ফাইটার থেকে ফাইট ডিরেক্টর যুগান্তর চাকমা
“ছোটবেলায় ভিউকার্ডে নায়ক-নায়িকাদের ছবি দেখতাম। আয়নার পেছনের ছবি দেখে মনে হতো, আমিও যদি ওদের মতো ছবিতে কাজ করতে পারতাম। বান্দরবানে পাহাড়ঘেরা এলাকায় আমার জন্ম, সেখানেই ছেলেবেলাটা কেটেছে। ১৯৮৩ সালে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হই। নাটকের একটা নেশা আমার ছোটবেলা থেকেই ছিল। কলেজে ২৬ মার্চ উপলক্ষে একটি নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। সেখানে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম আমি। ওই নাটক করতে গিয়ে বাচ্চু আহম্মেদের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি তখন চিত্রপরিচালক নূর হোসেন বলাইয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলেন। ১৯৮৪ সালে প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করি ‘ইন্সপেক্টর’ ছবিতে।” এভাবেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আসার ইতিহাস বলছিলেন ফাইট ডিরেক্টর যুগান্তর চাকমা ওরফে ‘চায়নিজ’।
ছবির অন্যতম একটি বিষয় ফাইট। এই ফাইটিং দৃশ্যে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অনেকেই জনপ্রিয় এবং পরিচিত মুখ। বাংলাদেশে যে কয়েকজন ফাইটারকে আমরা চিনি, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ‘চায়নিজ’। ফিরোজ খান প্রিন্স পরিচালিত ‘শোধ প্রতিশোধ’ ছবির অ্যাকশন দৃশ্যে অংশ নেন নায়িকা মৌসুমি হামিদ। এই ছবির ফাইট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন চায়নিজ। ছবির শুটিংয়ে এনটিভি অনলাইনে সঙ্গে কথা হয় চায়নিজের ।
প্রশ্ন : আপনার ‘চায়নিজ’ নামটি এলো কীভাবে?
উত্তর : প্রথম ছবির শুটিং করার পর এফডিসিতে প্রতিদিনই যাওয়া-আসা করতাম। একদিন ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি আমাকে তাঁর দলে নিয়ে নেন। আশীর্বাদ হিসেবে তিনি আমার নাম দেন ‘চায়নিজ’। এই নাম নিয়ে আমি খুব খুশি, কারণ এখন আমাকে এই নামে বাংলাদেশের মানুষই চেনে। যুগান্তর চাকমা থেকে হয়ে গেলাম ‘চায়নিজ’। প্রথমে ফাইটার, তার পর অ্যাসিস্ট্যান্ট ফাইট ডিরেক্টর থেকে এখন ফাইট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছি।
প্রশ্ন : এখন আর আগের ফাইটের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর : আগে আমাদের দেশের গল্প নিয়ে ছবি হতো। নায়করাজ রাজ্জাক, নায়ক ফারুক যখন ফাইট করতেন, তখন দেখা যেত নদীর পাড়ে কুস্তি করছেন। লাঠি দিয়ে মারামারি করছেন। তার পর নায়ক রুবেল, ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলমরা যখন এলেন, তখন শুরু হলো মার্শাল আর্ট। সব ছবিতে একই ফাইট চলতে লাগল। আর এখন কয়েকটা তামিল ছবি দেখিয়ে বলে, এই ফাইট করতে কত লাগবে? ওই ফাইট করতে কত লাগবে? আমাদের চিন্তা করার সুযোগ দিচ্ছে না।
প্রশ্ন : এতে কি ছবির মান কমছে?
উত্তর : তামিল একটা ফাইট করতে যে ধরনের যন্ত্র লাগে, আমাদের দেশে তো সেই যন্ত্র নেই। আমরা ক্রেনের সঙ্গে নায়ক-নায়িকাকে যখন ঝুলাই, তার পর আবার এডিটিংয়ের সময় কাটা হয় দৃশ্যগুলো। হলে দর্শক এসব দৃশ্য দেখে হাসাহাসি করে। আমাদের মতো দেশের জন্য যেমন গল্প লাগবে, তেমনি আমাদের দেশের ফাইটও হবে আমাদের মতো। চায়নায় যেমন ফাইটের একটা ধরন আছে, তেমনি আমাদেরও একটা ধরন আছে।
প্রশ্ন : ছবি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
উত্তর : ‘চায়না মামা’ নামে আমি একটি ছবি বানিয়েছি । ছবিটি ২০১২ সালে যখন শেষ করি, তখন ডিজিটাল যুগ চলে আসে। আর আমি ছবি বানিয়েছি ৩৫ মিলিমিটারে। আমার কাছে যত টাকা ছিল, সব ওখানে খরচ করে ফেলি। এখন আরো ১৫ লাখ টাকা লাগবে এটিকে ট্রান্সফার করতে, তাহলেই ছবিটি হলে মুক্তি দিতে পারি। কয়েকজনের সঙ্গে কথা হচ্ছে, কোনো প্রযোজক ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে রাজি হলেই আমি ছবিটি মুক্তি দিতে পারব। সবাই দোয়া করবেন, আমি যেন কাজটি দ্রুত শেষ করতে পারি।