অভিনেতা ভানুর ৯৫তম জন্মদিন
সাদাকালোর সেই সেলুলয়েডের ম্যাজিকে যতবারই তাঁকে দেখা গেছে, ততবারই অবাক হয়েছেন দর্শকরা। কখনো স্যুট-প্যান্ট, আবার কখনো কেতাদুরস্ত ধুতি-পাঞ্জাবি পরে ঝকঝকে বাঙাল ভাষায় দর্শকদের মনোরঞ্জনে যাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল, তিনি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি নিজেকে সব সময়ই এক্কেবারে বাংলাদেশের পোলা বলে পরিচয় দিতেই সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। আজ তাঁর জন্মদিন। ১৯২০ সালের ২৬ আগস্ট বাংলাদেশের ঢাকার বিক্রমপুরের পাচগাঁওয়ে জন্ম হয় তাঁর। আসল নাম সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ডাকনাম ছিল ভানু। পরবর্তীকালে সাম্যময় থেকে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় নামেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। বাবা জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। মা সুনীতি দেবী। জিতেন্দ্রনাথের ছাত্র ছিলেন পরবর্তীকালের দুই বিখ্যাত অভিনেতা শিশির কুমার ভাদুড়ি ও অহীন্দ্র চৌধুরী।
চল্লিশের দশকের শুরুতে ভানু ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক হন। সেই সময় কিছুদিন ঢাকা রেডিওতে ঘোষক হিসেবেও কাজ করেন। জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু পরীক্ষা আর তাঁর দেওয়া হয়নি। ঢাকা শহরে সেই সময় বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তর অনুরক্ত হয়ে ওঠেন ভানু। ফলে ১৯৪১ সালে রাজরোষে পড়লেন তিনি। বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য ঢাকা শহর ত্যাগের পরোয়ানা জারি হয়। তারপরেই সাম্যময় ঢাকা ছেড়ে চলে যান কলকাতায়। পরীক্ষা আর দেওয়া হয় না। কলকাতায় চারু এভিনিউতে থাকতেন তিনি। টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানিতে একটা চাকরিও জুটে যায়। সেই সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন অফিস ও ক্লাবের অনুষ্ঠানে কৌতুক নকশা পরিবেশন করতে থাকেন এবং রীতিমতো জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠেন সে সময়। সেই জনপ্রিয়তা একসময় এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছায় যে তিনি ১৯৪৩ সালে ‘ঢাকার গাড়োয়ান’ নামে একটি কৌতুক নকশার রেকর্ড বের করেন।
ভানু কোনোদিনই ভাবেননি যে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনেতা হবেন। বরং মঞ্চে অভিনয়ের দিকেই তাঁর ঝোঁক ছিল সবচেয়ে বেশি। এরই মধ্যে ১৯৪৬ সালে ভানু বিয়ে করেন বেতার শিল্পী নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বিয়ের তিনদিন পরেই প্রথম ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান ভানু। ছবির নাম ছিল ‘জাগরণ’। অনেকে বলেন, স্ত্রী-ভাগ্যেই নাকি ভানুর উত্তরণ। তবে সিনেমার জগতে ভানুর প্রথম বাণিজ্যিক সফল ছবি নির্মল বসুর ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। এই ছবিটি বাংলা কমেডি সিনেমার ইতিহাসে একটি অন্যতম মাইলস্টোন। এক ছবিতেই বাজি মাত করেন ভানু। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে সেই সময়কার বাংলা ছবির দিকপাল অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু তার মধ্যে ভানু বিজয়ীর মুকুটটা নিজের মাথায় পরে নেন। ওই ছবিতে ভানুর সেই বিখ্যাত সংলাপ ‘মাসিমা মালপো খামু’ আজও পুরোনো হয়নি।
