‘প্রকৃতির মাঝেই মিশে আছে ফরীদি’

Looks like you've blocked notifications!

আজ পয়লা ফাল্গুন। আজকের এই দিনে ২০১২ সালে সকাল ১০টায় ধানমণ্ডিতে নিজের বাসায় মারা যান বাংলাদেশের শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। মৃত্যুর এত বছর পরও হুমায়ুন ফরীদিকে স্মরণ করেন বন্ধু, দেশের আরেক গুণী অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ।

বন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাইসুল ইসলাম আসাদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ফাল্গুনের প্রথম দিনটি এলেই বিশেষ করে ফরীদির কথা মনে পড়ে। মনে হয় পাখির সঙ্গে গান গাইছে। আবার ফুলের রঙে মিশে আছে। তাঁর হাস্যোজ্জ্বল মুখটি চোখের সামনে ভেসে উঠলেই মনে হয়, এই প্রকৃতির মাঝেই মিশে আছে ফরীদি।’

আসাদ আরো বলেন, ‘নাটক, সিনেমা প্রতিটি বিষয়ে ফরীদি ছিল সফল। নায়ক হিসেবে যেমন সফলতা পেয়েছে, তেমনি খল অভিনেতা হিসেবেও শক্তিশালী অবস্থনে ছিল। কমেডি চরিত্রের জন্য সে ছিল অনুকরণীয়। সে যে চরিত্রেই অভিনয় করুক না কেন, সেটা অভিনয় মনে হতো না। নিজেকে সাবলীলভাবে পর্দায় উপস্থিত করত। অভিনয়কে কীভাবে জীবন্ত করে উপস্থাপন করতে হয়, তা জানত সে। বাস্তব জীবনেও ফরীদি অনেক সাবলীল ছিল।’

নতুন শিল্পীদের উদ্দেশে আসাদ বলেন, ‘হুমায়ুন ফরীদি ছিল আমাদের আইকন। আমাদের সময়ের সবাই তার অভিনয় থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। নতুন যারা কাজ করছে তাদের বলব, ড্রেসআপ-গেটআপে কীভাবে নিজেকে চরিত্রের মতো করে তৈরি করে নিতে হয়, তা হুমায়ুন ফরীদিকে দেখলে বুঝতে পারবে। ফরীদির মধ্যে অনেক ভালো গুণ ছিল, যা অনুকরণ করার মতো।’

১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যচর্চার পুরোধা ব্যক্তিত্ব নাট্যকার সেলিম আল দীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন তিনি।

১৯৭৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নাট্য উৎসব আয়োজনেরও প্রধান সংগঠক ছিলেন ফরীদি। এ উৎসবের মধ্য দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্গনে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি গড়ে ওঠে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশে একজন মেধাবী ও শক্তিমান নাট্যব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তিনি। অভিনয়ের অসাধারণত্বে যে আত্মপরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন ফরীদি, তাঁর সেই উচ্চতায় এ দেশের খুব কম মানুষই পৌঁছাতে পেরেছেন।

বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সদস্য হিসেবে তিনি গ্রাম থিয়েটারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হিসেবে শুধু ঢাকাতেই নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে গৌরবান্বিত করার ক্ষেত্রেও অসামান্য ভূমিকা পালন করেন তিনি। 

হুমায়ুন ফরীদি মঞ্চনাটক, টিভি ও সিনেমায় অভিনয় করে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নির্মাণে সক্ষম হয়েছিলেন। ফরীদি তাঁর কয়েক দশকের কর্মময় জীবনে অসংখ্য বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ফরীদি অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে ‘শ্যামল ছায়া’, ‘জয়যাত্রা’, ‘আহা!’, ‘হুলিয়া’, ‘একাত্তরের যিশু’, ‘দহন’, ‘সন্ত্রাস’, ‘ব্যাচেলর’ প্রভৃতি। উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নীল নকশার সন্ধানে’ (১৯৮২), ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’ (১৯৮২), ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’ (১৯৮৩), ‘ভবের হাট’ (২০০৭), ‘শৃঙ্খল’ (২০১০) প্রভৃতি। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ধারাবাহিক ‘সংশপ্তক’ নাটকে ফরীদির অনবদ্য অভিনয়ের কল্যাণে ‘কান কাটা রমজান’ চরিত্রটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।