সাক্ষাৎকার
আমি কিন্তু অর্ধেক বাঙালি : অলকা ইয়াগনিক
দেখা হতেই মিষ্টি হাসি। কণ্ঠের মধুরতা যেন মাধুরী ছড়িয়েছে হাসিতেও। কথাও শুরু করলেন মিষ্টি করে, ‘বাংলাদেশের প্রিয় শ্রোতা-বন্ধুদের প্রতি রইল আমার অনেক অনেক ভালোবাসা। আর বড়দের জন্য রইল প্রণাম। জানেন তো, আমি কিন্তু অর্ধেক বাঙালি। পশ্চিম বাংলায় আমার জন্ম।’
এটুকু বলেই আবার মিষ্টি হাসি। হ্যাঁ, তিনি ভারতের অন্যতম সংগীতশিল্পী ‘অলকা ইয়াগনিক’। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপচারিতায় খুলে দিলেন তাঁর মনের কথার ঝাঁপি।
গানের মানুষ, তাই স্বভাবতই কথাও শুরু হলো গান নিয়েই। অলকা বললেন, ‘আমার গানের অন্যতম প্রধান অনুপ্রেরণা লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে আর রুনা লায়লা। ছোট থেকে এনাদের গান শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। অসাধারণ গায়কি রুনাজির। বিদেশে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে আমরা বহুবার একসঙ্গে গানও গেয়েছি। আজও ওনার গলার যা টোনাল (কণ্ঠস্বর) ভাবতে পারবেন না!’
‘তাঁর চেয়েও বড় কথা, অসাধারণ মানুষ তিনি। আপনারা হয়তো জানেন না, উনি অসাধারণ রাঁধেনও। আর আমি খেতে ভালোবাসি। আমি মাড়োয়ারি হলেও বাঙালি খাবার খাই। বহুবার ওনার বাড়িতে গিয়েছি। এ ছাড়া আমি ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলের খুব ভক্ত। এমনিতে আমি খুব একটা ফ্যাশনসচেতন নই, তবে ওনার হ্যান্ডলুমের কাজ অসাধারণ লাগে আমার,’ একটানা বলার পর খানিকটা সময় থামলেন অলকা ইয়াগনিক।
এই সুযোগে প্রশ্ন করলাম, আপনি বাংলাদেশ তো বহুবার স্টেজ শো করেছেন... বাকি প্রশ্নের আগেই উত্তর এলো, ‘খুব বেশি নয়, শানুজির (কুমার শানু) সঙ্গে গিয়েছিলাম কয়েকবার, আর অভিজিতের সঙ্গে। মাঝে মাঝে এমন হয় না, অনেকগুলো দেশে গানের প্রোগাম ফিক্সড করা থাকে? সেইভাবে গেছি।’
‘তবে হ্যাঁ, আমি শাড়ি পরতে ভালোবাসি খুব। আর বাংলাদেশে গেলে কাঁথা কাজের শাড়ি আমি কিনবই। হাজার অনুষ্ঠান থাকলেও তার মধ্যে সময় করে বেরিয়ে পড়ি শপিং করতে। অমন হাতের কাজ আর কোথায় পাব বলুন?’ যোগ করলেন জনপ্রিয় এই শিল্পী।
বললাম, আপনার সংগীত জীবনের ৩০ বছর তো পার করে ফেললেন। কেমন লাগছে?
মৃদু হেসে অলকার জবাব, ‘কীভাবে এতগুলো বছর কেটে গেল আমি জানি না। পুরোটাই আমার শ্রোতা এবং শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসা। ওনাদের জন্যই আমি এত বছর গান করছি। আর অবশ্যই বাবা-মায়ের আশীর্বাদ ও ঈশ্বরের অসীম কৃপা রয়েছে। একটাই ইচ্ছা, জীবনের শেষনিঃশ্বাস অবধি যেন গান গেয়ে যেতে পারি।’
পুরনো দিনের স্মৃতি কিছু মনে পড়ে?
একটু ভেবে নিয়ে অলকা বললেন, ‘আসলে আমি ছোটবেলা থেকে মায়ের কাছেই গান শিখেছি। কলকাতায় আমার জন্ম। আমি মডার্ন হাইস্কুলে পড়তাম। ক্লাস সিক্সে থাকতে আমি আকাশবাণীতে গান গাই। পরবর্তীকালে রাজ কাপুরজির প্রোডাকশন সংস্থা আমাকে বিশাল মাইলেজ দেয়।’
আপনি প্রথম জাতীয় পুরস্কার পান ‘ঘুংঘট কি আড় সে দিলবর কা...’ গানের জন্য। অসাধারণ গান, কী বলবেন?
