মনের ভেতর বাংলাদেশ ছবির মতো আঁকা : ঋতাভরি
ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল স্টার জলসার মেগা ধারাবাহিক ‘ওগো বধূ সুন্দরী’র মিষ্টি বউ ললিতা। এ নামেই এখন বেশি পরিচিত তিনি। যদিও আসল নাম ঋতাভরি। টালিউডের প্রখ্যাত পরিচালক শতরূপা সান্ন্যালের মেয়ে তিনি।
ছোটপর্দার এ জনপ্রিয় অভিনেত্রী এখন রুপালি পর্দার মাধ্যমে দর্শকের মনে ঠাঁই নিতে চান। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও এবার ‘বাওয়াল’ ছবির নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছেন ঋতাভরি।
এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎ চাইতেই রাজি হয়ে গেলেন। তারপর এক বাদল দিনের সকালে টিপ টিপ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হাজির হলাম তাঁর দরজায়। সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন। কথা শুরুর আগেই টেবিলে হাজির চায়ের কাপ। বৃষ্টিভেজা দিনে উষ্ণ চায়ের কাপে প্রথম চুমুক দিয়েই জানতে চাইলাম, বাংলাদেশ গিয়েছেন কখনো?
উত্তর দেওয়ার আগে এক পশলা হেসে মেঘবালিকার মতো উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন, ‘না, এখনো যেতে পারিনি। তবে আমার মা (পরিচালক শতরূপা সান্ন্যাল) বহুবার বাংলাদেশ গেছেন। ছবির কাজে তো বটেই, ছবির বিভিন্ন শুটিংয়েও মা বাংলাদেশ গেছেন। আর ওখানকার ফিল্ম ফেস্টিভালে মা তো যানই। তাই মায়ের মুখে বাংলাদেশ নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। বলতে পারেন, মনের ভেতর ছবির মতো মনে আঁকা হয়ে গেছে বাংলাদেশ।’
খানিক থেমে আবার শুরু করলেন ‘ললিতা’, ‘আসলে জানেন তো, আমরা যারা বাংলা ভাষায় অভিনয় করি, তখন দুই বাংলার কথা মাথায় রেখেই কাজ করি। অন্তত আমার মা তো তাই বলেন সব সময়। কারণ আমাদের পশ্চিম বাংলার মতোই তো সেখানে হিউজ দর্শক-শ্রোতা রয়েছেন। ফলে তাঁদের পছন্দ-অপছন্দও তো মাথায় রাখতেই হবে।’
বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু আপনাকে ‘ললিতা’ বলেই চেনেন...
প্রশ্ন শেষ করার আগেই খিল খিল করে হেসে উঠলেন ঋতাভরি। বললেন, ‘টাচ উড। এটা ঈশ্বরের আশীর্বাদ যে, প্রথম মেগাতেই আমাকে মানুষজন এত আপন করে নিয়েছেন। আমার তরফেও আপনাদের (বাংলাদেশের) সবার জন্য রইল অনেক অনেক ভালোবাসা।’
কলকাতার টিভি চ্যানেলগুলো বাংলাদেশে কিন্তু বেশ জনপ্রিয়, সেই সঙ্গে আপনারাও...
এবার ঋতাভরির চোখে বিস্ময়, “তাই! আরে আপনাদের (বাংলাদেশের) ছবিও আমরা খুব দেখি। এই তো কয়েকদিন আগে ‘সুতপার ঠিকানা’ ছবিটা দেখলাম। অসাধারণ কনসেপ্ট, অসাধারণ কাজ। আর জানেন, জয়া আমাদের প্রায় পারিবারিক বন্ধুর মতো। তার কাছ থেকেও কত গল্প শুনি বাংলাদেশের। কিন্তু যাওয়া হয়নি। ইচ্ছে তো আছে এবার ফিল্ম ফেস্টে মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশ যাব। দেখি কী হয়।”
আপনি তো টেলিভিশনের অন্যতম টপ স্টার ছিলেন। ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ এবং ‘চোখের তারা তুই’ দুটোই হিট। ওই রকম একটা পজিশনে থাকতে হঠাৎ করে টেলিভিশন ছাড়লেন কেন?
এবারে কিন্তু বেশ গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘রোজ রোজ ১৪-১৫ ঘণ্টা টানা শুটিং করতে পারছিলাম না। এত বছর ধরে টেলিভিশনে কাজ করে একটা বিষয় বুঝেছি যে, দর্শক টেলিভিশন দেখেন, আর ভুলে যান কাজকে। অথচ সিনেমা থেকে যায়। আমি কয়েক বছর ধরে তো বেশ কয়েকটা ছবিতে কাজ করলাম। তাই এখন থেকে ঠিক করেছি, সেই ছবিতেই কাজ করব, যে ছবি দেখে আমি নিজে আনন্দ পাব, কাজ করেও আনন্দ পাব।’
‘বাওয়াল’ তো আপনার ষষ্ঠ ছবি?
