নায়কের মুখোমুখি
‘বাংলাদেশে যাওয়ার ইচ্ছা ষোলোর ওপর আঠারো আনা’
পশ্চিমবঙ্গের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আধুনিক গোয়েন্দা তিনি। কখনো ‘ফেলু মিত্তির’ আবার কখনো ‘ব্যোমকেশ বক্সি’। এরই মধ্যে দর্শকদের কাছে নিজেকে প্রখর গোয়েন্দা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছেন। হ্যা, তিনি টলিউডের উঠতি অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায়।
কী করে এমন গোয়েন্দা হয়ে উঠলেন? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাই বা কী, জানতে একদিন ফোন করলাম তাঁকে। সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো, ‘চলে আসুন।’
অতঃপর টলিউডের এই গোয়েন্দার সান্নিধ্যে কিছুক্ষণ। বাংলাদেশের দর্শকদের পক্ষ থেকে অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা জানানো হলো। জবাবে আবির বললেন, ‘আজ আমার ভীষণ ভালো লাগছে আপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পেরে। প্রথমেই বাংলাদেশের সবাইকে আমার ধন্যবাদ।’
বাংলাদেশে গেছেন কি না তা জানতে চাইলে আবির বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত নাটকের কাজে এবং একান্ত ব্যক্তিগতভাবে বেড়াতে যাওয়া ছাড়া শুটিংয়ের কোনো কাজে কিংবা প্রমোশনে বাংলাদেশে যাইনি।
আগামীতে অবশ্যই শুটিংয়ের কাজে বাংলাদেশে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। কারণ, আমি আমার কলকাতার বন্ধুদের কাছ থেকে বাংলাদেশের দর্শকদের ভালোবাসার কথা জেনেছি। সেখানকার দর্শকরা বাংলা ছবি নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন, যা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। সুতরাং একজন অভিনেতা হিসেবে বলতে পারেন, আমার বাংলাদেশে যাওয়ার ইচ্ছা ষোলো আনার ওপর আঠারো আনা আছে।’
বাংলাদেশের প্রশংসা করে এই তরুণ অভিনেতা বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশে একটা বিশাল অডিয়েন্স রয়েছে। আমার ফেলুদা এবং ব্যোমকেশের মতো ছবি নিয়ে বাংলাদেশের বহু মানুষের শুভেচ্ছাবার্তাও পেয়েছি। আমি আপ্লুত তাঁদের ভালোবাসা পেয়ে। একজন অভিনেতা হিসেবে আমি মনে করি, দর্শকদের এই ভালোবাসা আমার অভিনয়ের দায়িত্ব অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে।’
গোয়েন্দা চরিত্রে নিজের আত্মপ্রকাশের স্মৃতি বলতে গিয়ে আবির বললেন, ‘পরিচালক সন্দীপ রায়ের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আমার বহু দিন থেকেই ছিল। এর পরই বাদশাহি আংটি ছবিতে সাইন করলাম।
আর ফেলুদা করতে করতেই ব্যোমকেশের অফার এলো।’
সত্যজিৎ রায়ের ‘ফেলুদা’ আর শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ব্যোমকেশ’। বাংলা সাহিত্যে দুটোই ভীষণ জনপ্রিয় আর পরিচিত চরিত্র। আবিরের কাছে জানতে চাই, কীভাবে সামলালেন?
একদম দুঁদে গোয়েন্দাদের মতো আড়চোখে শূন্যে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললেন, ‘দুটি চরিত্র নিয়েই দর্শকদের প্রবল প্রত্যাশা থাকবে সেটা বুঝেছিলাম। তাই ভালো কাজ করার তাগিদ নিয়েই কাজ করেছি।
ভালো কাজের চাপটা নিজেই নিজের ওপর নিয়েছি।’
বাংলা ছবিতে দর্শকদের কাছে ফেলুদা মানেই অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কিংবা সব্যসাচী চক্রবর্তী। একই চরিত্রে দিকপাল এই সব অভিনেতার টক্কর নিতে সমস্যা হয়নি?
‘ঠিকই বলেছেন। সব বয়েসের বাঙালির কাছে ফেলুদার একটা হিরোয়িক ইমেজ আছে। সাধারণ মানুষ ফেলুদাকে নিয়ে নস্ট্যালজিক। আর বাঙালি দর্শকদের কাছে ফেলুদা বললেই অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কিংবা সব্যসাচী চক্রবর্তীর চেহারা ভেসে ওঠে। যেটা আমার কাছেও। আমি সত্যিই এই চরিত্রে কোনো দিন সুযোগ পাবো ভাবিনি। তাই এই চরিত্রে অভিনয়টা আমার কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিলই।’ জবাব আবিরের।
‘বাদশাহি আংটি’ ছবির শুটিং শুরুর আগে ৩০ থেকে ৪০ বার জয়বাবা ফেলুনাথ এবং সোনার কেল্লা ছবি দুটো দেখেছেন বলে জানালেন আবির। বললেন, ‘ফেলুদা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগটা যেদিন থেকে পেয়েছি, সেদিন থেকেই নিজেকে ফেলুদা ভাবতে শুরু করেছি। আর শুটিং চলাকালে সবাই আমাকে ফেলুদা ডাকত, ফলে আমি পুরোপুরি চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলাম।’
‘পুরনো ফেলুদাদের কারো সঙ্গে কথা হয়েছে?’
