‘হয়তো আর ভিক্ষা করতে হবে না’
মেকপাম্যান কাজী হারুনকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকার বাজার দেবে ‘স্বপ্ন’। গতকাল সোমবার নাট্যশিল্পীদের সংগঠন বাংলাদেশ অভিনয় শিল্পী সংঘের উদ্যোগে এই ব্যবস্থা করা হয়। আগামী এক বছরের জন্য এই অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সদস্য আহসানুল হক মিনু। চিকিৎসার জন্যও ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গত ১৪ অক্টোবর এনটিভি অনলাইনে ‘ভিক্ষা করছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মেকআপম্যান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে কাজী হারুনের পাশে দাঁড়িয়েছে সংগঠনটি।
আহসানুল হক মিনু বলেন, ‘নিউজটি দেখার পর থেকেই আমরা সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলি কীভাবে কাজী হারুনের পাশে দাঁড়ানো যায়। উনাকে সাহায্য করার জন্য বেশ কিছু জায়গাতে যোগাযোগ করি। এর মধ্যে ‘স্বপ্ন’ প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকার বাজার দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। আমরা গতকাল হারুন সাহেবের হাতে সেই কাগজ দিয়েছি। এক বছর তিনি এই বাজার পাবেন। আমরা উনার চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করছি। আমরা চাইছি তাঁর চিকিৎসা করতে। হারুন সাহেবের তো ডান পাশ প্যারালাইসিস, চিকিৎসা করিয়ে ঠিক করা গেলে হয়তো আবারও তিনি কাজে ফিরতে পারবেন।’
অনুদান দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন হারুনের স্ত্রী মহুয়া আকতার। তিনি বলেন, ‘আপনাদের অনেক ধন্যবাদ, এখন থেকে হয়তো আর ভিক্ষা করতে হবে না। তার পরও আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাই, কারণ দেখতে দেখতে এক বছর চলে যাবে, তারপর কী খাব? প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের সাহায্য করেন তাহলে হয়তো বাকি জীবনটা শান্তিতে কাটাতে পারব।’
‘বেদের মেয়ে জোসনা’র মতো ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে কাজী হারুন মেকআপম্যান হিসেবে কাজ করেছেন, কুঁড়িয়েছেন প্রশংসা। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হৃদয় থেকে হৃদয়’ ছবিতে কাজের জন্য তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
কাজী হারুন থাকেন দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ফরিদাবাদ বস্তিতে। সঙ্গে থাকেন স্ত্রী মহুয়া আকতার। তিনটি বাড়িতে কাজ করে ঘর ভাড়া দেন স্ত্রী মহুয়া, আর ভিক্ষা করে জীবনধারণের খরচ চালান হারুন।
১৯৭৯ সালে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন হারুন। ১৯৮৯ সালে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবিতে কাজ করে তিনি প্রশংসিত হন। ২০০৯ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ( ব্রেইন স্ট্রোক) হয় তাঁর, এতে শরীরের ডান পাশ প্রায় পুরোটা অবশ হয়ে যায়। অসুস্থ হওয়ার কারণে আর কাজ করতে পারছিলেন না, তাই ছিটকে পড়েন চলচ্চিত্র জগৎ থেকে, শুরু হয় অর্থকষ্ট। অনেকটা বাধ্য হয়েই ২০১১ সাল থেকে তিনি ভিক্ষা করতে শুরু করেন। অভাবের তাড়নায় এরই মধ্যে তিনি বিক্রি করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হিসেবে পাওয়া সোনার মেডেল।
‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছাড়াও তিনি ‘অন্য জীবন’, ‘শঙ্খমালা’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’, ‘জীবন সংসার’সহ শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন।