শুভ জন্মদিন সুরস্রষ্টা এ আর রহমান
সংগীত পরিচালক বা সুরকারদের বলা হয়ে থাকে পর্দার পেছনের মানুষ। আর নেপথ্যের এই মানুষদের খ্যাতির শীর্ষে আসার গল্প খুবই কম। তবে এ ক্ষেত্রেও স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছেন সুরের জাদুকর এ আর রহমান। গানের নেপথ্যের মানুষ হয়েও কীভাবে নিজেকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করা যায়, হয়ে ওঠা যায় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড, তার বড় উদাহরণ এ আর রহমান। উপমহাদেশের সংগীত অঙ্গনের অন্যতম এই দিকপালের ৫৪তম জন্মদিন আজ।
১৯৬৬ সালের ৬ জানুয়ারি তৎকালীন মাদ্রাজের (বর্তমানে চেন্নাই) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পারিবারিক নাম ছিল এ এস দিলীপ কুমার, ধর্মান্তরের পর নাম রাখা হয় আল্লাহ রাখা রহমান, সংক্ষেপে এ আর রহমান। তাঁর সহধর্মিণীর নাম সায়রা বানু। রহমান-বানু দম্পতির ঘরে রয়েছে তিন সন্তান—খাদিজা, রহিমা ও আমান। এ আর রহমানের বাবা আর কে শেখর মুধালিয়ার ছিলেন চলচ্চিত্রের মিউজিক কম্পোজার। তাঁর মায়ের নাম ছিল কস্তুরি। অবশ্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তাঁর নাম হয় করিমা বেগম।
গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক এ আর রহমানকে অনেকেই ভালোবেসে ‘মোজার্ট অব মাদ্রাজ’ নামে ডাকেন। তাঁর জীবনের অন্যতম অর্জন আসে ২০০৯ সালে। ওই বছর ৮১তম অস্কার আসরে ড্যানি বয়েলের আলোচিত সিনেমা ‘স্লামডগ মিলিয়নার’ মিউজিক কম্পোজার হিসেবে সেরা অরিজিনাল মিউজিক স্কোর ও সেরা অরিজিনাল সং ‘জয় হো’র জন্য ডাবল অস্কার জেতেন।
এ আর রহমানের সংগীত বলিউডকে দিয়েছে নতুন ধরনের সাংগীতিক অভিজ্ঞতা। তাঁরই স্বীকৃতিতে মণি রত্নমের ‘রোজা’ সিনেমার দুটি গান জিতেছিল দুটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড। জিতেছেন বাফটা, গোল্ডেন গ্লোব, চারটি জাতীয় পুরস্কার ও ফিল্মফেয়ারসহ অসংখ্য পুরস্কার। এ ছাড়া ২০০৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনের জরিপে বিশ্বের সেরা ১০ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকায় তাঁর নাম স্থান পায়। ২০১০ সালে রাষ্ট্রীয় উপাধি ‘পদ্মভূষণ’ অর্জন করেন।
বিস্ময়কর প্রতিভা এ আর রহমানের যেকোনো কম্পোজিশন বের হওয়া মানেই সুপারহিট। তাঁর প্রতিটি গানই আলাদা ধাঁচের। সাধারণ শ্রোতারা তাঁর সুরে যেমন মুগ্ধ, তেমনি মুগ্ধ যাঁরা গানের ব্যাকরণ জানেন, তাঁরাও। গানের ব্যাকরণ জানা সুধীজনের কাছে এ আর রহমান আজও এক ধাঁধা।
প্লেব্যাক বা চলচ্চিত্রের গান গেয়ে এ আর রহমানের আত্মপ্রকাশ ‘বম্বে’ ছবিতে। এর আগে তিনি অনেক গানের কোরাসে কণ্ঠ দিয়েছেন। কিন্তু প্রথম কোনো গানে পূর্ণাঙ্গ ভূমিকা পালন করেন ‘বম্বে’ সিনেমার ‘হাম্মা হাম্মা’ গানটিতে।
সেই ১৯৯২ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত এ আর রহমান তামিল, তেলেগু, হিন্দি, মালয়ালাম, মারাঠি ও ইংরেজি ভাষায় উপহার দিয়েছেন দুই শতাধিকেরও (ডাবিং ও সিঙ্গেলসহ) বেশি অ্যালবাম। ১৯৯৭ সালের ১৫ আগস্ট তাঁর কণ্ঠে প্রথম অ্যালবাম বের হয় ‘বন্দে মাতরম’ শিরোনামে সনি মিউজিক কোম্পানির পক্ষ থেকে। ‘বন্দে মাতরম’ মাইলস্টোন অ্যালবামটি শুধু ইন্ডিয়াতে তখন বিক্রি হয়েছিল ১.২ কোটি পিস। ১৯৯৯ সালে জার্মানির মিউনিখে কনসার্টে মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে পারফর্ম করেছেন তিনি।
২০০২-এ বিশ্ববিখ্যাত কম্পোজার অ্যান্ড্রু লয়েড ওয়েবারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রিলিজ দেন তাঁর প্রথম স্টেজ প্রডাকশন ‘বোম্বে ড্রিমস’। ২০০৭ সালে তাজমহলকে ‘দ্য নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স’-এ স্থান পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রমোশন হিসেবে ‘ওয়ান লাভ’ গানটি ছয়টি ভাষায় মুক্তি দেন। তাঁর সংগীত আয়োজনে করা উল্লেখযোগ্য হিন্দি ছবিগুলো হলো—‘বোম্বে’, ‘রঙ্গিলা’, ‘দিল সে’, ‘তাল’, ‘লগন’, ‘সাথিয়া’, ‘রং দে বাসন্তী’, ‘গুরু’, ‘যোধা আকবর’, ‘জানে তু... ইয়া জানে না’,, ‘স্লামডগ মিলিয়নার’, ‘গজনি’ ইত্যাদি।