এনটিভিতে আজ থেকে ‘মায়া মসনদ’
‘সব সময় দর্শককে ভিন্ন কিছু উপহার দিতে পছন্দ করি আমরা। ভিএফএক্স ও থ্রিডি গ্রাফিকস-নির্ভর রূপকথার গল্প করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। শুটিং শুরুর আগে আমার বিশ্বাস ছিল, কাজটা ভালো হবে। আসলেই নাটকটির নির্মাণ ভালো হয়েছে।’ কথাগুলো গতকাল সন্ধ্যায় ‘মায়া মসনদ’-এর প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠানে বলেছেন এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ।
এনটিভির তেজগাঁও স্টুডিওতে নাটকটির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাটকের সব শিল্পী, কলাকুশলী, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ীসহ আরো অনেকে।
প্রিমিয়ার শোতে প্রশংসিত হয় ‘মায়া মসনদ’। এনটিভির সহকারী অনুষ্ঠান মহাব্যবস্থাপক আলফ্রেড খোকন বলেন, ‘নাটকটিতে হিংসা-প্রতিহিংসার অনেক কিছু তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া দর্শক বিনোদন পাবেন এ রকম অনেক ঘটনাই দেখা যাবে এর গল্পে। আশা করছি, বিনোদন নেওয়ার পাশাপাশি মানুষ এটা থেকে ভালো দিকগুলো গ্রহণ করবেন।’
‘মায়া মসনদ’-এর পরিচালক এস এম সালাহ্ উদ্দিন নাটকটি নিয়ে বেশ আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমি এটুকু বলতে চাই, দর্শক নাটকটি দেখে নিরাশ হবেন না। এটা নিশ্চিত, তাঁরা ভরপুর বিনোদন পাবেন।’
অন্যদিকে, নাটকের শিল্পী শতাব্দী ওয়াদুদ, শশী ও নিলয়ও ‘মায়া মসনদ’-এ অভিনয় করে আনন্দিত। শশী বলেন, ‘শুটিংয়ের আগে ভেবেছিলাম, কাজটা কীভাবে হবে? একটু কঠিন মনে হচ্ছিল। কিন্তু শুটিং করতে গিয়ে খুব উপভোগ করেছি।’
রূপকথার গল্প নিয়ে নির্মিত তারকাবহুল নাটকটি লিখেছেন অরিন্দম গুহ। নাটকটির পর্ব পরিচালক আতিকুর রহমান বেলাল ও দৃশ্য পরিচালনা করেছেন মাকসুদুল হক ইমু। ভিএফএক্স সুপারভাইজার তানিম শাহরিয়ার। আজ থেকে রাত ৮টা ২০ মিনিটে প্রতি রবি, সোম ও মঙ্গলবার এনটিভিতে নাটকটি প্রচারিত হবে। এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহেল রানা, সাবেরী আলম, শতাব্দী ওয়াদুদ, গোলাম ফরিদা ছন্দা, অবিদ রেহান, শশী, নিলয় আলমগীর, নমিরা মৌ, মৌসুমী নাগ, মোমেনা চৌধুরী, সৈয়দ শুভ্র, ইলোরা গহর, শম্পা রেজা, শিল্পী সরকার অপু, উজ্জ্বল হোসেন, দাউদ নূর, নীপা, সিফাত, সৈয়দা শিলা প্রমুখ।
এর গল্পে দেখা যাবে মসনদ। যার আভিধানিক অর্থ রাজসিংহাসন। কিন্তু অন্যভাবে দেখতে গেলে মসনদের অর্থ আধিপত্য, কর্তৃত্ব, প্রভাব বা ক্ষমতা। আর এই অসীম ক্ষমতার লোভ থেকে যেমন আজকের যুগের মানুষ নিজেকে বিরত রাখতে অক্ষম, তেমনই এই কাহিনীর পটভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি মানুষ তথা মনুষ্যতর প্রাণীও আবদ্ধ এই মসনদের মায়ায়। হয়তো এ কারণেই যখন ঈষাণ বাংলার সুলতান আর্সলান তার রাজ্যের দায়িত্বভার ত্যাগ করতে প্রস্তুত হয়, তখন তার জ্যেষ্ঠপুত্র আথিয়ার ছলে-বলে-কৌশলে অন্য দুই ভাই দাবির ও ফাহিমের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় সেই মসনদ। কিন্তু সেই মসনদ হাতের মুঠোয় ধরে রাখতে গিয়ে চরম মানসিক দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হতে হয় তাকে।