নতুন ফেলুদা হেসে উঠে বললেন, ‘হ্যাঁ, বেনুদার (অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী) সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি আমার পরিবারেরই একজন। আমায় ভীষণ ভালোবাসেন। জানেন তো, বহু বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে বেনুদা একবার বলেছিলেন, ভবিষ্যতে ফেলুদা চরিত্রে আমাকে মানাবে। তখন অবশ্য কেউ বিষয়টা নিয়ে মাথা না ঘামালেও বেনুদা কিন্তু ওই সময় ভাবতে পেরেছিলেন।’
‘গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করছেন, রহস্য গল্প পড়েন?’
আবির উত্তর, ‘অবশ্যই, বরাবরই গোয়েন্দা গল্প পড়তে আমি ভালোবাসি।’
এতক্ষণ তো গেল চলচ্চিত্র জীবনের কথা। এবার একটু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা যাবে কি না তা জানতে চাই। সহাস্যে আবির বলেন, ‘করতে পারেন, তবে পছন্দ না হলে উত্তর দিতে বাধ্য নই।’
‘শুনেছি, গোয়েন্দা হিরোরা বিয়ে করলে বা বাবা হয়ে গেলে নাকি গোয়েন্দাগিরির ইমেজে ধাক্কা খায়? আপনি কী বলেন?’
প্রশ্ন শুনেই একগাল হেসে ফেললেন আবির। বললেন, ‘স্বাভাবিক। গোয়েন্দা হিরোর নারী ভক্ত তো থাকবেই। তার ওপর প্রদোষ মিত্র মানে ফেলুদা অবিবাহিত। আমার তো মনে হয় সৌমিত্র কাকুর (অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) ফেলুদা ইমেজটা নারীরা বেশি পছন্দ করেন, তাঁর অন্য চরিত্রের চেয়ে। মানে ধরুন, সাত পাকে বাঁধা বা ঝিন্দের বন্দি এসব ছবির তুলনায় বলছি।’
বর্তমানে অনেক নায়ক-নায়িকাই রাজনীতিতে ঢুকে পড়ছেন। আপনার মতাদর্শ বা রাজনীতিতে আসার বিষয়ে... বাকিটা বলার আগেই আমাকে থামিয়ে দিয়ে আবির বললেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে সব মানুষেরই একটা পলিটিক্যাল ভিউ থাকে। আমারও আছে। তবে আপাতত অভিনেতা হিসেবেই কাজ করে যেতে চাই। আমার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মনোভাবকে বাইরে আনতে চাই না। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ফোনও আমি পেয়েছি একটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে। সেখানে আমার বহু বন্ধু যুক্ত। কিন্তু আমি সেগুলোতে অ্যাটেন্ড করিনি।’
ভবিষ্যতে গোয়েন্দা ছাড়া অন্য চরিত্রে অভিনয় নিয়ে কি চিন্তাভাবনা রয়েছে জানতে চাইলে আবির বলেন, ‘দেখুন, আমি আমার ক্যারিয়ারে বহু রকমের চরিত্রে অভিনয় করেছি। হিরোও যেমন হয়েছি, তেমনি নেগেটিভ চরিত্রেও অভিনয়ও করেছি। ফেলুদা এবং ব্যোমকেশ চরিত্র আমায় আলাদা একটা পরিচিতি দেবে। এর থেকে বেশি কিছু নয়। এই বছরেই দেখবেন আমার দুটো ছবি মুক্তি পাচ্ছে ‘অ্যাবি সেন’ ও ‘কাঠমান্ডু’। এই দুটো ছবিতেই আমার খুব সিগনিফিকেন্ট রোল রয়েছে। আশা করছি সেখানে আমার অভিনয় দর্শকদের ভীষণ ভালো লাগবে।’
কথায় কথায় সময় পার হয়ে গেল। এবার সময় বিদায় নেওয়ার। বিদায়ের আগে আরো একবার ধন্যবাদ জানালাম। আবির বললেন, ‘আমার তরফ থেকে আবারও ধন্যবাদ। আপনার পাশাপাশি বাংলাদেশের অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষীর জন্য।’