দুজনের দৃশ্যগুলো আপনার হাসির খোরাক এবং রোমন্টিকতা এনে দিতে পারে।
বড়ভাইয়ের চরিত্রে তারিক আনাম খান এবং ছোটভাইয়ের চরিত্রে রজতাভ দত্ত অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া দুই উপদেষ্টার চরিত্রে আছেন শহীদুল আলম সাচ্চু ও সুপ্রিয় দত্ত। তারিক আনাম ও রজতাভ দুজনেই ভাইয়ের চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন।
কিছু কথা : সিনেমাটিতে মৌসুমী-ওমর সানি জুটিকে কেন নেওয়া হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। কারণ তাঁদের চরিত্র ছিল খুবই দুর্বল। কাহিনীতে তাদের তেমন কোনো ভূমিকাই ছিল না। তবে মৌসুমী ও ওমর সানিকে আরেকটু কাহিনিতে নেওয়া যেত।
তারিক আনাম খানের আরেকটু ভালো করার সুযোগ ছিলো, শেষ দৃশ্যটা দেখে আমার এমনটা মনে হয়েছে। এ ছাড়া বিয়ের পরে শাকিব ও ববির কিছু দৃশ্য থাকলে আরো ভালো লাগত। তবে ‘নোলক’ চমৎকারভাবে একটি পারিবারের কাহিনিকে তুলে ধরেছে। পরিবারে মানুষের মানসম্মান, অর্থবিত্ত থেকে শুরু করে সামাজিক মর্যাদা সবকিছুই থাকে। তবুও হঠাৎ কী যেন একটা ভর করে এসব সুখের সংসারে, যার কারণে ভেঙে যায় পরিবারগুলো। আর কিছু মানুষ থাকে যারা এসব সুখ নষ্ট করে দেয়। এরকম সুন্দর একটি কাহিনি ছবিটিতে দেখতে পাবেন। ছবিটিতে সামাজিক সচেতনতার একটি বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
প্রতি বছরই ‘নোলক’ ছবিটির মতো বা অন্যকোনো কাহিনিনির্ভর বাংলা ছবি তৈরি হোক। তবে একটা-দুইটা না, অসংখ্য বাংলা ছবি তৈরি হওয়া চাই, যাতে দর্শকরা হলমুখী হয়। আর সিনেমার কাহিনি, নায়ক-নায়িকা এবং পরিচালনা ভালো হলে অবশ্যই দর্শক হলে আসবে। বেঁচে থাকুক বাংলা সিনেমা, জয় হোক বাংলা সিনেমার।
সবশেষে বলি, শাকিব ও ববি জুটির আরো ছবি দেখতে চাই। এই জুটির নতুন নতুন সিনেমা তৈরি হলে অবশ্যই দর্শক স্বাচ্ছন্দে গ্রহণ করবেন। এসব কারণেই ‘নোলক’কে আমি দশের মধ্যে আট দেব।