আমজাদ ভাইয়ের শেষ ছবিটি আর করা হলো না : ববিতা
“আমজাদ ভাই বলেছিলেন আমাকে নিয়ে আরেকটা ছবি নির্মাণ করবেন। ভাইয়ের শেষ ছবিটি আর করা হলো না। উনার সাথে আমি শেষ কাজ করেছি ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’ ছবিতে। তিনি অন্য পরিচালকের চেয়ে ভিন্নরকম ছিলেন। শুটিংয়ে শিল্পী হিসেবে আমরাও অনেক সিরিয়াস থাকতাম। উনার সব কাজ সব সময় নিজের কাজ বলে মনে হতো। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শোনার পর মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। উনার মতো মানুষ বার বার আসে না।”— কথাগুলো বলেছেন অভিনেত্রী ববিতা।
শুটিংয়ের স্মৃতিচারণা করে ববিতা বলেন, ‘গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে আমজাদ ভাই বেশি কাজ করেছেন। এ জন্য আমাদের শুটিংগুলো হতো ঢাকার বাইরে। যদিও ঢাকার বাইরে তখন শুটিং করাটা অনেক কষ্টের ছিল। এক সময় আমরা মানিকগঞ্জে শুটিং করতে গিয়েছি। সেখানে গিয়ে দেখি থাকার জায়গা ঠিক নেই। ঘরে আলো নেই, খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা পাশের হোটেল থেকে খাবার এনে খেয়েছি। দোকান থেকে বাল্ব এনে লাইট জালিয়েছি। নিজের মতো ব্যবস্থা করে ঘর গুছিয়ে ঘুমিয়েছি। বিষয়গুলো আমাদের কাছে কখনো বিরক্তিকর মনে হয়নি। আমজাদ ভাইয়ের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তিনি যে ছবিটি নির্মাণ করতেন সেটি যেমন পুরস্কৃত হয়েছে তেমনি ব্যবসায়িকভাবে সফলও হয়েছে। আসলে কি বলব, বুঝতে পারছি না। কথা বলতে বলতে রাত ভোর হয়ে যাবে কিন্তু কথা শেষ হবে না। আমজাদ ভাই নেই, এ কথাটা মনে হলেই ভিতরটা হু হু করে উঠছে। সবাই দোয়া করবেন যেখানে থাকুন, ভালো থাকুন আমাদের প্রিয় আমজাদ ভাই।’
বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
গত ১৮ নভেম্বর রোববার সকাল ৯টার দিকে আমজাদ হোসেনের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার তাঁকে (আমজাদ হোসেন) বিছানার নিচে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। কখন তিনি অচেতন হয়েছেন, তা আঁচ করতে পারেননি সুরাইয়া আক্তার। এরপর সকাল ১০টার দিকে তাঁকে ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। চিকিৎসকরা জানান রোববার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় আমজাদ হোসেনের। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ২৭ নভেম্বর রাত আড়াইটার দিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে ব্যাংকক নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর হার্টবিট, ব্লাডপ্রেশার এবং কিডনি ইনফেকশনের জন্য ডায়ালাইসিস চলছিলে বলে জানান তাঁর ছেলে সোহেল আরমান।
আমজাদ হোসেন অভিনেতা, পরিচালক হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। ১৯৬১ সালে ‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়ে চলচ্চিত্র শুরু করেন তিনি। পরে চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনা শুরু করেন।
প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ছবিটি পরিচালনা করেন ১৯৬৭ সালে। পরিচালক হিসেবে ‘নয়নমনি’ (১৯৭৬), গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), ভাত দে (১৯৮৪) তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ও ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্রের জন্য আমজাদ হোসেন শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেন। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক (১৯৯৩) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
এ ছাড়া সাহিত্য রচনার জন্য আমজাদ হোসেন ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুবার অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার ও ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।