ফের বিনম্র হাসি অলকার, ‘আসলে কোনো গান গাইবার সময় আমি একেবারে নিজের মন থেকে গাই। প্রাণ ঢেলে গাই, হৃদয় দিয়ে গাই। তাই বোধহয় আপনাদের এত ভালো লাগে।’
অস্কার পাওয়া ছবি ‘স্লাম ডগ মিলিয়নিয়ার’-এর সেই বিখ্যাত গান ‘রিং রিং রিংগা’ তো খুব জনপ্রিয় হয়েছিল আপনার?
এবার বেশ বড় বড় করে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে জবাব দিলেন, ‘আসলে ভাবিনি, অস্কার অবধি আমার গান পৌঁছে যাবে। শুনলে অবাক হবেন যে, এই গানটা রেকর্ডিং হওয়ার সময় গানের সুরকার এ আর রহমানজি (এ আর রহমান) দেশেই ছিলেন না। পুরো গানটা আমায় স্কাইপিতে পাঠিয়েছিলেন। এবং স্কাইপির মাধ্যমে উনি সুরটা তুলে দেন, গানটাও শেখান। আমি সেই মতো রেকর্ডিং করলাম। এটা আমার জীবনের এক গ্রেট স্মৃতি।’
জিজ্ঞেস করলাম, কারা আপনার প্রেরণা?
সঙ্গে সঙ্গে উত্তর, ‘প্রথমেই বলব আমার বাবা-মায়ের কথা। বাবা ধনেন্দ্র শঙ্কর এবং মা শুভা ইয়াগনিক। মায়ের কাছেই আমার প্রথম গান শেখা। আবার মা-ই আমার শ্রেষ্ঠ সমালোচক। এ ছাড়া লতা মঙ্গেশকর, কিশোর কুমারের গান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শুনেছি।’
এবার প্রশ্ন করলাম, সংগীত জীবনের পথ কেমন ছিল?
‘বলিউডে প্রচুর পলিটিক্সের শিকার হয়েছি। কারণে অকারণে বহু মানুষ আমায় ঠকিয়ে গিয়েছেন। তবে আমি পাখির চোখ করে গানটা শিখেছি। টাকা পয়সার জন্য আমাকে কোনোদিনই কষ্ট পেতে হয়নি। প্রথমে বাবা-মা পরে আমার স্বামী সবাই আমাকে খুব সাপোর্ট দিয়েছেন,’ বলেন অলকা।
এবার হেসেই প্রশ্ন করলাম, অলকা-উদিত নাকি অলকা-শানু কোন জুটিটাকে হিট বলবেন?
উত্তর দিলেন, ‘দুজন দুই রকমের। আমার সঙ্গে তাদের গানেই ইকোয়েশনও আলাদা। শানুজির (কুমার শানু) সঙ্গে রোমান্টিক গানের সংখ্যা বেশি, আর উদিতজির (উদিত নারায়ণ) সঙ্গে হালকা গানের সংখ্যা বেশি।’
সংগীতজগতে নতুন প্রজন্মের মধ্যে কোথাও জেনারেশন গ্যাপ দেখছেন?
অলকার উত্তর, ‘আমার মনে হয় আজকে যারা গান গায় তাদের মধ্যে সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং সময়ের জ্ঞান বেশ ভালো। এক কথায়, তারা খুব ডেডিকেটেড।’
সবশেষে বাংলাদেশে যাওয়ার আমন্ত্রণ। আর একগাল হেসে অলকা ইয়াগনিকের জবাব, ‘আমার তরফে বাংলাদেশের সবার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা ও ঈদের শুভেচ্ছা রইল। আগামী পুজোতে বাংলাদেশ যাওয়ার কথা আছে অনুষ্ঠান করতে। গেলে সবার সঙ্গে দেখা হবে।’
জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পীর সান্নিধ্য ছাড়ার আগে ছোট্ট কয়েকটা প্রশ্নের অনুমতি চেয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সবচেয়ে ভালোবাসেন কী?
অলকা : খেতে, তা সে যে কোনো ও রকমের খাওয়া।
জীবন মানে?
অলকা : সংগীত।
সবচেয়ে বেশি কী শপিং করেন?
অলকা : শাড়ি, সালোয়ার আর পারফিউম।
হ্যান্ডব্যাগে কী কী থাকা মাস্ট?
অলকা : পারফিউম, কাজল, লিপগ্লস, চিরুনি আর টিস্যু পেপার।
অবসরে কী করেন?
অলকা : ঘুমাই।
ভয় পান কিসে?
অলকা : ভূত, অন্ধকার, আরশোলা।
সবশেষে ওঠার আগে আরো একবার ধন্যবাদ জানাতেই মিষ্টি হেসে এবং অত্যন্ত শান্তভাবেই হাতজোড় করলেন সবার প্রিয় জনপ্রিয় গায়িকা অলকা ইয়াগনিক।