শুভ জন্মদিন চিত্রনায়ক আলমগীর
চিত্রনায়ক, প্রযোজক ও পরিচালক আলমগীর। ১৯৫০ সালের আজকের এই দিনে (৩ এপ্রিল) জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এ পর্যন্ত তিনি নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। আজ এ বর্ষীয়ান অভিনেতার ৭০তম জন্মদিন। তাঁর পিতা কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়া দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর অন্যতম প্রযোজক।
আলমগীর কুমকুম পরিচালিত যুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘আমার জন্মভূমি’র মধ্য দিয়ে ১৯৭৩ সালে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন তিনি। পরে শাবানার বিপরীতে ‘চাষীর মেয়ে’ ও কবরীর বিপরীতে ‘লাভ ইন শিমলা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পান।
পরের বছর তিনি আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘গুন্ডা’ চলচ্চিত্রে রাজ্জাক ও কবরীর সঙ্গে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। তাহের চৌধুরী পরিচালিত ‘মাটির মায়া’ চলচ্চিত্রে ফারুক ও রোজিনার সঙ্গে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন।
১৯৭৮ সালে দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত ‘জিঞ্জীর’ চলচ্চিত্রে রাজ্জাক ও সোহেল রানার সঙ্গে অভিনয় করেন। তিনি ‘আসাদ’ চরিত্রে কামাল আহমেদ পরিচালিত ‘রজনীগন্ধা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এতে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন রাজ্জাক, শাবানা ও অঞ্জনা।
১৯৮৪ সালে তিনি আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘ভাত দে’ ও ‘সখিনার যুদ্ধ’ চলচ্চিত্রে কাজ করেন। দুটি ছবিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন শাবানা। এর মধ্য দিয়ে শাবানার সঙ্গে তাঁর জুটি গড়ে ওঠে, যা পরের এক দশক বাংলা চলচ্চিত্রে রাজত্ব করে। ‘ভাত দে’ ছবিতে তিনি দরিদ্র বাউলের শিষ্য ‘গহর’ চরিত্রে অভিনয় করেন।
আলমগীর কামাল আহমেদ পরিচালিত ‘মা ও ছেলে’ চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতে ‘দীপক চৌধুরী’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
১৯৮৫ সালে আলমগীর পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নিষ্পাপ’। ১৯৮৭ সালে তিনি শাবানার বিপরীতে অভিনয় করেন ‘মায়ের দোয়া’, দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত ‘অপেক্ষা’ ও সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘স্বামী-স্ত্রী’ চলচ্চিত্রে। ‘অপেক্ষা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি দ্বিতীয়বার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
পরের বছর অভিনয় করেন হাফিজ উদ্দীন পরিচালিত ‘পথে হল দেখা’ চলচ্চিত্রে। এতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন নায়িকা অঞ্জনা। পরবর্তী সময়ে ‘ক্ষতিপূরণ’, ‘মরণের পরে’, ‘পিতা মাতা সন্তান’ ও ‘অন্ধ বিশ্বাস’ চলচ্চিত্রের জন্য টানা চারবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এ সময় তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো—‘সত্য মিথ্যা’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘দোলনা’, ‘অচেনা’, ‘সান্ত্বনা’ ও ‘ক্ষমা’।
১৯৯৪ সালে আলমগীর অভিনয় করেন কাজী হায়াৎ পরিচালিত নাট্যধর্মী ‘দেশপ্রেমিক’, শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘যুদ্ধ’, ‘ঘাতক’ ও গাজী মাজহারুল আনোয়ার পরিচালিত ‘স্নেহ’ চলচ্চিত্রে। ‘দেশপ্রেমিক’ চলচ্চিত্রে তিনি একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের ভূমিকায় অভিনয় করে সপ্তমবারের মতো শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
একই বছর তিনি ‘নির্মম’ শিরোনামের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ছবিতে তিনি অভিনয় করেন শাবানার সঙ্গে জুটি হয়ে। এ ছাড়া ছবিতে অভিনয় করেন শাবনাজ ও বাপ্পারাজ। ছবিটি সমাদৃত হয় এবং শাবনাজ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৫ সালে তিনি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘কন্যাদান’ চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন সালমান শাহ ও লিমা। পরের বছর তিনি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন রচিত ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ উপন্যাস অবলম্বনে আখতারুজ্জামান পরিচালিত ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করেন।
এ ছাড়া পার্শ্ব চরিত্রে সোহেল রানা অভিনীত ‘অজান্তে’, সালমান শাহ অভিনীত ‘মায়ের অধিকার’ ও ‘সত্যের মৃত্যু নাই’, ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনীত ‘দুর্জয়’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
২০১০ সালে শাহাদাত হোসেন লিটন পরিচালতি ‘জীবন মরণের সাথী’ চলচ্চিত্রে আশরাফ চৌধুরী চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
পরের বছর অভিনয় করেন ‘কে আপন কে পর’, ‘হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ’ ও তাঁর নিজের প্রযোজিত ‘মাটির ঠিকানা’ চলচ্চিত্রে। ‘কে আপন কে পর’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি দ্বিতীয়বারের মতো শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৩ সালে এফ আই মানিক পরিচালিত ‘জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার’ চলচ্চিত্রে রাজ্জাক ও সোহেল রানার একসঙ্গে কাজ করেন। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন শাকিব খান ও পূর্ণিমা। ছবিতে আলমগীরকে একজন পুলিশ কমিশনার চরিত্রে দেখা যায়। সর্বশেষ অভিনয় করেন নিজের পরিচালিত ‘একটি সিনেমার গল্প’ চলচ্চিত্রে। এ ছবিতে তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক চরিত্রে অভিনয় করেন। এ পর্যন্ত তিনি তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। জন্মদিনে অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীর শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন এ তারকা।