একদিকে যখন আথিয়ারের ছোট ভাই ফাহিম ধীরে ধীরে প্রস্তুত হয় ঈষাণ বাংলার মসনদ ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য, তখন অন্যদিকে আথিয়ার জানতে পারে তার মসনদের অন্যতম শত্রু হয়ে দাঁড়াবে বীতস্পৃহ দাবিরের কন্যা। ভবিষ্যতের এই শত্রুর হাত থেকে মসনদ রক্ষা করতে দাবির ও তার স্ত্রীর ওপর চরম আঘাত হানতে প্রস্তুত হয় আথিয়ার। কিন্তু এক অদ্ভুত মায়াজালের টানে দাবিরের দুই কন্যা তাদের জন্মের আগেই পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চলে যায় দুই ভিন্ন জীববলয়ে। অন্যদিকে, তত দিনে পৃথিবীর ঊর্ধ্ব বলয় মেঘমণ্ডলের সম্রাট আরাশ ও তার দুই পুত্র আর্দা এবং কারাব এক সুদীর্ঘ যুদ্ধ শেষে ফিরে আসে তাদের রাজ্যে। আপাত শান্তি ও ভালোবাসার বাতাবরণে মোড়া এই মেঘমণ্ডলেও ধীরে ধীরে দেখা দেয় মসনদের মায়া তথা ক্ষমতালাভের অপার আকাঙ্ক্ষা। কারাব ও আর্দার দুই স্ত্রী তথা সম্রাট আরাশের স্ত্রীরাও জড়িয়ে পড়ে এই লোভের মায়াজালে।
এ পরিস্থিতির মধ্যেই সম্রাট আরাশের বন্ধ্যা স্ত্রী হান এক কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসে মেঘমণ্ডলে। সবাই জানতে পারে, এই কন্যাকে ছোট রানি হান জন্ম দিয়েছে। মেঘমণ্ডলে আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই এই কন্যা সবার মনে এক বিশেষ ভালোবাসার স্থান দখল করে নেয়। সম্রাট আরাশ এই কন্যার নাম রাখেন সুরাইয়া। জানা যায়, এই সুরাইয়া আসলে দাবিরের কন্যা। অন্যদিকে, দাবিরের অন্য এক কন্যা লিয়া জন্মগ্রহণ করে জাদুমণ্ডলে এবং বড় হয়ে ওঠে এক চপল, সুন্দরী মৎস্যকন্যা হিসেবে। মেঘমণ্ডলে বড় হয়ে ওঠা সুরাইয়া যখন যুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেয়, তখন সম্রাট আরাশের চোখে সে হয়ে ওঠে মসনদের এক অন্যতম দাবিদার। মন থেকে না চাইলেও ভাগ্যের লিখন তাকে মসনদের যুদ্ধে টেনে নিয়ে আসে। আর সে যখন জানতে পারে তার আসল পরিচয়, তখন সুলতান আথিয়ারের বিরুদ্ধে সে তার পিতা-মাতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর হয়। কিন্তু পৃথিবীর বুকে নেমে এলে তার যাবতীয় ক্ষমতা তো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তখন কি তার পক্ষে সম্ভব হবে অসীম ক্ষমতার অধিকারী সুলতান আথিয়ার ও তার কুটিল স্ত্রী শীনাজের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া? কী হয় তারপর? সুরাইয়া কি সত্যিই নেমে আসে পৃথিবীর বুকে? সে কি কোনো দিন মুখোমুখি হতে পারে সুলতান আথিয়ারের? দাবির ও লিয়ার সঙ্গে কি কোনোদিন দেখা হয় সুরাইয়ার? মেঘমণ্ডল ও ঈষাণ বাংলার মসনদের মায়া কোন পথে নিয়ে যায় কাহিনীর অন্যান্য চরিত্রকে?’