‘বারী স্টুডিও’ এখন মসজিদ, টেকনিশিয়ান খাদেম
তেজগাঁও এলাকার পূর্ব তেজতুরীবাজারে অবস্থিত ‘বারী স্টুডিও’ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে এক স্বনামখ্যাত স্টুডিও। এফডিসির পর এটিই একসময় ছিল পরিচালক ও কলাকুশলীদের ছবি নির্মাণের জন্য পছন্দের স্টুডিও। ঢাকার দ্বিতীয় বেসরকারি এই স্টুডিওটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী এম এ বারী। তিনি মগবাজার এলাকায় ষাটের দশকের শুরুর দিকে ইস্টার্ন থিয়েটার নামে একটি স্টুডিও তৈরি করেন। পরে ১৯৬৮ সালের দিকে সরকারি নির্দেশে স্টুডিওটি বন্ধ হয়ে যায়। দুই বছর পর, ১৯৭০ সালে বারী তেজতুরীবাজারে এই বারী স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন। ষাট থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত এখানে প্রায় পাঁচশ ছবির কাজ হয়েছে। ২০০০ সাল পর্যন্তও চলচ্চিত্র ও নাটকের ছোটখাটো কাজ এখানে হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর স্টুডিওটিকে টিকিয়ে রাখা যায়নি। ২০০০ সালের পর বন্ধ করে দিতে হয় এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটিকে।
চলচ্চিত্রের কাজ বন্ধ হলেও এখন এখানে নামাজ ও ইবাদত-বন্দেগি করেন মুসল্লিরা। ‘বারী স্টুডিও’ এখন ‘মসজিদুল বারী তা’য়ালা’। এই স্টুডিওর একসময়কার টেকনিশিয়ান নুরুজ্জামান বাবু এখন মসজিদের খাদেম।
স্টুডিও থেকে মসজিদে পরিণত হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মসজিদের খাদেম নুরুজ্জামান বাবু বলেন, “এই স্টুডিওটি বন্ধ হয়ে যায় ২০০০ সালের দিকে। আমি এখানে সাউন্ড টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতাম। ১৯৯০ সাল থেকে আমি কাজ শুরু করি। কিন্তু স্টুডিও বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমি বাড়িতে চলে যাই। আমার বাড়ি বরিশাল, সেখানে করার মতো তেমন কোনো কাজ ছিল না আমার জন্য। যে কারণে আমি মাঝেমধ্যে ‘বারী স্টুডিও’র মালিকের ছেলে ইসমাইল হোসেন মাসুদ স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতাম। ২০১৬ সালের দিকে হঠাৎ তিনিই আমাদের ফোন দিয়ে ঢাকায় আসতে বলেন। আমি তো অবাক, স্যার কেন আমাকে ডাকবেন, তা হলে কি স্টুডিও আবারও শুরু হবে? তাড়াহুড়ো করে ঢাকায় আসি। স্যারের সঙ্গে দেখা করার পর জানতে পারি, এই ‘বারী স্টুডিও’কে তাঁরা মসজিদ করার চিন্তা করছেন। আমি মসজিদ শুরু হওয়ার আগে থেকেই এখানে খাদেম হিসেবে যোগ দিই। মৃত্যু পর্যন্ত এখানেই কাজ করতে চাই।”
মসজিদে কতজন আছেন জানতে চাইলে বাবু বলেন, ‘হুজুর, মোয়াজ্জেম, আরবি শিক্ষকসহ আমরা এখানে মোট ছয়জন আছি। সবার খরচ দেন বারী স্যারের বড় ছেলে ইসমাইল হোসেন মাসুদ স্যার। শুধু আমাদের খরচ নয়, এই মসজিদে তিন টনের দশটা এসি আছে। আধুনিক টাইলস দিয়ে অনেক টাকা খরচ করেছেন তাঁরা। সব তিনি নিজের টাকায় করেছেন, কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি। এখনো নিচ্ছেন না।’
‘বারী স্টুডিও’র স্মৃতিচারণও করেন বাবু। বলেন, ‘এখান একসময় অনেক শুটিং হতো, এডিটিং হতো, ডাবিং হতো। এখানে আসলে একটা সিনেমার সব কাজই করা হতো। আমি যখন কাজ করেছি, তখন আমরা প্রায় ৩০ জনের মতো কাজ করতাম এখানে। শুনেছি আগে আরো বেশি মানুষ এখানে কাজ করতেন। এটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই বড় বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন। আবার অনেকেই আমার মতো বাড়ি চলে যান।’
একসময় চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন, আর এখন কাজ করছেন মসজিদে। এটা নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই বাবুর। বলেন, ‘আসলে সব কাজই এবাদত। বিষয় হচ্ছে আমরা যে কাজই করি না কেন, সেটি আমাদের মন দিয়ে করা উচিত। যখন স্টুডিওতে কাজ করেছি, তখন মন দিয়ে কাজ করেছি বলেই হয়তো আমাকে ডেকে আরেকটা কাজ দিয়েছেন। তবে আমার কাছে মসজিদের কাজটি ভালো লাগছে। মৃত্যু পর্যন্ত কাজটি করতে চাই।’