অভিনেতা সিরাজ হায়দারকে নিয়ে তারকাদের শোক
বড় পর্দার পরিচিত মুখ সিরাজ হায়দার মারা গেছেন আজ বৃহস্পতিবার। তাঁর মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে চলচ্চিত্রাঙ্গনে। এনটিভি অনলাইনের কাছে সহ-অভিনেতা ও তারকারা প্রকাশ করেন শোক।
ওমর সানি বলেন, ‘সিরাজ হায়দার সাহেব ছিলেন আমার বাবার বন্ধু, যদিও আমার বাবার চেয়ে কিছুটা ছোট ছিলেন, তারপরও তাঁদের মধ্যে সুন্দর একটা বন্ধুত্ব ছিল। সে হিসেবে আমার সঙ্গে শুধু সিনিয়র শিল্পীই নন, তার বাইরেও একটা সম্পর্ক ছিল। তিনি শুধু একজন শিল্পী নন, একজন শিক্ষক ছিলেন চলচ্চিত্রের জন্য। তিনি যেমন অভিনয় করেছেন, তেমনি ছবি পরিচালনা করেছেন, গল্প লিখেছেন। আমরা আমাদের মাথার ওপর ছায়াগুলো হারিয়ে ফেলছি।’
সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন জানিয়ে সানি বলেন, ‘সিরাজ স্যারকে সবাই সব সময় সাধারণ একজন মানুষ হিসেবেই দেখেছেন। আমার একবার ভাগ্য হয়েছিল তাঁর বাড়িতে যাওয়ার, সেখানে গিয়ে দেখেছি তিনি কতটা সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য ছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন আর্মি অফিসার। কিন্তু উনার চলফেরায় তা কখনো প্রকাশ পায়নি।’
নায়ক ফেরদৌস বলেন, ‘উনার সঙ্গে খুব বেশি কাজ করা হয়নি। কিন্তু দেখা হলেই হিরো বলে চিৎকার করে ডাক দিতেন, পায়ে হাত দিয়ে সালাম করার সময় সুন্দর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। এমনভাবে কথা বলতেন মনে হতো শিক্ষক পড়াচ্ছেন। উনার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। আজ সকালে উনার মৃত্যুর খবর শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আল্লাহ যেন উনাকে ভালো রাখেন।’
এ প্রজন্মের নায়ক বাপ্পী চৌধুরী বলেন, ‘সিরাজ স্যারের সঙ্গে বেশ কিছু ছবিতে কাজ করেছি, সব সময় বাবার মতো মনে হতো উনাকে। সব সময় অভিনয় নিয়ে কথা বলতেন, অভিনয়ের ভুলগুলো ধরিয়ে দিতেন। আমরা শুধু একজন অভিনতা নয়, একজন ভালো মানুষকে হারিয়েছি। জানি না কীভাবে এই শূন্যতা পূরণ হবে।’
শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়েদ খান বলেন, ‘শিল্পীদের জন্য তিনি সব সময় চিন্তা করতেন, দুস্থ শিল্পীদের কীভাবে সম্মান বাঁচিয়ে তার পাশে দাঁড়ানো যায়, তার পরামর্শ দিতেন তিনি। প্রচণ্ড আত্মসম্মানবোধ নিয়ে তিনি চলাফেরা করতেন। আমি শিল্পী সমিতি পরিচালনা করার সময় তাঁর কথাগুলো উপদেশ হিসেবে মনে রেখেছি।’
আজ ভোর ৬টায় সিরাজ হায়দার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সিরাজ হায়দার অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। ১৯৬২ সালে নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন ১৪ আগস্ট পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় দিবসে টিপু সুলতান নাটকে করিম শাহ চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয়ে পথচলা শুরু করেছিলেন। দীর্ঘ সময়ে তিনি অভিনয় করেছেন যাত্রা, মঞ্চ, রেডিও, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে।
মুক্তিযুদ্ধের পর চলচ্চিত্র পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুনের সহকারী হিসেবে ‘জল্লাদের দরবার’ নামক চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্রের নাম সুখের সংসার। নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত এ চলচ্চিত্রে সিরাজ হায়দার খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন।
মঞ্চনাটক নির্দেশনা দিয়েছেন মাত্র ১৯ বছর বয়সে। ১৯৭৬ সালে তিনি রঙ্গনা নাট্যগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন এবং অনেক নাটকের নির্দেশনা দেন। সিরাজ হায়দার দুটি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেছেন। এদের একটি ‘আদম বেপারী’, যা মুক্তি পায়নি। অন্যটির নাম ‘সুখ’।
সিরাজ হায়দারের স্ত্রী মিনা হায়দারও একজন অভিনেত্রী। তাঁদের পুত্র লেনিন হায়দার একজন নাট্য পরিচালক।