দেশভাগ থেকে কোনো শিক্ষাই নিইনি : নন্দিতা
চিন্তাশীল চিত্রনির্মাতা, অভিনেত্রী বলেই খ্যাতি নন্দিতা দাসের। দীর্ঘদিন পর মুক্তি পেতে যাচ্ছে তাঁর নির্মিত ছবি ‘মান্টো’। তিনি আশা করছেন, এ ছবির মধ্য দিয়ে তিনি ঘুরে দাঁড়াবেন। ‘মান্টো’ ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক সাদাত হাসান মান্টোর জীবনী নিয়ে। ঠিক জীবনীও নয়, তাঁর সময়ে দেশভাগ ও সাম্প্রদায়িকতার স্ফুরণ নিয়ে।
ভিন্ন ঘরানা, বাস্তবানুগ চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক-হৃদয় জয় করেছেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি। সাদাত হাসান মান্টোর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। নন্দিতার পরিচালনায় এটি তাঁর দ্বিতীয় ছবি। নিজের চরিত্রে ১৯৪৬ সালের শুরুর দিনগুলোতে মান্টোর সৃজনশীল জীবনসহ নানা দিক ফুটিয়ে তুলেছেন নওয়াজুদ্দিন।
দেশভাগের দিনগুলোতে কেন ফিরে গেছেন? নন্দিতা উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দেন। বলেন, ‘কেন আমরা ভুলতে পারি না? বা কেন ভোলা উচিত নয়? কারণ, দেশভাগ থেকে আমরা কোনো শিক্ষাই নিইনি।’
এই অভিনেতা-পরিচালক জানান, তিনি গল্পকার মান্টোর চোখে সেই দিনগুলো দেখেছেন। ‘আজও এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা—তখন যারা ভুগেছিল ও এখন যারা ভুগছে—সবাই সাধারণ মানুষ।’
নন্দিতা মনে করেন, মানুষ গল্পের ভেতরের ঘটনা নিয়ে কম কথা বলে। কিন্তু মান্টোর গল্পের ভেতরে সেই সত্যটা টের পাওয়া যায়। তাঁর সময়ের প্রকৃত চিত্র উঠে আসে। সূত্র অনলাইন ইন্ডিয়া টিভির।
‘মান্টো এমন একজন গল্পকার, যিনি তাঁর লেখায় মানুষের ভেতরের বেদনা ফুটিয়ে তুলেছেন। যেমন ধরা যাক তোবা তেক সিং, এ গল্পে লাহোরে বন্দি এক শিখের মানসিকভাবে শরণার্থী হয়ে ওঠার বর্ণনার ভেতর দিয়ে লাখো মানুষের সংকট ফুটে উঠেছে।’
নন্দিতা বলেন, ‘মান্টোর ছোটগল্প তোবা তেক সিং পৃথিবীর বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। আমি আহত হয়েছিলাম... যখন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়ালি ইউনিভার্সিটিতে ফেলোশিপ করতে গিয়েছিলাম; লাইব্রেরিতে মান্টোর বেশ কয়েকটি বই দেখে বিস্মিত হই—ইংরেজি, হিন্দি, উর্দুসহ বিভিন্ন ভাষায় ২৫টি বই ছিল। এরপর ইয়ালি ও হার্ভার্ডের ইতিহাসবিদদের সঙ্গে কথা বলি। জানান, তাঁরা তোবা তেক সিং পড়ান এবং গল্পের বর্ণনাকে বাস্তব ঘটনা হিসেবেই দেখেন। এর কারণ মান্টো তাঁর সময়কে ধারণ করেছিলেন।’
পরিচালক জানান, ছবিতে তিনি দেশভাগের সময় হওয়া গণ-দেশত্যাগ, হত্যা, লুটতরাজ ও ধর্ষণ সরাসরি দেখাননি। কিন্তু ‘তাঁর অনুভবের ভেতর দিয়ে আপনি এসব দেখতে পাবেন।’
‘তাঁর গল্পের ভেতরেই এসবের আভাস আছে। একজন সংবেদনশীল লেখক হিসেবে, তাঁর চোখ দিয়ে সব সহিংসতা দেখতে পাবেন’, বলেন নন্দিতা দাস।
নন্দিতা আরো জানান, সম্প্রতি মান্টোর দুই মেয়ে নুসরাত ও নুজহাত মুম্বাইয়ে গিয়েছিলেন ছবিটির বিশেষ প্রিমিয়ার দেখতে। আর নন্দিতার জন্য এটা ছিল চরম আবেগিক মুহূর্ত। মান্টোর পরিবারের প্রতি তিনি আলাদা দায় অনুভব করেন।
১৯৪৮ সালে উর্দু লেখক মান্টো মুম্বাই ছেড়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয়তা ছাড়েননি। নন্দিতা বলেন, ‘মান্টো এমন একজন লেখক, যিনি ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই ধারণ করতেন। জাতীয়তা তাঁর হৃদয়কে আলাদা করতে পারেনি।’ নন্দিতার খুব ইচ্ছে, তাঁর ছবিটি প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও মুক্তি পাবে।
নন্দিতা বলেন, ভারতে লেখকদের জীবন নিয়ে খুব একটা ছবি নির্মিত হয়নি। নির্মাতারা সত্যিই লেখকদের নিয়ে তেমন কিছুই করেন না। মান্টোর গল্পের ভেতর দিয়ে একটা ঢেউ তোলার চেষ্টা করেছেন তিনি।
‘মান্টো’ ছবিতে আরো অভিনয় করছেন রসিকা দুগাল, তাহির রাজ ভাসিন, দিব্য দত্ত, রণবীর শোরে ও ঋষি কাপুর। আগামীকাল ২১ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাচ্ছে ব্যতিক্রমী এ ছবিটি।