‘প্রথম রোজায় বারবার আব্বার কথাই মনে হচ্ছে’
‘রোজার মাসে আমরা কোন কাজ করিনা, আব্বা পছন্দ করতেন না। এমন হয়েছে যে রোজার সময় একবার শুধু অফিস থেকে ঘুরে এসেছি, কোন কাজ করা হয়নি। সারাদিন এবাদত বন্দিগী আর সেহরি আর ইফতারের আয়োজন করতে করতে কেটে যেতো। আব্বা সব সময় আমাদের পরিবারের সবাইকে নিয়ে এক সাথে বসে সেহরি ও ইফতার করতেন। একই টেবিলে বসে সেহরি খেলাম, কিন্তু আব্বা নেই, মনে হলেই চোখে পানি চলে আসে। আমি ছোটবেলা থেকেই সব সময় আব্বার পাশে থাকতাম, মৃত্যু পর্যন্ত একসাথে ছিলাম।’। কথাগুলো বলছিলেন নায়করাজ রাজ্জাকের ছোট ছেলে সম্রাট। রাজ্জাক গত বছর ২১ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁরই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে চোখে পানি জমে সম্রাটের।
রোজা চলাকালের স্মৃতি নিয়ে সম্রাট বলেন, ‘সেহরির সময় কোনটা খেলে রোজা রাখতে ভালো হবে, কোনটা খাওয়া যাবেনা, এসব বিষয়ে আব্বা অনেক সচেতন ছিলেন। আর পরিবারের সবাইকে নিয়ে এক সাথে বসে সেহরি করাটা ছিলো আব্বার অনেক পছন্দের। বিষয়টি আমরা সবাই উপভোগ করতাম। গত বছর অবশ্য অসুস্থতার কারণে আব্বাকে আমরা সেহরির সময় ডাকিনি, কিন্তু আব্বা ঠিক উঠে যেতেন। যখন আমরা বলেছি তোমার খেতে হবে না, শরীর খারাপ, রোজা রাখতে হবে না। তখন তিনি বলতেন, আমার তো খিদে পেয়েছে। শরীর খারাপ নিয়েও আমাদের সাথে বসে সেহরি খেয়েছেন। আজ প্রথম রোজায় বারবার আব্বার কথাই মনে হচ্ছে।’
সম্রাট আরো বলেন, ‘আব্বা বিকেল থেকেই ইফতার কেনা শুরু করতেন। বিভিন্ন ধরনের ইফতার, বাসায় যা-ই রান্না হোক বাইরের ইফতার লাগবেই। আবার অনেক ধরনের ফল দিয়ে একসাথে মিশিয়ে জুস বানাতেন। আর রোজা শুরু হলেই মসজিদের আশপাশে জাকাতের কাপড়ের দোকান দেখা যায়। আব্বা সেখান থেকে পছন্দ করে কাপড় কিনতেন নিজের হাতে। সবগুলো জমিয়ে রেখে ২৭ রমজান থেকে বিতরণ শুরু করতেন। দেখা যেতো সেদিন বাসার সামনে ৫-৬শ মানুষ নিয়ে একসাথে ইফতার করছেন, আবার তারপর সবাইকে জাকাতের কাপড় দিতেন নিজের হাতে। আমি সবগুলো কাজের সাথে থাকতাম। আমরা এক সাথেই ৫ ওয়াক্ত নামাজ করতাম। সব কিছুই ঠিক আছে শুধু আব্বা নেই আমাদের মাঝে, সবাই আব্বার জন্য দোয়া করবেন, যেখানেই থাকুক আল্লাহ যেন তাকে ভালো রাখেন।’