সাবেক স্বামীর কাছ থেকে ‘হত্যা’র হুমকি পেয়েছেন মিলা!
সংগীতশিল্পী মিলা গান নয়, ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনা নিয়ে নিয়মিত এখন খবরের শিরোনাম হচ্ছেন। সাবেক স্বামী পারভেজ সানজারীর সঙ্গে মিলা তাঁর তিক্ত সম্পর্কের কথা নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন বহুবার।
পারভেজ সানজারীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ অনেক আগেই করেছিলেন মিলা। এবার জানালেন , সানজারী তাঁকে নাকি হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। এ বিষয়ে আজ শনিবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মিলা লিখেন, ‘আমার নিজের জীবনের ওপর হুমকি আছে। সানজারী নিজেই মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে আমায় হুঁশিয়ার করেছে সে তার নিজের অস্ত্র দিয়ে যখন তখন আমায় হত্যা করবে। এ কথাটা সে আমার সাবেক সেনা অফিসার বাবাকেও জানাতে দ্বিধা করেনি।এত কিছুর পরও আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অন্যায় হুমকির কাছে মাথা নত করব না। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। পাশাপাশি আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আবারও সঙ্গীতের প্রতি মনোযোগী হবো। খুব শিগগিরই আপনারা আপনাদের প্রিয় মিলার নতুন গান শুনবেন। আমার পথচলায় আমি ঠিক যেভাবে আপনাদের সহযোগিতা এবং ভালোবাসা পেয়েছি তা আগামীদিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। আমার ও আমার পরিবারের জন্যে দোয়া করবেন। আপনাদের সবার প্রতি পবিত্র রমজানের আগাম শুভেচ্ছা।’
এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে মিলা বলেন, ‘আমি এত দিন বাড়ির বাইরে বের হতে ভয় পাইনি। এখন পাচ্ছি, কারণ আমি হত্যার হুমকি পেয়েছি।’
এদিকে, মিলা ফেসবুকে তাঁর সাবেক স্বামী সানজারীকে নিয়ে আরো বলেন, ‘একজন ব্যক্তি যখন নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে ভেবে সীমাহীন বেপরোয়া হয়ে ওঠে, যখন তাকেই অনৈতিকভাবে আশকারা দিতে থাকে কিছু মহল, তখন নিশ্চয়ই বিবেকবান যে কেউ প্রতিবাদী হবেই। প্রতিটি সমাজেই একটি নির্দিষ্ট নিয়মনীতি আছে। আধুনিকতা মানুষকে শুধু অগ্রসারয়মান হতেই শেখায় না, আধুনিকতা মানুষকে শিষ্টাচারী হতেও সাহায্য করে। ইংরেজিতে ‘ফ্যামিলি ভেল্যুজ’ বলে একটা শব্দ আছে যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় পারিবারিক মূল্যবোধ। আমাদের সমাজে পারিবারিক মূল্যবোধ বিরাজমান বলেই আমরা একটি নির্দিষ্ট প্রথার ভেতর বসবাস করি। আর এ কারণেই সমাজ অজস্র মন্দ বিষয় থেকে মুক্ত থাকে।
প্রতিটি বিবাহিত দম্পতির ক্ষেত্রে একে-অপরের প্রতি বিশ্বস্ত হওয়া একান্তই আবশ্যিক। এটা না থাকলে পারিবারিক মূল্যবোধ ভেঙ্গে পড়বে – ধ্বংস হয়ে যাবে সমাজ। আর এর ফলে আক্রান্ত হবে গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা। বিয়ে মানেই হচ্ছে একটি এমন অঙ্গীকার যা আজীবন স্বামী স্ত্রী রক্ষা করেন যেকোনো কিছুর বিনিময়ে। আমাদের মতো পুরুষ শাসিত সমাজে স্বামী-স্ত্রী’র মাঝে দাম্পত্য বোঝাপড়া এবং সুখ বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুরুষ বা স্বামীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। কোনো কারণে যদি ওই স্বামীই হয়ে ওঠে দূরাচারী, সে যদি নিজের স্ত্রীর মর্যাদাকে তুচ্ছজ্ঞান করে ক্রমাগতভাবে প্রিয়তমা স্ত্রীকেই প্রবঞ্চিত করতে থাকে। যদি স্ত্রীর অজ্ঞাতে জড়াতে থাকে একের পর এক পরকীয়ায়, তাহলে ওই দম্পতির, বিশেষ করে স্ত্রী’র মানসিক অবস্থাটা কেমন হয়, সেটা আপনারা সবাই জানেন এবং বোঝেন। আমাদের এই দেশে প্রতিনিয়ত স্বামীদের এ ধরনের অন্যায় আচরণের শিকার হচ্ছেন নারীরা। এসিডে ঝলসে দেওয়া হচ্ছে প্রবঞ্চিতা স্ত্রীদের – নারীদের। সভ্যতার এই সময়ে এসে এমন জঘন্য পরিস্থিতির কষ্ট শুধু ভুক্তভোগীরাই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন।
আপনারা জানেন, আমি এস এম পারভেজ সানজারী ওরফে লেলিনকে ২০১৭ সালে বিয়ে করি। কিন্তু আমি হতবাক হয়ে লক্ষ করি, সানজারী বিয়ের পর থেকেই কেমন যেন অচেনা আচরণ করতে থাকে। সে প্রায়ই বিভিন্ন লোকের সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে ফোনে কথা বলত। আমি জানতে চাইলে সে শুধু মারমুখীই হতো না বরং নিয়মিতভাবেই আমার ওপর চালাত অবর্ণনীয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।’
