পুরস্কার পাওয়ার পর দায়িত্ববোধ বেড়েছে : এস আই সুমন
‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড ২০১৮’ পেয়েছেন সংগীতশিল্পী এস আই সুমন। তাঁর প্রকাশিত ‘আঁধারপোকা’ অ্যালবামে বেস্ট সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য এই পুরস্কার জিতেছেন এই শিল্পী।
হবিগঞ্জের একটি অভিজাত রিসোর্টে এস আই সুমনের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেয় আয়োজক কর্তৃপক্ষ গত শুক্রবার।
এ বিষয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে এনটিভি অনলাইনকে এস আই সুমন বলেন, ‘পুরস্কার পাওয়ার পর দায়িত্ববোধ বেড়েছে। এটা আমার জন্য অনেক বিরাট পাওয়া। প্রথম বাবা হলে যে রকম অনুভূতি হয়, সে রকম ভালো লাগছে আমার। সামনের দিনগুলোতে এই পুরস্কার আমার কাজের গতি বাড়াতে সাহায্য করবে বলে আমি মনে করি।’
এস আই সুমন শুধু সংগীতশিল্পীই নন, তিনি সুরকারও। একসময় দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ঢাকা’র লিড গিটারিস্ট ছিলেন সুমন। ‘গডস কমান্ড’ (১৯৯২), ‘চ্যাপ্টার ওয়ান’ (২০১৩) ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও তিনি।
বর্তমানে সুমন জনপ্রিয় বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভিতে চিফ সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন। ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দুটি গানের অ্যালবাম ‘আঁধারপোকা’ ও ‘শূন্যতা’। আজকাল তিনি তাঁর ব্যান্ডদল ‘হৈচৈ’ নিয়ে ব্যস্ত। ব্যান্ডদল নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কনসার্ট করছেন নিয়মিত। গান করছেন বাংলা ও ইংরেজিতে।
আসছে অক্টোবরে ব্যান্ডদল থেকে প্রকাশিত হবে তাঁদের নতুন গানের অ্যালবাম ‘লারে লাপ্পা’। এই বিষয়ে উচ্ছ্বসিত এস আই সুমন। বললেন, ‘ব্যান্ডের অ্যালবাম প্রতিবছর একটা করে করার পরিকল্পনা করেছি। শুধু বাংলা নয়, ইংরেজিতেও গান করে আমাদের অনুভূতি আমরা সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে চাই।’
১৯৯৮ সাল থেকে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ করছেন বলে জানান এস আই সুমন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারো কাছ থেকে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং শেখা হয়নি। অনেকটা হঠাৎ করে এই পথে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বন্ধু আমাকে এই কাজটি শেখাতে অনেকখানি সাহায্য করেছেন।’
এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলীকেও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান এস আই সুমন। কথায় কথায় বললেন, ‘চেয়ারম্যান স্যার আমাকে গানের ব্যাপারে অনেক উৎসাহিত করেন। কাজের পাশাপাশি গান করতে তাই কোনো সমস্যা হয় না।’
সুস্থ সংগীতের বিকাশ—এ লক্ষ্য সামনে রেখে সংগীত নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস ২০১৮’ পাওয়ার্ড বাই সেভেন আপ অনুষ্ঠিত হয় গত শুক্রবার। এবার যুগপূর্তি হয়েছে আয়োজনটির। অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে সুবীর নন্দীকে।
পুরস্কার হাতে সংগীতশিল্পী এস আই সুমন। ছবি : সংগৃহীত
হবিগঞ্জের ‘দ্য প্যালেস’ লাক্সারি রিসোর্টের উন্মুক্ত চত্বরে তিন ঘণ্টার জাঁকজমকপূর্ণ এই আয়োজনটি পরিচালনা করেন ইজাজ খান স্বপন। অনুষ্ঠানে বাংলা গানের ইতিহাস পাঠ করেন আফসানা মিমি, শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন পরিবেশন করেন চন্দনা মজুমদার, গজল গান মিতালী মুখার্জি, লালন গীতি পরিবেশন করেন কিরণ চন্দ্র রায়, রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছেন তপন মাহমুদ, নজরুলসংগীত গেয়েছেন ছন্দা চক্রবর্তী, দ্বিজেন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেছেন অনিমা রায়, আলতাফ মাহমুদ, ভাষা আন্দোলনের গান গেয়েছেন শিমূল ইউসুফ, রবিন ঘোষের গান করেছেন ফাহমিদা নবী এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা পরিবেশন করেছেন দেশের গান।
পুরস্কার প্রদানের ফাঁকে ফাঁকে নাজমা জামান, পিলু মমতাজ, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা ও আঞ্জুমান আরা বেগমের গান পরিবেশন করেন মেহরীন, কোনাল, কনা, রমা, এলিটা ও আলিফ। মৌলিক গান পরিবেশন করে চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ঐশি, তিশা, মৌমিতা, ফাতেমা, লতা, তরিক ও জনি। তানজিল ও ইগল ড্যান্সের কোরিওগ্রাফিতে নৃত্য পরিবেশন করেন নুসরাত ফারিয়া। হাসন রাজা, রাধারমণ দত্ত, শাহ্ আবদুল করিমের লোকসংগীত পরিবেশন করে চ্যানেল আই বাংলার গানের শিল্পী শারমিন, সেরাকণ্ঠ আশিক, দোলা, ঐশি, বিন্দু-কণা ও রেশমী। সেরাকণ্ঠ কোনাল ও ইমরানের গানের সঙ্গে পারফর্ম করেন লাক্স স্টার মিম মানতাসা এবং চ্যানেল আই-ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম আজাদ।
এবার আজীবন সম্মাননাসহ ১৬টি ক্যাটাগরিতে সমালোচক পুরস্কার এবং ছয় ক্যাটাগরিতে গোল্ডেন ভয়েস অ্যাওয়ার্ডস দেওয়া হয়েছে। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন রবীন্দ্রসংগীতে বীথি পান্ডে, নজরুলসংগীতে ছন্দা চক্রবর্তী, লোকসংগীতে সাগর বাউল, গীতিকার আসিফ ইকবাল, সংগীত পরিচালক অটামনাল মুন, মিউজিক ভিডিওতে চন্দন রায় চৌধুরী, কাভার ডিজাইনে মাসুম বিল্লাহ্, আধুনিক গানে যৌথভাবে সিঁথি সাহা ও চন্দন সিনহা, ছায়াছবির গানে চিরকুট এবং উচ্চাঙ্গসংগীত যন্ত্রে গাজী আবদুল হাকিম।
গোল্ডেন ভয়েস অ্যাওয়ার্ডস প্রাপ্তরা হলেন রবীন্দ্রসংগীতে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, নজরুলসংগীতে ফেরদৌস আরা, লোকসংগীতে মমতাজ, ছায়াছবির গানে সামিনা চৌধুরী, আধুনিক গানে কুমার বিশ্বজিৎ এবং নির্মাতা আফজাল হোসেন।
বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শেখ সাদী খান, আবদুর রশীদ মজুমদার, ফেরদৌসী রহমান, ফরিদা পারভীন, সিতারা জেবিন, সৈয়দ আবদুল হাদী, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুর রহমান, শাহানা সিরাজ, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, মৌসুমী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মঈনুদ্দীন আহমেদ টিপু, মোহাম্মদ আতাউর রহমান প্রদান, মানাম আহমেদ, নারী উদ্যোক্তা কনা রেজা প্রমুখ।