‘মানুষের বেদনার কথা বুঝতেন হুমায়ূন আহমেদ’
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের আজ ৬৯তম জন্মদিন। হুমায়ূন আহমেদের পাঁচটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘শ্যামল ছায়া’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘দুই দুয়ারী’ ও ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র সংগীত পরিচালক ও সুরকার মাকসুদ জামিল মিন্টু। এ ছাড়া হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে অসংখ্য কাজ করেছেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন মাকসুদ জামিল মিন্টু।
এনটিভি অনলাইন : হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে টানা ২০ বছর আপনি কাজ করেছেন। তাঁর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?
মাকসুদ জামিল মিন্টু : হুমায়ূন ভাইয়ের ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটক থেকে শুরু করে তাঁর অসংখ্য কাজ আমি করেছি। আমার ক্যারিয়ারের অধিকাংশ ভালো কাজ তাঁর সঙ্গে করা হয়েছে। আমি তাঁকে ভাই বলে সম্বোধন করতাম। আমার প্রতিও তাঁর অনেক শ্রদ্ধা ছিল। হুমায়ূন আহমেদকে শুধু বিশেষ দিনে যে মনে পড়ে, তা নয়। আমার তাঁকে মনে পড়ে সব সময়। তবে তাঁর মৃত্যুর আগে চার বছর আমার সঙ্গে দেখা হয়নি। টেলিফোনে কথা হয়েছিল। সংগীতের বিষয়ে শুধু যদি বলি, হুমায়ূন আহমেদের মতো গীতিকারের এখন বড় অভাব।
এনটিভি অনলাইন : হুমায়ূন আহমেদের শেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র সংগীত পরিচালক ছিলেন আপনি। ছবির প্রিমিয়ারেও আপনার সঙ্গে কি দেখা হয়নি?
মাকসুদ জামিল মিন্টু : না, তখনো দেখা হয়নি। প্রিমিয়ারে আমন্ত্রণ পাওয়ার পরও যেতে পারিনি। কারণ, সেদিন আমার এক আত্মীয় অসুস্থ ছিলেন। এমনকি এই ছবির সংগীতায়োজন করার সময়ও হুমায়ূন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়নি। ছবিটির অধিকাংশ গান সংগৃহীত ছিল। একটি মৌলিক গান হুমায়ূন আহমেদ নিজে লিখেছিলেন। সেটি হলো ‘বাজে বংশী, রাজহংসী নাচে হেলিয়া দুলিয়া’। গানটির সুর করতে তিনি আমাকে টেলিফোনে বলেছিলেন। প্রথমে তিনি গানের একটি মাত্র লাইন লিখেছিলেন। পরে পুরো গানটি তিনি লিখেন। আমাকে তিনি গানের ডেমো পাঠিয়ে দিতে বললে, আমি দিয়েছিলাম। তখন তিনি মজা করে বলেছিলেন, ‘আপনার গলা তো খুব খারাপ।’
যা হোক, গানের রেকর্ডিং হওয়ার সময়ও হুমায়ূন ভাই আসেননি। আমার দুর্ভাগ্য, ছবির প্রিমিয়ারেও আমি যেতে পারিনি।
এনটিভি অনলাইন : হুমায়ূন আহমেদ তাঁর লেখা গানের সুর আপনার কাছ থেকে কীভাবে চাইতেন?
মাকসুদ জামিল মিন্টু : আমার করা সুর তিনি খুব পছন্দ করতেন। কখনো তিনি আগে থেকে বলতেন না সুরটা এমনটা হতে হবে কিংবা এমন করতে হবে। তবে সুর করার আগে গানের দৃশ্যকল্প কেমন হবে, সেটা আমাকে বুঝিয়ে দিতেন তিনি। আর হুমায়ূন আহমেদ অল্পতে খুব মুগ্ধ হতেন। কেউ তাঁকে পাতার বাঁশি দিয়ে গান শোনালেও তিনি মুগ্ধ হতেন। এখনকার অনেক পরিচালক গান শোনার পর মুগ্ধ হতে পারেন না। গান ভালো হলেও বলেন, ‘আরো ভালো হতে পারত বা এভাবে না করে অন্যভাবে করলে ভালো হতো।’
এনটিভি অনলাইন : ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আপনার অভিমত কী?
মাকসুদ জামিল মিন্টু : মানুষের বেদনা ও ভেতরের কথা বুঝতেন হুমায়ূন আহমেদ। মানুষের মনের ভেতরে পৌঁছানোর অসীম ক্ষমতা তাঁর মধ্যে ছিল।