সানজারী মিডিয়ার অনেক অভিনেত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলছেন বলে দাবি মিলার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সানজারী মিডিয়ার অনেক অভিনেত্রী ও কণ্ঠশিল্পীদেরও মিথ্যে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নষ্ট করেছে এবং এখনো করছে। আবার এমন কিছু বিতর্কিত অভিনেত্রীও আছে, যারা টাকা কিংবা অন্য কিছুর লোভে ইচ্ছে করেই সানজারীর সাথে সম্পর্ক গড়েছে – দৈহিক মেলামেশাও করেছে এবং এখনো করছে। আমি জানি না, ওই সব অভিনেত্রীর স্বামীরা ঠিক কোন পর্যায়ের নির্লজ্জ – নাকি ওনারা অসহায় সেটাও জানি না। তা না হলে, নিজের স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ার কথা এমনকি ওই পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হওয়ার ঘটনা জানার পরও ওরা কেন নিশ্চুপ আছেন আমি বুঝি না। কখন-কখনো আমার এমনটাও সন্দেহ হয়, ওইসব স্বামী নামধারী কূলাঙ্গারগুলো হয়তো ওদের অভিনেত্রী স্ত্রীদের বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবেই ব্যবহার করছেন। হয়তো আমার অনুমান ভুল নয়।
সানজারীর সব অপকর্ম, এমনকি দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ নানা কার্যকলাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে সে আমার সম্পর্কে নানা বানোয়াট কথাবার্তা বলে মিডিয়াকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে। সে বলে বেড়াচ্ছে আমি নাকি তাকে তার বাবা-মা-কে ত্যাগ করার শর্ত দিয়েছি। কি জঘন্য মিথ্যাচার! আমার কাছে প্রমাণ আছে সানজারীর মায়ের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল এবং তিনি বহুবার আমায় বলেছেন ওনার ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে। কোন পর্যায়ে গেলে একজন তাঁর নিজের সন্তান সম্পর্কে এমন কথা বলতে বাধ্য হন সেটা বিবেচনার ভার আপনাদের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি।’
মিলার পরিবারের ভাবমূর্তি সানজারী নষ্ট করছেন বলে জানান তিনি। মিলা বলেন, ‘সানজারী আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে ক্রমাগত কূটসা রটাচ্ছে এবং আমার পরিবারের ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা দেশের প্রচলিত আইনেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমি বিশ্বাস করি দেশের বিবেকসম্পন্ন সাংবাদিক বন্ধুরা এসব মিথ্যাচারে কান দেবেন না।এস এম পারভেজ সানজারী ওরফে লেলিন-এর অর্থ লিপ্সা সম্পর্কে আমি আগেই বলেছি। তার বাধহীন নৈতিক চরিত্র সম্পর্কেও অনেক কথাই আগে বলেছি, যদিও আমার কাছে বলার মতো আরো অজস্র প্রমাণ আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ের প্রতি আপনাদের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি। একজন ক্যাপ্টেন এবং বিমান বাহিনী’র সাবেক অফিসার হওয়ার সুবাদে সানজারীর বিমানবন্দরের অতি স্পর্শকাতর এলাকাসহ সেনানিবাস এলাকায় অবাধ বিচরণ আছে। সে কিছু সেনা অফিসারের স্ত্রীর সাথেও অনৈতিক কার্যকলাপ করেছে বলে ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ আমাকেই জানিয়েছেন। এমন একজন ব্যক্তি কেবল সেনানিবাসগুলোয় বসবাসরত পরিবারগুলোর জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং এমন অর্থলোভী নৈতিকতা বিবর্জিত ব্যক্তিকে দিয়ে যেকোনো ধরনের ভয়ঙ্কর কাজ করানোও অসম্ভব নয়। সে এমনকি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসহ খোদ ভিভিআইপিদের জন্যও যেকোনো সময় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ বিষয়টি এরই মাঝে আমি সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি। এখন এটা আর কেবলমাত্র আমার ব্যক্তিগত ইস্যু নয় – বরং নিঃসন্দেহে এটি এখন জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সম্পৃক্ত বিষয়।’
১০ বছর প্রেমের পর ২০১৭ সালের মে মাসে পাইলট পারভেজ সানজারীকে বিয়ে করেন মিলা। অথচ বিয়ের মাত্র ১৩ দিন পরই তাঁদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এরপর বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের।