জামিনের পর ‘গারদীয়’ শুভেচ্ছা জানালেন আসিফ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে দায়ের করা মামলায় সংগীতশিল্পী আসিফ আকবরকে জামিন দিয়েছেন আদালত। তিন যুক্তিতে জামিন পেয়েছেন দেশের জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পী গতকাল সোমবার।
জামিন পাওয়ার পর রাতে সারা দেশের ভক্তদের উদ্দেশে আসিফ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস লিখেছেন।
সেখানে আসিফ বলেন, ‘বাংলাদেশের সবাইকে সালাম এবং গারদীয় শুভেচ্ছা। আমার অবর্তমানে (অনুপস্থিতিতে) যাঁরা দোয়া করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি আমার মরহুম মা-বাবার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা। যাঁরা আমাকে নিয়ে সত্য মিথ্যা প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁদের জন্য সঠিক উত্তর নিয়ে হাজির হবো শীঘ্রই।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসা করেন আসিফ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কারা কর্তৃপক্ষ, কারাবন্দি ভাইদের জন্য অনেক ভালোবাসা, কারণ বাংলাদেশের একজন শিল্পী হিসেবে তাঁরা আমার ব্যাপক যত্ন নিয়েছেন।’
আসিফ আরো বলেন, ‘আমার ফ্যানদের অনুরোধ করছি, সবাই শান্ত থাকুন, যেকোনো রকম উত্তেজনা পরিহার করুন, আমি ভালো আছি। সবার কাছে দোয়া চাই। আমি আপনাদের ভালোবাসার কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ, ভালোবাসা অবিরাম।’
গত ৪ জুন সন্ধ্যায় আইসিটি আইনে দায়ের করা মামলার এজাহারে গীতিকার শফিক তুহিন অভিযোগ করেন, ১ জুন রাত ৯টার দিকে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সার্চলাইট নামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসিফ আকবর অনুমতি ছাড়াই তাঁর সংগীতকর্মসহ অন্যান্য গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীর ৬১৭টি গান সবার অজান্তে বিক্রি করেন।
এরপর গত ৫ জুন দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শিল্পী ও সুরকার শফিক তুহিনের দায়ের করা মামলায় আসিফ আকবরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাঁর বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় আসিফ আকবর ছাড়া আরো চার-পাঁচজন অজ্ঞাত আসামি রয়েছে।
৬ জুন আসিফ আকবরকে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম কেশব রায় চৌধুরীর আদালতে হাজির করা হয়। তখন পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। অন্যদিকে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন আসিফের আইনজীবী। শুনানি শেষে আদালত আসিফ আকবরকে পাঁচ দিনের রিমান্ড নেওয়ার আবেদন নামঞ্জুর করে দেন। পরে জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠান আদালত।
অভিযোগে আরো বলা হয়, আসিফ আকবর আর্ব এন্টারটেইনমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে গানগুলো ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে ট্রু-টিউন, ওয়াপ-২, রিংটোন, পিআরবিটি, ফুলট্রেক, ওয়াল পেপার, অ্যানিমেশন, থ্রি-জি কনটেন্ট ইত্যাদি হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যবহার করে অসাধুভাবে ও প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন।
পরে ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শফিক তুহিন ২ জুন রাত ২টা ২২ মিনিটে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে অনুমোদন ছাড়া গান বিক্রির এ ঘটনা উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টের নিচে আসিফ আকবর নিজের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অশালীন মন্তব্য করেন এবং হুমকি দেন।
মামলার এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, পরের দিন রাত ৯টা ৫৯ মিনিটে আসিফ আকবর তাঁর প্রায় ৩২ লাখ লাইকার সমৃদ্ধ ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে আসেন। ৫৪ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড লাইভ ভিডিওর ২২ মিনিট থেকে তাঁর বিরুদ্ধে অবমাননাকর, অশালীন ও মিথ্যা-বানোয়াট বক্তব্য দেন।
ভিডিওতে আসিফ আকবর শফিক তুহিনকে শায়েস্তা করবেন—এ কথা বলার পাশাপাশি ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, তাঁকে যেখানেই পাবেন, সেখানেই প্রতিহত করবেন। এই নির্দেশনা পেয়ে আসিফ আকবরের ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে হত্যার হুমকি দেন।
মামলায় আরো বলা হয়, আসিফ আকবরের এই বক্তব্য লাখ লাখ মানুষ দেখেছে। তিনি উসকানি দিয়েছেন। এতে তাঁর (শফিক তুহিন) মানহানি হয়েছে।