ঋতাভরির জবাব, “বাওয়ালের আগে আমার মায়ের ছবি ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন কলকাতা’তে অভিনয় করেছি। ছবিটার ভালোই রেসপন্স ছিল। তাছাড়া পরিচালক শ্রীজিৎ মুখোপাধ্যায়ের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি ‘চতুষ্কোণ’-এ আমি ছোট একটা চরিত্রে অভিনয় করেছি। চরিত্রটি ছোট হলেও বেশ প্রশংসা পেয়েছি। এ ছাড়া বেশ কয়েকটা ছবিতে অভিনয় করেছিলাম। আর এবার পরিচালক বিশ্বরূপ বিশ্বাসের ছবি ‘বাওয়াল’। খুব মজার ছবি। যাঁরা দেখেছেন, তাদের নিশ্চয়ই খুব ভালো লেগেছে। আর যাঁরা দেখেননি তাঁদের বলব, প্লিজ দেখে ফেলুন।’
তারকা বাবা-মায়ের সন্তান আপনি। অভিনয়জগতে এসেছেন। বাড়তি চাপ কেমন অনুভব করেন?
‘হ্যাঁ, যখন আমি স্কুলে পড়ি তখন থেকেই এসব কথা শুনে আসছি। আমার মা পরিচালক শতরূপা সান্ন্যাল আর বাবা বিখ্যাত জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তী। এখানে খুব ব্যক্তিগত একটা বিষয় পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করি। আমার বাবা-মা আমার ছোটবেলা থেকেই আলাদা থাকেন। আমি মায়ের অ্যাসোসিয়েশনে বড় হয়েছি। আমার দিদিও তাই। সুতরাং সেভাবে আমি ও দিদি বাবাকে পাইনি। অবশ্য সেই নিয়ে কোনো ক্ষোভও নেই। আমার মাই আমার একাধারে বাবা ও মা। কিন্তু যখন কেউ বলে আপনার বাবা কত বড় পরিচালক আপনি তাঁর মেয়ে বা অত বড় পরিচালক...এসব কথা বলে না, বিশ্বাস করুন, আমার শুনতে ভালো লাগে না। অথচ দেখুন সবাই কিন্তু এসব কথা বলতেই ভালোবাসেন। তবে হ্যাঁ, একই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি বলে বাবার সঙ্গে দেখা হয়। উনি আমার কাজ নিয়ে আনন্দিত। ব্যাস ওইটুকুই। মা-ই আমার জীবনের সব,’ বললেন ঋতাভরি।
ভবিষ্যতে মায়ের পরিচালনায় ছবিতে অভিনয় করবেন নিশ্চয়ই?
‘অবশ্যই। তবে সব ছবির ক্ষেত্রেই আমার শর্ত একটাই। চরিত্রটার সঙ্গে নিজেকে রিলেট করতে পারছি কি না সেটা বুঝতে হবে। তবেই না দর্শকদের সামনে চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে পারব। জানেন তো, ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন কলকাতা’ ছবিটি মায়ের হলেও মা প্রথমে ওই ছবির অপলা চরিত্রে আমাকে নিতে চাননি। কিন্তু প্রযোজক আমাকে নিতে চান। যাইহোক আমার অসাধারণ লেগেছিল ওই চরিত্রে অভিনয় করে।’
গায়ক সামন্তক তো আপনার বয়ফ্রেন্ড ছিল একসময়...
বেশ বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী বললেন, ‘সেটা তো অতীত। আমি এখন কোনো রিলেশনে নেই। আমার ফেসবুক স্ট্যাটাস হলো, সিঙ্গল অ্যান্ড ইটস নো বডিস বিজনেস।’
আপনি তো পড়াশোনায় ভালো ছাত্রী ছিলেন, আবার মডেলিংটাও করতেন...
‘হ্যাঁ, আমি আইসিএসসি এগজামে টপার ছিলাম। আর মডেলিংটা শখে, পড়াশুনার মধ্যে করতাম। তখন আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস নিয়ে গ্রাজুয়েশন করি। আসলে কী হয়, তখন অতশত ভাবিনি যে, অভিনয়ে আসবো। মন দিয়েই পড়াশুনা করতাম, আর মাঝে মধ্যে মডেলিং।’
সকাল থেকে গোমড়া আকাশ জুড়ে কালো মেঘের ওড়াউড়ি চলছে তো চলছেই। সেই সঙ্গে টিপটিপ বৃষ্টিটা ক্রমশ বাড়ছে। এবার ওঠার পালা। তার আগে চটজলদি ঋতাভরিকে বললাম, এককথায় কয়েকটা প্রশ্ন করবো? হাসতে হাসতেই বললেন, বলে ফেলুন।
আপনার পছন্দ?
ঋতাভরি : মা আরা দিদির সঙ্গে শপিং করা।
আপনার অপছন্দ?
ঋতাভরি : ফালতু সমালোচনা করা।
জীবনে শখ কী?
ঋতাভরি : ভালো বই পড়া আর ভালো ভালো সিনেমা দেখা।
কী স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন?
ঋতাভরি : ভালো ছবিতে অভিনয় করা।
ভয় পান কিসে?
ঋতাভরি : অন্ধকার আর টিকটিকি।
অবসরে কী করেন?
ঋতাভরি: আড্ডা মারি আর ঘুমাই।
দুঃস্বপ্ন কী?
ঋতাভরি : ভূত। আর যদি কোনো সকালে উঠে দেখি আমি দেখতে কুৎসিত হয়ে গেছি।
আগামী জন্মে কী হতে চান?
ঋতাভরি : আমার মায়ের মেয়ে।
এবার বিদায় বেলা। বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে উঠতি এই চলচ্চিত্র অভিনেত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানালাম। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হাত জোড় করে ঋতাভরি পালটা শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা জানালেন বাংলাদেশের সবাইকে। সেই সঙ্গে বললেন, আপনারা সবাই ভালো থাকুন আর বেশি বেশি করে বাংলা ছবি দেখুন।