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনয় করেছেন অন্তত ৩০০ ছবিতে। আর প্রায়ই ছবিতে তাঁকেই তৈরি করতে হয়েছে কৌতুক। সংলাপ থেকে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে নিজেই গড়ে নিয়েছিলেন কমেডির নিজস্ব ভুবন। সমসাময়িকদের পেছনে ফেলে ভানুর নাম শিরোনামেই তৈরি হয় ‘ভানু পেলো লটারি’ কিংবা ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’-এর মতো ছবি। ভানু মনে করতেন বাঙালি কান্নাপ্রিয় জাতি। তাই বাঙালির কান্নাপ্রীতি ভোলানোর প্রয়াসেই ভানুর হাসির হুল্লোড় তৈরি করতেন, যা অরুণ মুখোপাধ্যায়কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভানু নিজের মুখেই বলেছেন। ভানুজায়া নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণা থেকে জানা যায়, বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু নাকি মাঝে মাঝেই ফোন করে ভানুকে ডেকে পাঠাতেন বাড়িতে। বলতেন, ‘ওরে ভানু আমার মাথাটা যে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল, শিগিগির আয়, একটু রস ঢেলে মাথাটা ছাড়িয়ে দিয়ে যা।’ ১৯৬৮ থেকে ৬৯। প্রযোজকদের সঙ্গে টেকনিশিয়ানদের প্রবল সংঘাত বাধল। ভানু টেকনিশিয়ানদের পক্ষ নেওয়ায় পাঁচ বছরের জন্য ব্ল্যাক লিস্টেড করা হলো ভানুকে। এই ঘটনার প্রায় ১২ বছর আগে অভিনয়কে পেশা করবেন বলে আয়রন অ্যান্ড স্টিল কন্ট্রোল কোম্পানির চাকরিটা ছেড়েছিলেন। ফলে ফিল্ম-জগৎ হারিয়ে আঁকড়ে ধরলেন যাত্রাজগৎকে। কিছুদিনের মধ্যেই যাত্রাজগতে তোলপাড় করলেন তিনি। ভানুজায়া নীলিমা তাঁর স্মৃতিচারণায় বলেছেন, যে মানুষটি নরম বিছানা ছাড়া শুতে পারতেন না, তিনি মাঠেঘাটে ময়দানে শতরঞ্চি পেতে গাছের তলায় শুয়ে থেকেছেন।
যিনি বাড়ি থাকলে ১২টা থেকে ১টার মধ্যেই মাথায় পানি ঢেলে খেয়েদেয়ে না ঘুমিয়ে পারতেন না। বাড়িতে যতই অতিথি আসুক এই নিয়মের ব্যতিক্রম হতে পারত না। উল্টোপাল্টা খাবার খাওয়াও তিনি পছন্দ করতেন না। তিনি দিনের পর দিন ফুলুরি-মুড়ি, কিংবা জিলিপি খেয়ে স্নান-ঘুম না করে কাটিয়ে দিয়েছেন। ভানুর উল্লেখযোগ্য যাত্রাপালার মধ্যে ছিল ‘গোপাল ভাঁড়’, ‘বৈকুণ্ঠের উইল’, ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’, ‘ভৈরবমন্ত্র’, ‘শ্রীযুক্ত আলিবাবা’ প্রভৃতি।
ভানু ছিলেন যথেষ্ট জেদি মানুষ। বাঙাল পোলার একগুয়েমিতার কথা অজানা ছিল না সেই সময় কারোরই। একবারের এক ঘটনা, পশ্চিমবঙ্গের বুকে রাম চ্যাটার্জি তখন দাপুটে নেতা। চন্দননগরের এই নেতা তারকেশ্বরের বিধায়ক ছিলেন। সেই সময় মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক দলের সর্বেসর্বা ছিলেন। রাজ্যের মন্ত্রীও হন তিনি। পেশিবান মস্তান টাইপ বলেও তাঁর ঈষৎ কুখ্যাতি ছিল। সেই রাম চ্যাটার্জির কয়েকজন চ্যালাচামুন্ডা এসে একদিন ভানুকে বলল, অমুকদিন রামদার ফাংশন আছে সময়মতো পৌঁছে যাবেন। তার মানে? ভানু তো অবাক। বললেন, কে আপনাদের রামদা? তিনি বললেই আমাকে যেতে হবে নাকি? রাম চ্যাটার্জির ছেলেরা তো ভানুর এই কথায় হতবাক। সে কি মশাই। কে রামদা জিজ্ঞেস করছেন। রাম চ্যাটার্জির নাম শুনলে লোকে বাপ বাপ বলে দৌড়ায়। আর আপনি এসব বলছেন? শুনুন, গেলে ভালো, নইলে তুলে নিয়ে যাব।
এবারে স্বরূপ ধরলেন ভানু। খাস বাঙাল ভাষায় বলে উঠলেন, নিয়া যাইতে পার, তবে আমার লাশ নিতে লাগব। জ্যান্ত অবস্থায় তো আমারে নিতে পারবা না। কও গিয়া তোমাগো বাপেরে।
ছেলেরা ফিরে গিয়ে রাম চ্যাটার্জিকে সবিস্তারে ঘটনাটা বলল। তিনি শুনেই লাফিয়ে উঠলেন। বললেন, করেছিস কি! বাঙালের পোলাকে খেপিয়ে এসেছিস! ও যদি একবার বলে আসবে না তো কার সাধ্যি আনে!
