‘লসে ব্ল্যাক’ হচ্ছে সিনেমার টিকেট
রোজায় বন্ধ ছিল রাজধানী পল্টনের পরিচিত সিনেমা হল জোনাকি। তবে ঈদের দিন থেকে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী। হল কর্মচারীরা ভেবেছিলেন প্রতিবারের মতো এবারের ঈদেও ‘ব্ল্যাকে’ টিকেট বিক্রি করে বন্ধ থাকার ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন তাঁরা। তা ছাড়া কয়েক মাস বেতনও হয় না তাঁদের। বিধি বাম। সিনেমা শুরুর আগে আশি টাকার টিকেট ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও, সিনেমা শুরুর পর আর তেমন দর্শক হচ্ছিল না। তাই শো শুরুর পর আশি টাকার টিকিট সত্তর টাকাতেও বিক্রি করতে হয় তাঁদের। এই চিত্র গতকাল রোববারের।
জোনাকি সিনেমা হলের দারোয়ান মনু মিয়া বলেন, ‘আমরা ঈদের দিন থেকে টিকেট ব্ল্যাক করছি। কিন্তু এই বছর ব্ল্যাক করে কোনো শান্তি পাচ্ছি না। কিছু টিকেট দামে বেশি বিক্রি করতে পারলেও, শো শুরুর পর নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামেও বিক্রি করতে হচ্ছে। যে কারণে আমরা যারা ব্ল্যাক করি তারা কোনো টাকা পাচ্ছি না।’
কেন ব্ল্যাকে টাকা আসছে না জানতে চাইলে মনু বলেন, ‘আমরা সিনেমা হলের মালিকের কাছ থেকে টিকেট নিয়েছি ডিসি ৮০ টাকা করে। আর তা ব্ল্যাকে বিক্রি করছি ১২০ টাকা করে। ঈদের দিন দুই শো হাউজফুল ছিল, সে হিসাবে লাভ হয়েছে। কিন্তু পরের দিন থেকেই অবস্থা খারাপ। কারণ গতকাল থেকে দর্শক কিছুটা কমেছে। শো শুরু হওয়ার আগে ১২০ টাকায় টিকেট বিক্রি করতে পারলেও, শো শুরু হওয়ার পর ৮০ টাকার টিকিট বিক্রি করতে হয় ১০ টাকা লসে ৭০ টাকায়। কিন্তু সিনেমা হলের মালিককে আমাদের কিন্তু ৮০ টাকা করেই দিতে হচ্ছে। এতে আমরা লসে ব্ল্যাক করছি।’
তার মানে সিনেমা হলের মালিকের সহযোগিতায় আপনারা ব্ল্যাক করেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মনু বলেন, ‘আসলে ভাই বিষয়টি এমন নয়। আমরা এই সিনেমা হলে মোট ২৩ জন স্টাফ কাজ করি। সারা বছর তেমন বেতন পাই না। এর পরও চাকরি করি, বছরের দুই ঈদে টিকেট ব্ল্যাক করে টাকা কামানোর আশায়। কারণ এই দুই ঈদে আমরা স্টাফরা যে টাকা পাই তা দিয়েই সারা বছর চলতে হয়। এই বিষয়টি আমাদের হলের মালিকসহ সবাই জানেন।’
মতিঝিলে অবস্থিত মধুমিতা সিনেমা হলেও একই অবস্থা দেখা যায় গতকাল। তবে ঈদের দিনের তুলনা পরের দিন দর্শক বেড়েছে দাবি করে টিকিট বিক্রেতা রহমত আলী বলেন, ‘আমাদের এখানে টিকিট ১০০ টাকা করে, কিন্তু আমরা বিক্রি করছি ১২০-১৩০ টাকা করে। গত বছর আমরা এই টিকেট ৩০০ টাকায় বিক্রি করছি। এভাবে চলতে থাকলে তো আর সিনেমা হলে চাকরি করতে পারব না। সারা বছর কীভাবে চলব সেটা নিয়েই চিন্তায় আছি।’
পাশের অভিসার সিনেমা হলে সিনেমা শুরু হওয়ার পর ৭০ টাকার টিকেট ব্ল্যাকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেল। অভিসার সিনেমা হলের কর্মচারী ও ব্ল্যাকে টিকেট বিক্রেতা লাল মিয়া বলেন, ‘সিনেমা দেখে সবাই প্রশংসা করছে কিন্তু হলে দর্শক কম। রাতে খেলা দেখে দিনে আর সিনেমা দেখতে আসে না।’
‘পাঙ্কু জামাই’ ছবিটি সারা দেশে ৫০টি সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ‘সুপার হিরো’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে ৮০টি সিনেমা হলে। ‘চিটাগাংইয়া পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া’ মুক্তি পেয়েছে ৯০টি সিনেমা হলে। ‘পোড়ামন-২’ মুক্তি পেয়েছে ২২টি সিনেমা হলে। ‘কমলা রকেট’ ছবিটি মুক্তি দেওয়া হয়েছে দুটি সিনেমা হলে।