সাক্ষাৎকার
নব্বইয়ের জনপ্রিয় চারু এখন কী করছেন
কয়েক যুগ ধরে সংগীতজগতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছেন আবদুল ওয়াজেদ চারু। তবে সংগীতজগতের মানুষ, বিশেষ করে ব্যান্ডের শিল্পীরা চারু নামেই চেনেন তাঁকে। ১৯৯৫ সালে ‘আমার ছেলেবেলা’ নামে একক গানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ হয়। ১৭টি র্যাপ গানের মিক্সড অ্যালবামেও কাজ করেছিলেন তিনি। নোভা ব্যান্ডের গিটারিস্ট হিসেবেও বেশ কিছুদিন ছিলেন চারু। ভিন্নধর্মী গানের জন্য নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয়তা পান চারু। পার্থ বড়ুয়া, আজম বাবু, আশরাফ বাবু ও চারুর ‘ত্রিরত্নের খ্যাপা’ অ্যালবাম তো সে সময়ে দারুণ শ্রোতাপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর পর ‘হযবরল’, ‘ডিনামাইট’, ‘তেলেসমাতি’, ‘বায়ু চড়া’ ইত্যাদি অ্যালবাম বেরোয়। এখনকার শ্রোতারা হয়তো এসব অ্যালবামের নাম জানেন না; কিন্তু সে সময় বেশ সাড়া জাগিয়েছিল অ্যালবামগুলো। সেখানে চারু একাধারে সংগীতশিল্পী, গীতিকার এবং সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার। এখনো সংগীতচর্চা করেন, তবে আগের মতো নয়। বর্তমানে তিনি এনটিভি প্রোগ্রামের অডিও স্টুডিওতে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন তাঁর সংগীতজীবনের সূচনা, অভিজ্ঞতা ও বর্তমান কর্মজীবনের ব্যস্ততা নিয়ে।
প্রশ্ন : কীভাবে আপনার সংগীতজীবনের যাত্রা শুরু হয়?
উত্তর : ১৯৮৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পরপর আমি সংগীতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। আমার বড় ভাইদের একটা ব্যান্ড দল ছিল। দলটির নাম ছিল নোভা। এই ব্যান্ডটির সবার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। আর এভাবেই সংগীত করার জন্য আমি উৎসাহী হই। ব্যান্ডটির বেইজ গিটারিস্ট ছিলাম আমি। পরে ব্যান্ডটির লাইনআপের পরিবর্তন হয়। আমিও জায়গা বদল করি।
প্রশ্ন : অডিও সাউন্ডের কাজে কীভাবে জড়িয়ে পড়লেন?
উত্তর : ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে স্টুডিওতে গান রেকর্ডিংয়ের জন্য আমাকে যেতে হতো। তখন আমি সাউন্ডের কাজগুলো ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করতাম। আমার তখন সাউন্ড রেকর্ডিংয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। ঢাকা শহরে তখন হাতেগোনা কিছু স্টুডিও ছিল। বেইলি রোডের একটি স্টুডিওতে আমরা নিয়মিত রেকর্ডিং করতাম। একদিন সেই স্টুডিওর মালিক আমাকে প্রস্তাব দেন সাউন্ডে কাজ করার। তিনি বলেছিলেন, ‘চারু, তোর তো সাউন্ডের প্রতি অনেক আগ্রহ দেখছি। তুই আমার স্টুডিওতে কাজ করবি?’ উনার প্রশ্নের উত্তরে আমি বলেছিলাম, ‘আরে, আমি তো এসব কিছু বুঝি না।’ তখন তিনি বলেছিলেন, ‘শিখিয়ে দিলে তুই সব পারবি।’ আমার তখন গ্র্যাজুয়েশন শেষ হয়েছে। টুকটাক গান-বাজনা করি আর বেকার ঘুরে বেড়াই। তাই তাঁর প্রস্তাবে রাজি হই।
প্রশ্ন : আগে গিটারিস্ট ছিলেন। গান-বাজনাও করতেন। এখন চাকরি করতে আপনার কেমন লাগছে?
উত্তর : চাকরি করতে ভালো লাগছে। কারণ, প্রথমে এটা নেশা থাকলেও এখন এটাই আমার মূল পেশা।
প্রশ্ন : আপনার রেকর্ডিং করা প্রিয় কিছু গানের অভিজ্ঞতার কথা বলুন।
উত্তর : অনেক গান আছে প্রিয়। তবে কিছু গানের রেকর্ডিং করে আশ্চর্য হয়েছি। ১৯৯০ সালের দিকে আমি ফিরোজা বেগমের একটা গানের রেকর্ডিং করেছিলাম। গানের কথা ছিল, ‘তুমি ছাড়া কিছুই ছিল না আমার’। উনি বড় মাপের একজন শিল্পী। যখন তিনি স্টুডিওতে এলেন, আমি তখন তাঁকে সরাসরি রেকর্ডিংরুমে যাওয়ার কথা বললাম। কিন্তু তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আগে গানটা ভালোভাবে শুনতে চাই।'
সাবিনা ইয়াসমিন আপুর সঙ্গেও অনেক গান রেকর্ডিং করেছি। তাঁর সঙ্গে গান রেকর্ডিংয়ের সময় মনে হতো যেন ক্যাসেটেই গান শুনছি। খুব কম সময়ের মধ্যে তিনি অনেক গান রেকর্ড করতে পারতেন। আমার জীবনে অনেক বড় অর্জন তাঁদের মতো শিল্পীদের সঙ্গে আমি কাজ করতে পেরেছি। একসময় তাঁদের গানের ক্যাসেট কিনে আমি শুনতাম। এখন সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগে। আমি অনেক ভাগ্যবান।
প্রশ্ন : তরুণ শিল্পীদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
উত্তর : তাঁরা প্রত্যেকে এখন অনেক ভালো করছেন। আমি বলব, তাঁরা অনেক মেধাবী। কারণ, তাঁরা নিজে গান লেখেন, সুর করেন, আবার কণ্ঠও দেন। নিশ্চয়ই তাঁরা প্রশংসার যোগ্য।
প্রশ্ন : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
উত্তর : ভবিষ্যতের কথা আমি খুব একটা ভাবি না। জীবন তো ভালোভাবেই চলে যাচ্ছে। আমার ছেলের জন্য কিছু করার ইচ্ছা আছে। আর ‘আমার ছেলেবেলা’ অ্যালবামের গানগুলো নতুন করে করার ইচ্ছা আছে। সত্যি কথা বলতে কি, ওই সময় আমার অ্যালবামটি ভালো চলেনি। এর কারণ, তখন সাধারণ গান সবাই কম শুনত। র্যাপ গানই বেশি চলত। যা হোক, এখন নতুন করে কিছু একটা করতে চাই।