কদিন পর রাম চ্যাটার্জি স্বয়ং সদলবলে হাজির ভানুর বাড়িতে। ক্ষমাপ্রার্থনা এবং অনুরোধ। ‘ভাই কিছু মনে কোরো না। ছেলেদের তুমি ক্ষমা করে দাও। তোমার যখন সময় হবে একবার ফাংশনে এসে দাঁড়িও, নইলে আমার প্রেস্টিজ থাকবে না।’
পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে রাম চ্যাটার্জি বললেন, ‘তবে আমি কিন্তু তোমায় তুলেই নিয়ে যেতে পারতাম।’ এবার ভানু তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলে উঠলেন, পাগল! এত খাবলা খাবলা নাকি! আমারে পাইতা কই, আমি তো এক ছুটে গিয়া ছাদে উঠতাম। রাম চ্যাটার্জি বললেন, তাহলেই রেহাই পেতে ভেবেছো? ভানুর সাফ উত্তর, পাইতাম, তোমার মাথায় তো আর মাসল নাই। উপর থিকা একখানা আধলা ইট ঝাড়তাম তোমার মাথায়, তখন যাইতা কই? এরপরেই হাসিতে ফেটে পড়েন দুজনে। এই রাম চ্যাটার্জি একবার ভানুর বিষয়ে অনন্ত সিংহ (চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন খ্যাত)-কে বলেছিলেন, জানেন তো অনন্ত দা, আমি ওকে ভীষণ ভয় পাই। ও আমার চেয়ে সাহসী। আবার বলিউডের হীরালাল তো ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে বলতেন, ও তো ডাকু হ্যায়। কারণ, ১৯৪৫-৪৬ সালে কোনো এক কারণে হীরালাল ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে প্রচণ্ডভাবে প্রহৃত হন।
এক অদ্ভুত মানুষ ছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। বিপ্লবী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে তাঁর, তবু কোনোদিন নিজেকে স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে দাবি করেননি। কমিক রোলেই নিজেকে বেঁধে রেখেছেন।
একবার এক কমিউনিস্ট যুবক ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে মার্কসবাদ সম্পর্কে জ্ঞান দিতে এসেছে। সব শুনেটুনে ভানু বললেন, আজ থেকে ৫৯ বছর আগে আমার মা-বাবা আমার নাম রেখেছিলেন সাম্যময়। তাহলে আপনি বুঝতে পারছেন তো, আমি কোনো পরিবার থেকে এসেছি। দ্যাট আই অ্যাম আ কমিউনিস্ট, আই বিয়ার ইট ইন মাই নেম। আপনি আমার চেয়ে ভালো কমিউনিস্ট কী করে হবেন? কমেডিয়ান ভানুর মুখে এমন সংলাপ ভাবা যায়!
