নাম বলে শত্রু হতে চাই না : মৌ শিখা
মৌ শিখা। ‘নাগরিক নাট্যঙ্গন’ থিয়েটারে দীর্ঘদিন অভিনয় করেছেন। বর্তমানে অভিনয় করছেন টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে। গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কাজের পারিশ্রমিক ঠিক মতো না পাওয়ার বিষয় নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। সেই বিষয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী।
এনটিভি অনলাইন : হঠাৎ ফেসবুকে পারিশ্রমিক প্রসঙ্গে স্ট্যাটাস দিলেন। এর পেছনে বিশেষ কারণ আছে কি?
মৌ শিখা : আমি আসলে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করিনি। এটা সমস্যা বলতে পারেন। আমি সমাধানের পথ খুঁজছি। কেউ হয়তো এই সমস্যার কথা বলে, আবার কেউ বলে না। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির অনেক সিস্টেমের দোষ আছে। অনেকে কথা দিয়ে কথা রাখেন না। অনেক সময় নাটকের শুটিংয়ের শেষ দৃশ্য শেষ করে যখন বাসায় ফিরব তখন পারিশ্রমিক চাইলে পাওয়া যায় না। প্রোডাকশন ম্যানেজার বলেন, ‘আপনি বাসায় গিয়ে বিকাশ নম্বর দিয়েন আমরা টাকা পাঠিয়ে দিব’। বাসায় গিয়ে হয়ত বিকাশ নাম্বার পাঠিয়েছি কিন্তু টাকা পাইনি। কয়েকদিন অপেক্ষা করার পরও টাকা আসে না। শুটিংয়ের সময় নাটকের পরিচালকরা অনেক ব্যস্ত থাকেন তাই তাঁদের কাছে কিছু বলাও যায় না। যাঁদের কাছে দায়িত্ব দেওয়া থাকে তাঁরা প্রায় এ রকম করেন। আমার সঙ্গে এটা অনেকবার হয়েছে। এখন এজেন্সির মাধ্যমে অনেক নাটকের শুটিং হয়। অনেক সময় কাজ শেষে প্রোডাকশন থেকে এজেন্সি কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে টাকা নিতে বলে। আমি পাওনা টাকা নিতে একবার একটা বড় এজেন্সির অফিসে গিয়েছিলাম। আমাকে দেখে তাঁরা বলে, ‘আপনাকে কে কাস্টিং করেছে?’ তাদের ভাবটা এ রকম আমি পাওনা টাকা নিতে আসিনি মনে হয় ঋণ নিতে এসেছি।
এনটিভি অনলাইন : আপনি এই বিষয়ে ডিরেক্টর্স গিল্ড কিংবা অভিনয় শিল্পী সংঘে অভিযোগ করেননি?
মৌ শিখা : তাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছি কয়েকবার। কিন্তু তাঁরা লিখিতভাবে অভিযোগ করতে বলেন। তখনই আমি পিছিয়ে যাই। কারণ যাঁরা পারিশ্রমিক দেয় না তাঁদের নাম বলে শত্রু হতে চাই না। আমার স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। আমার মায়ের বাসায় আমি থাকি। আমার ছেলে-মেয়ে আছে। সংসার চালাতে হয়। তাই কারো শত্রু হতে চাই না। অভিযোগ করতে চাই না। সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি এর সমাধান চাই।
এনটিভি অনলাইন : অন্য আরো কোনো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন কি?
মৌ শিখা : হ্যাঁ, আরো সমস্যা আছে। হয়তো কোনো নাটকের টিম থেকে কাস্টিংয়ের জন্য আমার ডেট চাওয়া হলো। আমিও দিলাম কিন্তু সেই ডেট শুটিংয়ের আগের দিন বাতিল করা হয়। আমাকে হয়তো তখন বলা হয়, ‘আপু প্রযোজক দেশে নাই। শুটিং হবে না।’ আমি তখন পড়ে যাই বিপদে। কারণ যে ডেটগুলো আমি নাটকটির শুটিংয়ের বরাদ্দ রেখেছিলাম সেই ডেটে অন্য কাজের প্রস্তাব পাওয়ার পরও আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। কারণ আমি কথা দিয়ে কথা রাখি। এর ফলে মাস শেষে আমি প্রত্যাশা অনুযায়ী টাকা পাই না। সংসার চালাতে তো নির্দিষ্ট বাজেট থাকে প্রতি মাসে তাই তখন আমার সমস্যা হয়। মা ও ভাবির চরিত্রে এখন বেশি অভিনয় করছি। আমি তো নতুন শিল্পী না। ২০ বছর ধরে মিডিয়ায় কাজ করছি। এ ধরনের চরিত্রে নতুন শিল্পী কাজ করলে যে পারিশ্রমিক পায় আমিও সেটাই পাই। এটা কেন হবে? আমরা কি পারিশ্রমিক তাদের থেকে বেশি প্রত্যাশা করতে পারি না!
এনটিভি অনলাইন : আপনার চাওয়া কী?
মৌ শিখা : আমি চাই নায়ক-নায়িকাদের যেমন অগ্রিম টাকা দেওয়া হয় শুটিংয়ের আগে ঠিক তেমনি আমাদেরও দেওয়া হোক। তাহলে অন্তত শুটিং বাতিল হলেও আমরা কিছু টাকা তো পাব। নায়ক-নায়িকা দিয়েই তো শুধু নাটক হবে না। আমাদের চরিত্রগুলোও গল্পে প্রয়োজন হয়। তাহলে আমাদের সমস্যাগুলো ইন্ডাস্ট্রির সবার বিবেচনা করা উচিত। ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো পরিচালক ও প্রযোজকরাও নিয়মিত কাজ করছেন। আমার তাঁদের সঙ্গে হয়তো কম কাজ হচ্ছে। এ কারণে আমার খারাপ অভিজ্ঞতা বেশি। আবার ভালো অভিজ্ঞতাও আছে। তবে সেটা খুব কম।
এনটিভি অনলাইন : এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। শেষ কোন নাটকের শুটিং করেছেন?
মৌ শিখা : ‘মায়া মসনদ’ ধারাবাহিক নাটকের। অক্টোবরে নাটকটি এনটিভিতে প্রচারিত হবে। নাটকটিতে পরীর রানি চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি। রূপকথার নাটক। তাই অনেক ভারি মেকআপ ও গয়না পরতে হয়েছে। মেকআপ নিতে ৪০ মিনিটের মতো লাগে। নাটকটা অনেক ভালো হবে। আশা করছি, দর্শক নাটকটি পছন্দ করবেন।
এনটিভি অনলাইন : শেষ প্রশ্ন। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের খবর কী?
মৌ শিখা : এখন টলিউডের ‘নিরীক্ষণ’ ছবির শুটিং করছি। ছবির ৭০ ভাগ শুটিংয়ের কাজ শেষ। এখানে আমি পতিতাদের মাসির চরিত্রে অভিনয় করেছি। ছবিটি পরিচালনা করেছেন জুবায়ের ইবনে বকর। আরো কিছুদিন আগে আমার অভিনীত ‘তুই শুধু আমার’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। ভালোই সাড়া পেয়েছি।