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পদ ছিল তাঁর মুখের ভাষা। ভানু তাঁর কৌতুকে নানা সময়ে সমাজের নানা বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। বাঙালি দাম্পত্য নিয়েও রয়েছে ভানুর নানা অকাট্য মন্তব্য। যেমন, বাঙালি কর্তাদের গিন্নির কাছে ৪০ মিনিট ধরে চা চাইলেও নাকি শুনতে হয় পাঁচ মিনিটের মধ্যে দিচ্ছি। এ ছাড়া ভানুর দাবি, কর্তার চোখে ধুলো পড়লে ডাক্তার খরচ হয় ২৫ টাকা, আর গিন্নির চোখে শাড়ি পড়লে গ্যাঁট থেকে বেরিয়ে যায় পাক্কা ২৫০ টাকা। এই ধরনের অসংখ্য রসিকতা ভানুর জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। অনেকে ভানুকে ভাঁড় ভাবতেন। আসলে আগেকার দিনে ভাঁড় বলা হতো পরামানিকদের। কারণ, পরামানিকরা তাদের ক্ষৌরকার্যের জিনিসপত্র বহন করার জন্য ভাঁড় ব্যবহার করতেন। যে কারণে বাবুদের বাড়িতে দাড়ি কামাতে পরামানিকরা ঢুকলে বলা হতো ভাঁড় এসেছে। তাই কেউ ভানুকে ভাঁড় বললে তিনি নিজেই জানিয়ে দিতেন, আমি খাঁটি বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং নিজের কামানো ছাড়া কখনো অন্য কারোর কামিয়ে দিইনি। অর্থাৎ কোনো অর্থেই আমি ভাঁড় নই। ভানু জীবদ্দশায় বলে গিয়েছেন, আধুনিককালে সারা পৃথিবীতে যত শিল্পী জীবিত আছেন, অর্থাৎ কাজ করছেন তার মধ্যে আমিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তার লজিক্যাল কারণ হলো, আমার চেহারা। ২৯ ইঞ্চি বুকের মাপ। সেই সঙ্গে মুখশ্রী ও গলার আওয়াজ। যা লইয়া ৩৬ বছর টিকিয়া আছি। পৃথিবীতে কোনো শিল্পী এতগুলান ড্র-ব্যাক লইয়া টিকিয়া থাকে না।
আজ ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৯৫তম জন্মদিন। ভানুকে নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দিকপালরা নানা মন্তব্য করেছেন। যেসব দিকপাল মানুষের অনেকেই আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। সেই সমস্ত দিকপালদের করে যাওয়া নানা সময়ের ভানু সম্পর্কিত মন্তব্য :
বিকাশ রায় (অভিনেতা) : ভানু ইজ ইকোয়াল টু কমেডি প্লাস সিরিয়াস! আর আমি ইজ ইকোয়াল টু সিরিয়াস। লজিকের হিসাবে ভানু আমার চেয়ে বড় অভিনেতা। ওকে বলিনা বটে কিন্তু আপনাদের কাছে এই শেষ বয়সে কথাটা স্বীকার করে গেলাম।
তরুণ কুমার (অভিনেতা) : ভানুদা সুদক্ষ ও ক্ষমতাবান অভিনেতা। তবেই না লেখক তাঁর নামে গল্প লেখেন, ‘ভানু গোয়েন্দা, জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’। এটা একটা জ্বলন্ত প্রমাণ। অনেক কৌতুক অভিনেতা আসবেন, যাবেন। কিন্তু চলচ্চিত্র, নাটক এবং যাত্রার ইতিহাসে ভানুদার নাম মুছে যেতে শতাব্দী পেরিয়ে যাবে। কেননা, ভানুদা, ভানুদাই।
তপন সিনহা (চলচ্চিত্র পরিচালক) : আমার মনে হয় ভানুবাবু কমেডিতে একটা ধারার প্রবর্তন করেছেন। ভাঁড়ামো না করে হাস্যরসের সারবস্তুটিকে সঠিক ও সপ্রতিভভাবে প্রযুক্ত করাই তাঁর লক্ষ্য। তাই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ এক নতুন স্কুলিং সৃষ্টি করেছেন।
সত্যজিৎ রায় (চলচ্চিত্র পরিচালক) : ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অজস্র ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং যেখানে বিশেষ কিছু করার নেই সেখানেও করেছেন। আশ্চর্য এই যে, যাই করেছেন, তা বহরে ছোট হোক বা বড়ই হোক, তার মধ্যে তাঁর সাবলীলতার পরিচয় রেখে গেছেন। সর্বজন প্রশংসিত বিরল অভিনেতাদের মধ্যে ভানুবাবু একজন। আমার কোনো ছবিতে যে তিনি আজ পর্যন্ত অভিনয় করেননি তার মানে এই নয় যে, আমি তাঁর অভিনয়ের কদর করি না। প্রথমে মঞ্চে ‘নতুন ইহুদী’ এবং পরে চলচ্চিত্রে ‘বসু পরিবার’, ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর সময় থেকেই ভানুবাবুর সহজ ও বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করে এসেছে।